আমি কাশেম টিভির রিপোর্টার বলছি : শুভাশীষ ভৌমিক

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:২৮ পিএম, ২৩ আগস্ট ২০২০

১৯৭৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে থিয়েটার ও মঞ্চ নাটকের সঙ্গে যুক্ত। অদ্যাবধি নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। ঢাকা থিয়েটারে অধীনে তার অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘কীর্তনখোলা’, ‘কেরামত মঙ্গল’, ‘হাত হদাই’, ‘ধূর্ত ওই’, ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’, ‘মুনতাসির ফ্যান্টাসি’, ‘আওয়ার কান্ট্রিজ গুড’ প্রভৃতি।

১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ‘বিবাহ’ নাটকটিতে প্রথম অভিনয় করেন শুভাশীষ ভৌমিক। পরে বহু ধারাবাহিক ও একক নাটকে অভিনয় করেছেন। হানিফ সংকেতের উপস্থাপনা ও পরিচালনায় জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র নিয়মিত শিল্পী তিনি। বিশেষ করে কাশেম টিভির রিপোর্টার হিসেবে তার জনপ্রিয়তা আকাশ ছোঁয়া।

বড় পর্দায় অভিনয় করারও সুযোগ হয়েছে তার। ‘সবুজ সংকেত’, ‘জনম দুঃখী’, ‘গেরিলা’, ‘রান’, ‘ভুবন মাঝি’ তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র। বর্তমানে করোনার প্রভাবে তিনি অবস্থান করছেন নিজ গৃহেই। জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে জানালেন মঞ্চ নাটকের রিহার্সেল করছেন তিনি। সঙ্গে নতুন কিছু নাটকের শুটিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিস্তারিত লিখেছেন অরণ্য শোয়েব-

জাগো নিউজ : আপনার থিয়েটার জীবনের গল্প শুনতে চাই। কীভাবে যুক্ত হওয়া এবং মিশে যাওয়া-
শুভাশীষ ভৌমিক : ১৯৭৮ সালে যখন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন থেকেই থিয়েটারে যুক্ত আমি। ভর্তির কিছুদিন পর ছাত্রসংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি ছাত্রসংসদের নাট্য সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর মধ্যে প্রয়াত সেলিম আল দীনের ছোট ভাই ছিল আমার ক্লাসমেট ও খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তার সঙ্গে এত বেশি বন্ধুত্ব অথচ জানতামই না নাট্যকার ড. সেলিম আল দীন তার আপন বড় ভাই।

এর মধ্যে ফরীদি ভাই একদিন বললেন, আমরা ৪৫ দিনব্যাপী নাটকের ওয়ার্কশপ করছি জাহাঙ্গীরনগরে। তুই চাইলে আয়। গেলাম। লাগাতার কাজ করে আমরা একটি নাটক প্রোডাকশন করলাম ‘সংবাদ কার্টুন’ নামে। তো আমি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নাট্যচর্চা শেখার পর থেকে এটাই আমার প্রথম নাটক বলা চলে। যদিও তা কোথাও মঞ্চস্থ হয়নি।

তারপর ১৯৮০/৮১ সালের দিকে জাহাঙ্গীরনগরে ‘জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করলাম। এটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নাট্যকার কায়জার আহমেদ, আমার বন্ধু ফারুক আহমেদ, আমি, শহীদুজ্জামান সেলিম, ইমাম হাসানসহ আরো অনেকে। ওই সংগঠন থেকেই সেলিম আল দীনের ‘শকুন্তলা’ নাটকটি মঞ্চস্থ করি সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে। এটাই আমাদের প্রথম অভিনয় বলা যায় দর্শকদের সামনে। এভাবেই আমার থিয়েটার জীবনের সূত্রপাত।

এরপর জড়িয়ে পড়ি বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার আন্দোলনের সঙ্গে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে নাটক করা, সংগঠন করা এবং নাটক তৈরি করা। ১৯৮৩ সালে আমি ঢাকা থিয়েটারে আসি। তারপর থেকে অদ্যাবধি এখনো চলছেই। মঞ্চ নাটক সত্যি মনে-প্রাণে-রক্তে মিশে গেছে।

জাগো নিউজ : টিভিতে বর্তমানে ব্যস্ততা কি নিয়ে?
শুভাশীষ ভৌমিক : ঈদের পর এখন পর্যন্ত ব্যস্ততা নেই। কোনো নাটকে শুটিং করিনি। তবে দুটো নাটকের শিডিউল দিয়েছিলাম কিন্তু দুটোই ক্যানসেল হয়েছে করোনার কারণে। গাজীপুর এবং মানিকগঞ্জে শুটিং করার কথা ছিল। তবে শিগগিরই শুরু হবে শুনেছি।

jagonews24

জাগো নিউজ : ম্যাগাজিন শোতে নিয়মিতই আপনার উপস্থিতি। নাটকে খুব একটা দেখা যায় না। কারণটা কী?
শুভাশীষ ভৌমিক : ম্যাগাজিন শোয়ের মধ্যে আজকাল শুধু ‘ইত্যাদি’ করা হয়। যদিও এবার বিটিভির ‘আনন্দ মেলা’তেও কাজ করেছি। বিটিভির ডিজি সাহেব নিজে বলেছেন কাজটি করতে তাই করেছি। আর নাটক কম করার কারণ হচ্ছে আমি যাদের সঙ্গে কাজ করতাম তারা অনেকেই এখন নেই। কেউ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। কেউ বা নাটক ছেড়েছেন। কেউ আবার আমারই অনিয়মিত। মানে যে সার্কেলটা ছিলো আমার কাজের সেটা এখন নেই।

যেমন আব্দুল্লাহ আল মামুন, আফজাল হোসেন, মামুনুর রশিদ, সুবর্ণা মোস্তফা; এমন আরো অনেকেই। নতুনদের সঙ্গেও আমার কাজ হয়েছে কিছু। তবে সেটা কম। আরো একটি বিষয় হচ্ছে চরিত্র তো আমাকে ডিমান্ড করতে হবে। আজকাল তো খুব কম শিল্পীদের নিয়ে নাটক বানানো হয়।

জাগো নিউজ : কমেডি চরিত্রেই আপনার জনপ্রিয়তা। এটা কতটুকু মানেন?
শুভাশীষ ভৌমিক : এটা একদমই ভুল কথা। যারা এখনকার দর্শক বা পর্যবেক্ষক, তাদের হয়তো এটা মনে হয় যে আমি শুধু কমেডি করি। কিন্তু বিটিভির নিয়মিত দর্শক যারা ছিলেন একসময় তারা কিন্তু জানেন প্রচুর কাজ করেছি আমি কমেডির বাইরে। সব ধরণের কাজই করেছি। আর কমেডি চরিত্র বলতে ‘ইত্যাদি’তে মানুষ আমাকে বেশি দেখে মজার গল্পে। তার জন্য হয়তো অনেকেই মনে করে আমি অন্য চরিত্র করি না। অন্য কাজগুলো হয়তো ‘ইত্যাদি’র মতো করে সবার চোখে পড়ে না।

আমি হুমায়ূন আহমেদের নাটকে কাজ করেছি, হানিফ সংকেতের নাটকে কাজ করেছি। সেখানে অনেক নাটকে ভাইটাল ক্যারেক্টার প্লে করেছি। এখন তো অনেক চ্যানেল। অনেক নাটক হয়। মানুষ সব দেখতে পারে না।

জাগো নিউজ : ইত্যাদিতে অভিনয় নিয়ে কেমন প্রতিক্রিয়া পান?
শুভাশীষ ভৌমিক : ১৯৮৯ সালে ‘ইত্যাদি’ শুরু হয়। ২০০১ সাল থেকে আমি নিয়মিত কাজ করছি ‘ইত্যাদি’-তে। আর আমি যে কাশেম টিভির রিপোর্টার চরিত্র করি সেটা হচ্ছে কাল্পনিক। কিন্তু ভিষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে এটি। আমিও দারুণ প্রতিক্রিয়া পাই। কেউ কেউ তো মনে করে সত্যি সত্যি আমি কাসেম টিভির রিপোর্টার। মজা পাই।

আমাকে মানুষ কীভাবে চেনে, ব্যক্তিগতভাবে আমি কেমন দুটো আলাদা বিষয়। যেমন হুমায়ূন ফরীদি বেশিরভাগ সময় খারাপ চরিত্রে অভিনয় করলেও ব্যক্তিগতভাবে তিনি তেমন নন। তো ইত্যাদিতে আমি যেটা করি, সেটা তো অভিনয়।

কেন আমি এই চরিত্রটি করি বা পছন্দ করি এটাও অনেকে জিজ্ঞেস করেন। দেখুন আমাদের দেশে একচল্লিশটি টেলিভিশন চ্যানেল। মানুষ কিন্তু ঠিকমতো কুড়িটার নামও বলতে পারবে না। তাহলে এতগুলো চ্যানেলের কাজ কী? এরা আমাদের শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতি খেলাধুলা ঠিকমতো তুলে ধরছে কি না। যদি তুলে ধরতে না পারে, তাহলে এতগুলো প্রচারমাধ্যম থাকার কোনো দরকার আছে বলে মনে করি না। যেসব বিষয় গুরুত্ব নিয়ে প্রচার হওয়া দরকার ছিলো কিন্তু হয়নি সেসব বিষয় আমি ‘ইত্যাদি’-তে কাশেম টিভির মাধ্যমে তুলে ধরি।

সমাজের যে বাজে বিষয়গুলো রয়েছে, অভিনয়ের মাধ্যমে তার প্রতিবাদ করার চেষ্টা করি। বাজে জিনিসগুলোর প্রতিবাদ জানিয়ে আমি অভিনয় করি। এবারের ‘ইত্যাদি’-তেও সে রকম একটি অভিনয়ই করেছি। এই যে আমাদের দেশে কত বড় বড় হাসপাতাল রয়েছে, তাদের আচরণ এমন যে- লাশ নিয়ে যান, টাকা দিয়ে যান। এটা তো কোনো মানবিকতা হতে পারে না। তাহলে তো হাসপাতালের কোনো প্রয়োজন নেই।

জাগো নিউজ : একজন অভিনেতা হতে চাইলে থিয়েটার নাটক বা মঞ্চ নাটক কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
শুভাশীষ ভৌমিক : খুবই গুরুত্তপূর্ণ একটি বিষয়। একজন অভিনেতার মঞ্চ নাটকে পারদর্শিকতা থাকা ভালো। মঞ্চ নাটক একজন অভিনেতাকে শক্তিশালী করে। ডায়লগ ডেলিভারি, এক্সপ্রেশন খুব সহজেই আয়ত্ত করতে সাহায্য করে।

জাগো নিউজ : সাম্প্রতিককালে নাটকের মূল ঘাটতি কি বলে মনে করেন ?
শুভাশীষ ভৌমিক : অনেক কিছুরই ঘাটতি আছে। তবে দক্ষ লোকবলের অভাব মনে হয়। মানে টেকনিশিয়ান। দক্ষ অভিনয়শিল্পীরও খুব অভাব। ভালো গল্পের অভাব।

জাগো নিউজ : বাংলা নাটকের ভবিষৎ নিয়ে অনেকেই নানা রকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। আপনার ভাবনাটা জানতে চাই...
শুভাশীষ ভৌমিক : যে সংকট নিয়ে আমাদের এখানে নাটক চলছে যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে বাংলা নাটকের ভবিষৎ অন্ধকার। ঘুরে দাঁড়ানোর যদি ইচ্ছে থাকে তাহলে হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে। তার জন্য যেসব অভাব আছে তা দূর করতে। দক্ষ লোকবল তৈরি করতে হবে।

জাগো নিউজ : বর্তমান সময়ে আপনার চোখে সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রী কে ?
শুভাশীষ ভৌমিক : মেহজাবীনের একটি নাটক ভালো লেগেছে সম্প্রতি। খুব ভালো লেগেছে। আর সিনেমায় জয়া আহসানকে ভালো লাগে। তার অভিনয় চমৎকার। একজন জাঁদরেল অভিনেত্রী তিনি। আর অভিনেতা বলতে জাহিদ হাসান আমার সবসময়ই প্রিয়। চঞ্চল চৌধুরীকেও দারুণ পছন্দ করি। একজন ভালো অভিনেতা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির।

জাগো নিউজ : ইত্যাদি নিয়ে কিছু বলুন...
শুভাশীষ ভৌমিক : ‘ইত্যাদি’কে ভালোবাসি। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত ‘ইত্যাদি’-তে অভিনয় করে যাবো। কাশেম টিভিও চালিয়ে যেতে চাই এই বলে- ‘আমি কাশেম টিভির রিপোর্টার বলছি’।

এলএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।