পরিচালকদের পিকনিকের আড়ালে সেলিম খানের নির্বাচনী মহড়া!

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৫৪ এএম, ০১ এপ্রিল ২০২২

অনেক আগে থেকেই তারিখ নির্ধারিত ছিল ১ এপ্রিল পিকনিক করবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। দাওয়াত দেয়াও শেষ হয়েছিল। চলচ্চিত্রের সব সংগঠন, সাংবাদিকদের নিয়ে এক বিরাট মিলনমেলার আয়োজনের প্রস্তুতিও চলছিল।

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শাপলা মিডিয়ার কর্ণধার সেলিম খানের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণে হঠাৎ করেই চেহারা বদলে গেল আয়োজনটির। যা এখন পরিচালকদের নামের আড়ালে সেলিম খানের ব্যক্তিগত পিকনিকে রূপ নিয়েছে। এটি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির সভাপতি পদে সেলিম খানের নির্বাচনের মহড়া।

ঘটনার শুরু মার্চ মাসের শুরুর দিকে। জানা যায়, পরিচালকদের উন্নয়নে তাদের সমিতিতে ১০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন সেলিম খান। সেসময় সেলিম খানকে ‘দাতা’, ‘দানবীর’সহ অনেক উপাধিই দেওয়া হয়েছিল।

কিছুদিন পর জানা যায়, এই টাকা এসেছে পিকনিকের খরচবাবদ। সবাই আশায় বুক বেঁধেছিলেন আরও অনেক স্পন্সর মিলিয়ে এবার বেশ জমকালো পিকনিক হবে।

কিন্তু পিকনিকের তিনদিন আগে এসে সেই আশায় গুড়েবালি পড়লো। সেলিম খানের নির্দেশে বাতিল করা হয়েছে সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ। বাতিল করা হয়েছে চলচ্চিত্রের অন্যান্য সংগঠনের সদস্যদের আমন্ত্রণও। শুধু প্রতিটি সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরাই যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন এই পিকনিকে।

এই বিষয়টি তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে চলচ্চিত্রাঙ্গনে। যেখানে প্রতিবছর সবাইকে নিয়ে সম্মিলিত অংশগ্রহণে পিকনিক করে পরিচালক সমিতি, সেখানে এ বছর সবাইকে কেন এড়িয়ে যাওয়া হলো সেই প্রশ্ন উঠছে।

উত্তর দিতে পারেননি পরিচালক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন। তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যই করতে চাননি।

এদিকে সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সাড়া মেলেনি। তার ব্যবহৃত ফোন নম্বরটি বন্ধ রয়ছে।

তবে ক্ষোভ প্রকাশ করে পরিচালক সমিতির বেশ কয়েকজন সদস্য জানান, এবারের পিকনিক অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রযোজক সমিতির নির্বাচন ঘিরে শাপলা মিডিয়ার কর্ণধার সেলিম খানের পূর্বপ্রস্তুতির মঞ্চ। এবার প্রযোজকদের নির্বাচনে সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন অবৈধ ব্যবসায়ী হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনের নজরদারিতে থাকা সেলিম খান। নিজেকে নির্বাচিত করতে তার সমর্থিত পরিচালক ও প্রযোজকদের মাঠে নামিয়েছেন তিনি। অনেককে বানিয়েছেন প্রযোজক সমিতির ভোটারও।

তাদের নিয়ে পরিচালকদের পিকনিকে অংশগ্রহণ করবেন তিনি। এজন্য ১০ লাখ টাকা অনুদানের দোহাই দিয়ে একাই শাপলা মিডিয়া, ভয়েস টিভি, সিনেবাজের নামে নিয়েছেন ২০০টি দাওয়াত কার্ড। এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে নির্ভরশীল সূত্রে। এ নিয়ে পরিচালকদের মধ্যেই দেখা দিয়েছে দ্বন্দ্ব-মতানৈক্য। অনেক সদস্য বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে পিকনিক বয়কট করবেন বলেও জানা গেছে।

পাশাপাশি শোনা যাচ্ছে, সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদ থেকে বয়কট হওয়া জায়েদ খানকেও পিকনিকে নিয়ে যাচ্ছেন সেলিম খান। এ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন পরিষদের নেতাকর্মীরা। তাদের প্রশ্ন, পরিষদের নেতৃত্বে থাকা চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি কী করে বয়কট হওয়া জায়েদ খানকে নিয়ে পিকনিক করছে? অথচ সম্মিলিত পরিষদের পক্ষে পরিচালকদের অফিসিয়াল প্যাডে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জায়েদ খানকে বয়কট করা হয়েছিল। সেখানে পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে স্বাক্ষর ছিল পরিচালকদের প্রেসিডেন্ট সোহানুর রহমান সোহানের!

এসব কারণে বিরক্ত শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটিসহ অন্যান্য সমিতির নেতাকর্মীরা। বিব্রত খোদ পরিচালক সমিতির অনেক নেতা ও সদস্যরাও। তারা সমিতির সভাপতি ও মহাসচিবের বিতর্কিত এ ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন।

কেউ নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি এই বিষয়টি নিয়ে। তবে তাদের ভাষ্য, একজনের অনুদান নিয়ে এভাবে জিম্মি হয়ে কেন পিকনিকের প্রয়োজন পড়লো পরিচালক সমিতির? শাপলা মিডিয়া ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠানকে কি পাশে পাওয়া যেত না? অতীতে তো এই সমিতির বেশ বড় আয়োজনে পিকনিক করার সাফল্য রয়েছে।

এদিকে আরও জানা গেছে, পরিচালক সমিতির পিকনিকের সকল ভিডিও ও ছবি সেলিম খানের মালিকানাধীন মিডিয়াগুলোর জন্য সংরক্ষিত। তাই অন্য কোনো মিডিয়াকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। দাওয়াত দিয়েও বাতিল করা হয়েছে সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ।

বিষয়টিকে চলচ্চিত্র সাংবাদিকরা অপমান হিসেবে দেখছেন এবং নিন্দা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে।

এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।