শ্রীলঙ্কা
বন্যার পানিতে জেগে উঠেছে মানবতা
শ্রীলঙ্কায় বন্যার পানিতেই যেন জেগে উঠেছে মানবতা। দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে ঘূর্ণিঝড় দিতওয়ার প্রভাবে সৃষ্ট বন্যা-ভূমিধসে নিহতের সংখ্যা ৪৬০ ছাড়িয়েছে। এখনো নিখোঁজ শতাধিক মানুষ। ধ্বংস হয়ে গেছে ৩০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি। কিন্তু এমন ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেই আশার আলো দেখাচ্ছে তরুণ প্রজন্মের মানবিকতা।
রাজধানী কলম্বোর শহরতলিতে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে খাবার ও পানি পৌঁছে দিতে মোটরচালিত নৌকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন অভিনেতা ও সঙ্গীতশিল্পী জি কে রেজিনল্ড। তিনি বলেন, বহু পরিবার কয়েকদিন ধরে কোনো সাহায্য পায়নি। অন্তত এক বেলার খাবার দিতে পারছি—এটাই আমার তৃপ্তি।
বন্যার ভয়াবহতায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন লঙ্কান প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিশানায়েকে। উদ্ধার তৎপরতায় নেমেছে সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার, মানবিক সহায়তা পাঠাচ্ছে বিদেশি সরকার ও বিভিন্ন সংস্থাও। তবে দীর্ঘমেয়াদে পুনর্গঠনের পথ শ্রীলঙ্কার জন্য কঠিনই হবে।
আরও পড়ুন>>
বাংলাদেশ সরকারের জরুরি মানবিক সহায়তা শ্রীলঙ্কায় পৌঁছেছে
এশিয়ার একদিকে বৃষ্টি-বন্যা অন্যদিকে খরা, দুর্যোগে ওষ্ঠাগত প্রাণ
এশিয়ায় এক সপ্তাহেই হাজার মানুষের প্রাণ নিলো বিধ্বংসী বন্যা
সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীরা এখন ত্রাণকর্মী
কলম্বোর উইজেরামা এলাকায় ২০২২ সালে গোতাবায়া রাজাপাকসেবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকা তরুণরা এখন একটি কমিউনিটি কিচেন চালাচ্ছেন। অর্থনৈতিক সংকটের সময় যারা রাস্তায় নেমেছিলেন, তাদের সেই সক্রিয়তা এখন ঘূর্ণিঝড়–পরবর্তী ত্রাণ বিতরণে নতুন মাত্রা দিচ্ছে।
সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট সাসিন্দু সাহান তরাক বলেন, কেউ কাজ শেষে এসেছে, কেউ ছুটি নিয়ে এসেছে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের গ্রুপ আবার সক্রিয় হয়ে যায়।
২০১৬ সালের ভয়াবহ বন্যার সময়ও এভাবে স্বেচ্ছাসেবী ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তারা। তাদের উদ্যোগে শত শত সাহায্যের আবেদন সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হচ্ছে, পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য রান্না করা খাবারও সরবরাহ করা হচ্ছে।
অনলাইনে সহায়তার প্ল্যাটফর্ম
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবীরা তৈরি করেছেন উন্মুক্ত ডেটাবেস, যেখানে দাতারা জানতে পারছেন কোন এলাকায় কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন। আরেকটি স্বেচ্ছাসেবী–সমর্থিত ওয়েবসাইট দাতাদের নিকটস্থ ত্রাণকেন্দ্র খুঁজে দিচ্ছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও খাদ্য, সাবান, টুথব্রাশসহ জরুরি সামগ্রী সংগ্রহে ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে।
বন্যার পানিতে মুছে গেছে বিভাজন
দুর্যোগ মোকাবিলায় যথাযথ প্রস্তুতি না নেওয়ার অভিযোগে রাষ্ট্রপতি দিশানায়েকের সমালোচনা করছে শ্রীলঙ্কার বিরোধী দলগুলো। আবহাওয়া সতর্কতাকে উপেক্ষা করায় বিপর্যয় আরও ভয়াবহ হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। গত সোমবার পার্লামেন্টে সরকার আলোচনার সময় কমিয়ে আনছে অভিযোগ তুলে বিরোধী এমপিরা ওয়াকআউটও করেন।
তবে রাজনীতির মঞ্চে বিরোধিতা থাকলেও মাঠপর্যায়ে দেখা যাচ্ছে ঐক্য ও মানবিকতার শক্ত উপস্থিতি।
উইজেরামার কমিউনিটি কিচেনে দীর্ঘ সময় কাজ শেষে সোমবার এক পোস্টে সাহান লিখেছেন, ‘দিন শেষে ক্লান্তি থাকে না। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আনন্দই সব ছাপিয়ে যায়। দুর্যোগ নতুন নয়, কিন্তু মানুষের হৃদয়ের সহমর্মিতা সব ধ্বংসকে জয় করে।’
সূত্র: বিবিসি
কেএএ/