ব্যবসা-বাণিজ্যের কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়

ইব্রাহীম হুসাইন অভি
ইব্রাহীম হুসাইন অভি ইব্রাহীম হুসাইন অভি
প্রকাশিত: ১০:২৩ এএম, ০৮ আগস্ট ২০২৫

গত এক বছরে আর্থিক খাত ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কিছু ক্ষেত্রে উন্নতির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তবে পুরোপুরি সন্তোষজনক বলা যায় না। এখন প্রত্যাশা একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, কার্যকর অবকাঠামো উন্নয়ন, সাশ্রয়ী সুদের হার এবং বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক বছরের কর্মকাণ্ডের ওপর জাগো নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের বিশেষ সংবাদদাতা ইব্রাহীম হুসাইন অভি।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেছেন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, নীতিগত অস্থিরতা এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে যে জটিলতা সৃষ্টি হয় তার দ্রুত উত্তরণ ঘটুক। বিশেষ করে বিনিয়োগবান্ধব নীতি প্রণয়ন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানোর চেষ্টা এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের টেকসই উপায় বের করা হোক।

জাগো নিউজ: আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক বছর হলো। পতনের পর এক বছরে ব্যবসায়িক পরিবেশে কী ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন?

মাহমুদ হাসান খান: গত এক বছরে কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। প্রথমত, ব্যাংকিং খাতে ধীরে ধীরে শৃঙ্খলা ফিরছে। দ্বিতীয়ত, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তৃতীয়ত, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বা এক্সচেঞ্জ রেটে একটি স্থিতিশীলতা এসেছে, যা ব্যবসায়ীদের পরিকল্পনা করতে সুবিধা দিচ্ছে।

তবে এখনও কিছু বড় সমস্যা রয়ে গেছে, যা আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ভালো না। উদাহরণস্বরূপ, জ্বালানি সংকটের সমাধান হয়নি, ফলে শিল্প ও উৎপাদন খাতে ব্যাঘাত ঘটছে। বন্দর ব্যবস্থার দক্ষতা বাড়েনি, বরং চার্জ বাড়ানো হয়েছে, যা আমদানি-রপ্তানির খরচ বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে আমাদের লিড টাইম অর্থাৎ পণ্য পাঠানোর সময়কে বাড়িয়ে দেয়।

এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সেবা পেতে যে হয়রানি ছিল, তা এখনও কমেনি বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেড়েছে। এই সমস্যাগুলো সমাধান না হলে ব্যবসায়িক পরিবেশ পুরোপুরি স্বস্তিদায়ক হবে না।

জাগো নিউজ: বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এখন কী অবস্থা?

মাহমুদ হাসান খান: বর্তমানে বিনিয়োগের প্রবাহ থমকে আছে এবং এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানের ওপর। বিনিয়োগ না বাড়লে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হয় না। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও সুদের হার এই বিনিয়োগ-প্রবাহের অন্যতম বড় বাধা। যদি বিনিয়োগ বাড়াতে হয়, তবে প্রথমেই সুদের হার কমাতে হবে। একইসঙ্গে অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে, যাতে উৎপাদন ও ব্যবসার খরচ কমে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় পরিবেশ তৈরি হয়।

বিনিয়োগ অনেকটাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং একটি নির্বাচিত সরকারের ওপর নির্ভর করে। যখন একটি নির্বাচিত ও জবাবদিহিমূলক সরকার দায়িত্বে থাকে, তখন বিনিয়োগকারীরা বেশি আত্মবিশ্বাসী হন এবং তার ফলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।

বিনিয়োগকারীরা একটি নির্বাচিত ও স্থিতিশীল সরকারের জন্য অপেক্ষা করে, কারণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।

জাগো নিউজ: আপনি কি মনে করেন গত এক বছরে নেওয়া সংস্কারগুলো ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে সহায়ক হয়েছে? এবং ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে এই সংস্কারগুলো কি অব্যাহত রাখা উচিত?

মাহমুদ হাসান খান: সংস্কার নিয়ে ব্যবসায়ী হিসেবে আমি মিশ্র প্রতিক্রিয়া পোষণ করি। কিছু সংস্কার ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবায়ন দুর্বল ছিল বা কাঙ্ক্ষিত ফল আসেনি। আমরা চাই ব্যবসা সংক্রান্ত যে কোনো সংস্কার বাস্তবসম্মত হোক এবং দীর্ঘমেয়াদে তা টেকসইভাবে কার্যকর থাকুক।

আগামীতে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে যেসব সংস্কার ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করেছে, সেগুলো অবশ্যই অব্যাহত রাখা উচিত। একইসঙ্গে যেসব সংস্কার কাঙ্ক্ষিত ফল দিচ্ছে না, সেগুলো পুনর্মূল্যায়ন করে কার্যকর করার উদ্যোগ নিতে হবে।

জাগো নিউজ: আগামী দিনের জন্য ব্যবসায়ীদের প্রধান প্রত্যাশা কী?

মাহমুদ হাসান খান: আমাদের প্রধান প্রত্যাশা হলো একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, কার্যকর অবকাঠামো উন্নয়ন, সাশ্রয়ী সুদের হার এবং বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা। আমরা চাই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও অপ্রয়োজনীয় হয়রানি বন্ধ হোক, বন্দর ব্যবস্থার দক্ষতা বাড়ুক, জ্বালানি সংকটের স্থায়ী সমাধান হোক এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার মতো সক্ষমতা গড়ে উঠুক। এসব বাস্তবায়িত হলে ব্যবসা ও বিনিয়োগের পরিবেশ উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হবে এবং অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি আসবে।

আইএইচও/এমএমএআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।