ভারতের এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়
বুকে স্পর্শ করা ধর্ষণচেষ্টা নয়, গুরুতর যৌন নিপীড়ন

ভারতের উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হয়েছে, ‘নারীর বুক স্পর্শ করা’ বা ‘পাজামার ফিতা ধরে টান দেওয়া’ ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার শামিল নয়। তবে এটি গুরুতর যৌন নিপীড়নের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, যা তুলনামূলকভাবে কম গুরুতর অপরাধ।
সোমবার (১৭ মার্চ) বিচারপতি রাম মনোহর নারায়ণ মিশ্রের ঘোষণা করা রায়ে এসব বলা হয়েছে। এদিকে, হাইকোর্টের এই রায় ভারতজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এরই মধ্যে অনেকে এই বিষয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০২১ সালে উত্তরপ্রদেশের কাশগঞ্জ এলাকায় ১১ বছর বয়সী এক শিশুর ওপর আক্রমণের অভিযোগ ওঠে পবন ও আকাশ নামে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অভিযোগ অনুযায়ী, তারা মেয়েটির বুকে স্পর্শ করেন ও পাজামার ফিতা খুলে ফেলেন। একপর্যায়ে ‘নিপীড়করা’ শিশুটিকে একটি কালভার্টের নিচে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে মেয়েটির চিৎকার শুনে পথচারীরা এগিয়ে এলে পবন ও আকাশ ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে দুই ‘নিপীড়কের’ বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টা ও শিশু যৌন নিপীড়ন আইনে (পকসো) মামলা করা হয়। কিন্তু পরে তারা এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা খারিজের আবেদন জানায়। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (১৭ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি রাম মনোহর নারায়ণ মিশ্র তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ প্রত্যাহার করে গুরুতর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ বহাল রাখার নির্দেশ দেন।
বিচারপতি নারায়ণ মিশ্রের বেঞ্চ নির্দেশ দেয় যে, আসামিদের বিরুদ্ধে আইপিসির ৩৫৪-বি (অঙ্গভঙ্গি বা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে পোশাক খোলার উদ্দেশ্যে হামলা) ও পকসো আইনের ৯/১০ ধারার (গুরুতর যৌন নির্যাতন) আওতায় বিচার করা হবে।
রায়ে বিচারপতি বলেন, ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ আনতে হলে প্রমাণ করতে হবে যে এটি শুধু প্রস্তুতির পর্যায়ে ছিল না বরং অপরাধটি ঘটানোর জন্য চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত আকাশ ভুক্তভোগীকে কালভার্টের নিচে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ও তার পায়জামার ফিতা খুলে ফেলিছিলেন। কিন্তু সাক্ষীরা বলেননি যে, এর ফলে মেয়েটি নগ্ন হয়ে পড়েছিল বা তার পোশাক খুলে গিয়েছিল। এছাড়া, অভিযুক্তরা মেয়েটির সঙ্গে যৌন মিলনের চেষ্টা করেছিল, এমন কোনো প্রমাণও নেই।
এদিকে, এই রায় ঘোষণার পরপরই আইনি মহলে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং রায়ের কঠোর নিন্দা জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান। তিনি এক্সে (পূর্বের টুইটার) লেখেন, এর চেয়ে কম গুরুতর বিষয়েও সুপ্রিম কোর্ট বিচারকদের তলব করেছেন। এই রায় অবশ্যই সর্বোচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপ দাবি করে।
অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, যদি এ ধরনের কাজ ধর্ষণের ইঙ্গিত না দেয়, তাহলে আসলে কীভাবে বোঝাবে? অনেকেই আবার মনে করছেন, এ ধরনের রায় যৌন অপরাধের শাস্তি কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা মাত্র।
সূত্র: এনডিটিভি
এসএএইচ