যার জন্য বলিউডে সফল তাকেই ভুলে গেলেন অমিতাভ বচ্চন?

তাকে বলা হয় বলিউডের ‘শাহেনশাহ’। সাধারণ ভক্ত থেকে শুরু করে ভারতের যে কোনো ব্যক্তি তার নাম শুনলে শ্রদ্ধায় নত হন। তাকে ভালোবাসেন। বলছি অমিতাভ বচ্চনের কথা। তার জনপ্রিয়তা দেশটিতে আকাশ ছোঁয়া। কোটি মানুষের কাছে তিনি আইডল।
বয়সকে হার মানিয়ে এখনও বি-টাউন কাঁপিয়ে চলেছেন তিনি। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে ২০০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন অমিতাভ। তবে আজ তার যে অবস্থান তার জন্য অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়েছে অভিনেতাকে যেখানে আছে অনেক ব্যর্থতা আর সংগ্রামের গল্প। ক্যারিয়ারের প্রথম ধাপে কিন্তু তিনি সফলতা পাননি।
পর পর ১২টি ছবি ফ্লপ হয়েছিল অমিতাভের। ঠিক সেই সময় তার হাত ধরেছিলেন বলিউডের আর এক অভিনেতা মেহমুদ আলি। ১৯৪০ থেকে ১৯৫০-এর মধ্যে কোনো হিন্দি ছবিতে হাস্যরসে পরিপূর্ণ চরিত্রের জন্য মেহমুদই ছিলেন আদর্শ। চার দশক ধরে টানা ৩০০টি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করে গিয়েছিলেন তিনি।
কৌতুকাভিনেতা হিসাবে অভিনয় করে প্রচুর পুরস্কারও পেয়েছিলেন মেহমুদ। তবে তার কারণে বলিজগতে এমন এক তারকা পদার্পণ করেছিলেন, যাঁর জন্য বি-টাউন তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। তিনি আর কেউ নন, অমিতাভ বচ্চন।
অমিতাভের প্রসঙ্গে মেহমুদকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলতেন, ‘বচ্চন বলিউডের লম্বা রেসের ঘোড়া এবং এই ঘোড়া অনেক জোরে দৌড়তে পারে।’ অমিতাভ তার সেই বক্তব্যের প্রমাণ রেখেছেন।
বচ্চনও এক সময় মেহমুদকে ‘গডফাদার’ হিসেবে মানতেন। এমনকি শোনা যায়, বচ্চন তার কাছে গাড়ি ধার করে বেড়াতেও যেতেন। এক সাক্ষাৎকারে মেহমুদ জানিয়েছেন, বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় অমিতাভ তাঁর সংগ্রহ থেকে পছন্দমতো একটি গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বেরোতেন। তাদের এই ঘনিষ্ঠতার কারণও ছিল। অমিতাভ যখন তার ক্যারিয়ার জীবনে স্ট্রাগল করছিলেন, তখন তাকে সঠিক রাস্তা দেখিয়েছিলেন মেহমুদ।
‘বম্বে টু গোয়া’ ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল অমিতাভকে। এই কাজের সুযোগ করে দিয়েছিলেন মেহমুদ নিজেই। সেলিম-জাভেদ জুটির সঙ্গে আলাপও করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জিঞ্জির’ ছবিতে অভিনয় করার পর অমিতাভকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। সাফল্যের সিঁড়িতে এক এক ধাপ করে এগিয়ে গিয়েছেন বিগ-বি।
শোনা যায়, এক সময় এত ঘনিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও সাফল্যের স্বাদ পেয়ে নাকি মেহমুদকে ভুলেই গিয়েছিলেন অমিতাভ। শারীরিক অসুস্থতার কারণে মাঝে মধ্যেই হাসপাতালে ভর্তি হতেন মেহমুদ। কানাঘুষো শোনা যায়, অমিতাভ ওই একই হাসপাতালে তার আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলেও মেহমুদের সঙ্গে দেখা না করেই ফিরে আসেন।
এই ঘটনায় খুব হতাশ হন মেহমুদ। ধীরে ধীরে বলি পাড়ার সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেন তিনি। বেশির ভাগ সময় বেঙ্গালুরুর একটি ফার্মহাউসে কাটাতেন। হৃদরোগজনিত সমস্যায় বহু দিন ধরে ভুগছিলেন মেহমুদ। চিকিৎসা করাতে আমেরিকায় গেলে সেখানেই তিনি মারা যান। সে খবর শুনে অবশ্য পরে অমিতাভ ভীষণ ভেঙে পড়েছিলেন।
মেহমুদের মারা যাওয়ার খবর যখন জানতে পারেন, তখন শুটিংয়ের কাজে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। এতটাই শোকাহত হয়েছিলেন যে, নিজেকে ঘরবন্দি করে নিয়েছিলেন তিনি। অমিতাভ ও মেহমুদের মধ্যে ঠিক কী কারণে দূরত্ব বেড়েছিল, তা ধোঁয়াশায় ঢাকা। তবে, অমিতাভ এখন প্রকাশ্যে স্বীকার করেন, তিনি মেহমুদের কাছে কৃতজ্ঞ।
সূত্র : আনন্দবাজার
এলএ/জেআইএম