নীরব স্মরণে আতিকুল হক চৌধুরী


প্রকাশিত: ০৮:০৩ এএম, ১৮ জুন ২০১৬

এ আর নতুন কী! প্রতিদিন আমরা নিজেদের ঘরের মানুষদের কথাই ভুলে যাচ্ছি। সেখানে একজন নাট্য চর্চার আদর্শ মানুষ আতিকুল হক চৌধুরীকে ভুলে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে একটা বিষয় কী জানেন, দেশে গুণের কদর থাকলে, মর্যাদা থাকলে গুণীরা এভাবে অবহেলিত থাকতেন। কথাগুলো বলছিলেন দেশের জনপ্রিয় একজন অভিনেতা। তিনি নন্দিত একজন মঞ্চকর্মীও।

তার সঙ্গে গতকাল আলাপ হচ্ছিলো বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। কথাচ্ছলে আসলো প্রয়াত নাট্য ব্যক্তিত্ব আতিকুল হক চৌধুরীর কথা। গতকাল ১৭ জুন ছিলো এই বরেণ্য মানুষটির তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। জীবদ্দশায় নাটক ও টেলিভিশন শিল্পের উন্নয়নে ছিলেন অন্ত:প্রাণ একজন মানুষ। অথচ মৃত্যুর মাত্র তিন বছরের মাথাতেই তিনি মুছে গেলেন সবখানে। গতকাল চোখে পড়েনি তেমন কোনো আয়োজন এই মানুষটিকে নিয়ে। বিশেষ কোনো আয়োজনের খবর পাওয়া যায়নি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আতিকুল হক চৌধুরীরর কর্মস্থল একুশে টেলিভিশনে (ইটিভি) এবং দীর্ঘদিন উপমহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করা বিটিভিতে।

এটা বেদনার তো বটেই, হতাশারও। আতিকুল হক চৌধুরীর কর্মজীবন শিল্পচর্চা ও নাট্য চর্চার ক্ষেত্রে যে কারো জন্যই অনুপ্রেরণার। পাশাপাশি তিনি বিটিভি ও একুশে টিভির মতো জনপ্রিয় চ্যানেলগুলোর কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। বিশেষ করে বিটিভি যখন বাংলাদেশিদের একমাত্র বিনোদনের মাধ্যম তখন তিনি চ্যানেলটির উপমহাপরিচালক হিসেবে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দর্শক ধরে রাখারা চেষ্টা চালিয়েছেন উন্নত মেধা ও মননশীলতা দিয়ে। সেইসঙ্গে, শুদ্ধ ভাষার ব্যবহারে রুচিশীল ও সার্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য নাটক নির্মাণের আন্দোলনেরও একজন ছিলেন নাট্য ব্যক্তিত্ব আতিকুল হক চৌধুরী। নাট্য চর্চা ও টেলিভিশন শিল্পের অস্থির এই সময়টাকে যেখানে এই মানুষটিকে নতুন প্রজন্মের কাছে উপস্থাপন করা খুব বেশি প্রয়োজন সেখানে আমাদের অদ্ভুত নীরবতা। এ যেন তার যোগ্যতা ও সাফল্যকে পাশ কাটিয়ে যাবারই চেষ্টা!

আতিকুল হক চৌধুরী ২০১৩ সালের ১৭ জুন না ফেরার দেশে পাড়ি দেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮২ বছর। মৃত্যুর আগে অনেকদিন ধরেই তিনি প্রোস্টেট ক্যান্সার, ডায়বেটিসসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে জাগোনিউজ পরিবারের পক্ষ থেকে রইল গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

আতিকুল হক চৌধুরীর জন্ম ভোলায়, মামাবাড়িতে ১৯৩১ সালের ১৫ ডিসেম্বর। তার পৈতৃক নিবাস বরিশাল। ১৯৬০ সালে রেডিও পাকিস্তানে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৬ সালে যোগ দেন টেলিভিশনে। ১৯৯০ সালে বিটিভির উপমহাপরিচলক হিসেবে অবসর নেন। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে ১১ বছর খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন। সর্বশেষ তিনি একুশে টেলিভিশনের উপদেষ্টা হিসেবে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করছিলেন।

তিনি একাধারে নাট্যকার, নাট্য প্রযোজক, অভিনেতা। তার হাত ধরে অসংখ্য জনপ্রিয় নাটক উপহার পেয়েছেন দর্শক। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য- দূরবীন দিয়ে দেখুন, নীলনকশার সন্ধানে, জলাশয় কত দূর, সুখের উপমা, বাবার কলম কোথায়, বৃষ্টিবালিকা ইত্যাদি।

তার প্রযোজিত নাটকের মাধ্যমে টেলিভিশনের পর্দায় আসেন আবুল হায়াত, হুমায়ুন ফরীদি, শর্মিলী আহমেদ, কেয়া চৌধুরী, মিতা চৌধুরী, জুয়েল আইচ, আফরোজা বানু, মেঘনা, শম্পা রেজা, শমী কায়সার, সালমান শাহর মতো নন্দিত তারকারা।

বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। শ্রেষ্ঠ নাট্য প্রযোজক হিসেবে তিনি ১৯৭৬ সালে জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার পান।

এলএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।