মাস্কের টেসলা কঠিন সময় পার করলেও সুসময়ে ‘বাংলার টেসলা’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৫৩ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২৫
ছবি: এএফপি (ফাইল)

বিশ্বজুড়ে যেখানে টেসলার ইলেকট্রিক গাড়ির (ইভি) বিক্রি কমছে, সেখানে বাংলাদেশের শহরগুলোতে ঠিক উল্টো চিত্র। এখানে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে স্বল্পমূল্যের এক ধরনের ইলেকট্রিক যান, যা স্থানীয়ভাবে ‘বাংলা টেসলা’ নামে পরিচিত।

বাংলাদেশে ২০১৬ সালে যেখানে মাত্র ২ লাখ ই-রিকশা ছিল, এখন সেই সংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে, প্রতিদিন কোটি কোটি যাত্রী পরিবহন করছে। এটি সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনানুষ্ঠানিক ইভি বহর।

প্রথাগত সাইকেলচালিত রিকশা বহুদিন ধরেই বাংলাদেশের সংস্কৃতির অংশ ছিল। ইউএনও এসব রঙিন রিকশাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু ২০০৭ সালের দিকে ধীরে ধীরে কিছু চালক তাদের রিকশায় চীনের তৈরি বৈদ্যুতিক মোটর ও সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারি বসাতে শুরু করেন। বর্তমানে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে নতুন এই ই-রিকশাগুলো তৈরি ও বিক্রি করছে।

ঢাকার চালক শাকিলুর রহমান বলেন, প্যাডেল রিকশা চালিয়ে দিনে ২০০ টাকা রোজগার হয়, আর সেটা কচ্ছপের মতো ধীর। আমি এখন আমার ‘টেসলা’ চালিয়ে দিনে এক হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় করি। কারণ এই ই-রিকশা ঘণ্টায় ৪০ কিমি গতিতে চলতে পারে, যা প্যাডেল রিকশার তুলনায় ৪ গুণ বেশি।

তবে এই গতিই হয়ে উঠছে বিপদের কারণ। অধিকাংশ ই-রিকশা দুর্বল কাঠামোর এবং ইলেকট্রিক মোটরের গতি অ্যাডজাস্ট করার মতো নয়।

একটি স্থানীয় এনজিওর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ৮৭০টি প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ বছরের এপ্রিলেই মৃত্যু সংখ্যা পৌঁছেছে ৩৭৮ জনে। একটি জাতীয় দৈনিক একে ভয়াবহ বিপর্যয় বলে আখ্যা দিয়েছে।

এই বাহনের লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি যখন অকেজো হয়ে পড়ে, তখন তা অবৈধ উপায়ে পুনরায় গলিয়ে পুনর্ব্যবহার করা হয়, যা ভয়াবহ সীসা দূষণের কারণ।

ইউনিসেফ বলছে, প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ বাংলাদেশি শিশুর রক্তে বিপজ্জনক হারে সীসা পাওয়া গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে টাইগার নিউ এনার্জি নামের একটি স্টার্টআপ সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক একটি সেবা চালু করেছে—যেখানে চালকরা চাইলে শহরের বিভিন্ন স্থানে থাকা স্টেশন বা বুথ থেকে মুহূর্তেই খালি ব্যাটারির বদলে চার্জ দেওয়া ব্যাটারি নিয়ে নিতে পারেন, ফলে সময় ও খরচ—উভয়ই কমে যায়।

ই-রিকশা বন্ধে সরকারের আগের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছিল জনগণের তীব্র প্রতিক্রিয়ায়।
তবে গত বছরের বিপ্লবের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুনে একটি খসড়া বিধিমালা প্রস্তুত করেছে, যেখানে গতি সীমা নির্ধারণ ও নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে।

তবে এর আগে একই ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এবারের উদ্যোগ কি আলোর মুখ দেখবে?

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

এমএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।