৪৭তম বিসিএসের প্রশ্নে ‘অসংগতি’, উত্তর না থাকার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:০৫ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর)। এতে অংশ নেন প্রায় পৌনে ৪ লাখ চাকরিপ্রার্থী। গুরুত্বপূর্ণ এ পরীক্ষার প্রশ্নে কিছু অসংগতির অভিযোগ করেছেন পরীক্ষার্থীরা। কয়েকটি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নে দেওয়া অপশনের মধ্যে সঠিক উত্তর নেই। এতে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে সময় নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ পরীক্ষার্থীদের।

চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, প্রশ্নে সঠিক উত্তর না থাকলে কিংবা একাধিক উত্তর থাকলে তা নিয়ে বেশি সময় নষ্ট হয়ে যায়। এ ধরনের প্রশ্নের কারণে প্রার্থীরা পরীক্ষার হলে বসে মানসিক চাপে পড়েন।

বিসিএসের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার প্রশ্নে এমন অসঙ্গতি গ্রহণযোগ্য নয়। ভুল প্রশ্নগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর নম্বর সবাইকে দিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন তারা।

তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ের একটি প্রশ্নে সঠিক উত্তর নেই বলে অভিযোগ পরীক্ষার্থীদের। সেট-১-এ ১৪৬ নম্বরে প্রশ্নটি রয়েছে। প্রশ্নে বলা হয়েছে, একটি কম্পিউটারের প্রোসেসর ক্লক স্পিড ৪.০০ গিগা হর্জ হলে এর ক্লক মাইকেল টাইম কত?’নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নটিতে ৪টি অপশন দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, (ক) ২.৫ ন্যানো সেকেন্ড (ns); (খ) ২.৫ মাইক্রো সেকেন্ড (ms); (গ) ৪ (ms); (ঘ) ৪ (ns)।

পরীক্ষায় অংশ নেওয়া একাধিক চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এ প্রশ্নটির সঠিক উত্তর পাননি। অনেকে আবার চারটির মধ্যে কোনো একটি দিয়ে এসেছেন। এতে ভুল উত্তর দেওয়ার জন্য তাদের নম্বর কাটা যাবে।

আরও পড়ুন

কেমন হলো ৪৭তম বিসিএস প্রিলির প্রশ্ন, যা বলছেন পরীক্ষার্থীরা
৪৭তম বিসিএসের প্রিলিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান-বাকশাল নিয়ে প্রশ্ন

বিসিএসের প্রস্তুতিতে জোর দেওয়া হয় এমন একটি কোচিংয়ে দীর্ঘদিন তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পড়ান রেদোয়ান রাকিব। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমি প্রশ্নটি দেখেছি। সেখানে আসলে সঠিক উত্তরটি নেই। প্রশ্নটির সঠিক উত্তর হবে- ০.২৫ ন্যানো সেকেন্ড (ns)।

রেদোয়ান বলেন, যারা এটা সম্পর্কে জানেন, তাদের অনেকে হয়তো উত্তর করেননি। তবে এমন অনেকে আছেন, যারা কি না অপশনগুলোর মধ্য থেকে উত্তর করে এসেছেন। এখন পিএসসি উত্তরপত্র মূল্যায়নের সময় কোনটিকে সঠিক উত্তর ধরবে, তা বোঝা মুশকিল। তবে এ ধরনের ভুল কাম্য নয়। আর ভুল হলে সবাইকে এমন প্রশ্নে নম্বর দিয়ে দেওয়া উচিত।

সেট-১ এর ১১০ নম্বর প্রশ্নটিও ত্রুটিপূর্ণ। প্রশ্নে বলা হয়েছে, ইরানের ফর্দো পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রটি কোন প্রদেশে অবস্থিত?। নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নটিতে যে চারটি অপশন দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে সঠিক উত্তর নেই। অপশনগুলোতে রয়েছে- (ক) ইসফাহান; (খ) ইলাম; (গ) বুমেহর; (ঘ) আলবোজ।

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি নিয়ে বিসিএসের প্রস্তুতি সহায়ক বই লিখেছেন এবং অনলাইনে ক্লাস নেন আব্দুর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, প্রশ্নটির অপশনে সঠিক উত্তরটি রাখা হয়নি। ইরানের কোম প্রদেশে ফর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রটি অবস্থিত।

আব্দুর রহমান বলেন, সম্প্রতি ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে এ পারমাণিক কেন্দ্রটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। পরে এ কেন্দ্রে শক্তিশালী বোমা ফেলে ধ্বংস করার দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে এমন আলোচিত একটি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু ভুল করাটা গ্রহণযোগ্য নয়।

বরিশাল বিভাগীয় শহরের একটি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। ত্রুটিপূর্ণ প্রশ্ন রাখায় ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, পিএসসি নাকি প্রশ্নপত্র তৈরিতে অনেকবার মডারেট করিয়ে থাকে। তারপরও ভুল ও ত্রুটিপূর্ণ প্রশ্ন থেকে যায়। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা চাকরিপ্রার্থীরা এ ধরনের ত্রুটিপূর্ণ প্রশ্নে সবাইকে নম্বর দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

ঢাকার খিলগাঁও গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দেওয়া প্রার্থী নাছরিন আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, প্রশ্ন অসংগতিপূর্ণ করা হয়েছে। এখন এ প্রশ্নে সবাইকে নম্বর দিলেও ইনজাস্টিস (অবিচার) করা হবে। হয়তো অনেকে এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর করতে পারতেন না। তারাও নম্বর পেয়ে যাবে। এতে কেউ এগিয়ে যেতে পারে। বিসিএসের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নে ভবিষ্যতে যাতে একেবারেই ত্রুটি না থাকে, সেদিকে পিএসসিকে নজর দিতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে পিএসসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে পিএসসির একজন নারী সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, বিশেষজ্ঞদের দিয়ে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করিয়ে থাকি আমরা। এরপর তাদের প্রশ্নপত্র নিয়ে তা মডারেট করা হয়। কয়েক স্তরে প্রশ্নপত্র যাচাই করা হয়। তারপরও এমন ভুল কীভাবে হলো, তা খতিয়ে দেখা উচিত। এটি চেয়ারম্যান স্যারের নজরে এলে নিশ্চয়ই তিনি ব্যবস্থা নেবেন।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকাসহ দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরের ২৫৬টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষায় প্রক্সি, জালিয়াতি, অনিয়ম ঠেকাতে প্রত্যেকটি কেন্দ্রে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ পরীক্ষায় অংশ নিতে এবার আবেদন করেন ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪৭ জন চাকরিপ্রার্থী।

২০২৪ সালের ২৮ নভেম্বর ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। ৪৭তম বিসিএসে মোট শূন্য ক্যাডার পদের সংখ্যা ৩ হাজার ৪৮৭। আর নন-ক্যাডার পদের সংখ্যা ২০১। এই বিসিএস থেকে মোট ৩ হাজার ৬৮৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।

এএএইচ/এএমএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।