ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ ২০২৬, বাংলাদেশ থেকে আবেদন করবেন যেভাবে
ইউরোপের মর্যাদাপূর্ণ উচ্চতর স্টাডি প্রোগ্রাম হলো ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ। ইউরোপের নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সমন্বিতভাবে এ বৃত্তি দেওয়া হয়। বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের ইউরোপের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার তহবিল জোগাতে ইউরোপীয় কমিশন এ বৃত্তি দেয়।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্স ও জয়েন্ট মাস্টার্সে পড়াশোনার সুযোগের জন্য সুযোগ আছে ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপে। এই স্কলারশিপে ৩০০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৮৫টি প্রোগ্রামে প্রতিবছর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। ২০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী ও ১ হাজার ৫০০ জনের মতো পিএইচডি শিক্ষার্থী প্রতিবছর এ বৃত্তিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পান।
আসুন জেনে নিই বাংলাদেশ থেকে ২০২৬ সালের ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপের সম্ভাবনা ও আবেদনপদ্ধতি..
কারা আবেদন করতে পারেন ও কেন বাংলাদেশিদের এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা উচিত?
এই স্কলারশিপের করতে পারেন নতুন স্নাতক, চাকরিজীবী, এমনকি প্রোগ্রামের শর্ত অনুযায়ী চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থীরাও। প্রোগ্রাম অনুযায়ী জয়েন্ট, ডাবল বা মাল্টিপল ডিগ্রি পাওয়া যায়।
এটি প্রচলিত মাস্টার্সের মতো নয়, এখানে দুই থেকে চারটি ইউরোপীয় দেশের অন্তত দুই থেকে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা বাধ্যতামূলক। ফলে শিক্ষার্থীরা পান আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা, ভিন্নধর্মী একাডেমিক পরিবেশ ও বিস্তৃত নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ।
স্কলারশিপের সুবিধাসমূহ-
মাসে ১৪০০ ইউরো (প্রায় দুই লাখ টাকা) ভাতা
সম্পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ
যাতায়াত খরচ
স্বাস্থ্যবিমা
সাংস্কৃতিক ও একাডেমিক স্থানান্তরের সুযোগ
বাংলাদেশি আবেদনকারীদের বড় সুবিধা হলো, এখানে কোনো আবেদন ফি নেই, সিজিপিএকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না ও যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই সমান সুযোগ পান। মূল্যায়নের মূল বিষয় হলো আপনার লক্ষ্য, দক্ষতা, প্রেরণা ও প্রোগ্রামের সঙ্গে সামঞ্জস্য।
ইরাসমাস মূলত বৈচিত্র্যকে উৎসাহ দেয়, তাই সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই সমান সুযোগ পান। পড়াশোনার পাশাপাশি রয়েছে ইন্টার্নশিপ, বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্কিং, কাজের সুযোগ ও দীর্ঘমেয়াদে বসবাসের সুযোগ, যা অনেকের জীবনের গতিপথ বদলে দেয়।
কোথায় পাওয়া যাবে ইরাসমাস মুন্ডাসের প্রোগ্রামগুলো?
সঠিক প্রোগ্রাম নির্বাচন করা আবেদন প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ইরাসমাস মুন্ডাসের অফিসিয়াল ক্যাটালগই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস। লিংক-
https://www.eacea.ec.europa.eu/scholarships/erasmus-mundus-catalogue_en
এখানে বিষয়ভিত্তিক, ভাষাভিত্তিক, বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক, মবিলিটি স্ট্রাকচারভিত্তিক নানা ফিল্টার ব্যবহার করে আপনি নিজের জন্য উপযুক্ত প্রোগ্রাম খুঁজে নিতে পারবেন।
শর্টলিস্ট করার পর প্রতিটি প্রোগ্রামের কারিকুলাম, কোন দেশে পড়তে হবে, ইন্টার্নশিপ আছে কি না, গবেষণা সুযোগ, ভাষাগত শর্ত, শেষ তারিখ- সবই ভালোভাবে পড়ে বুঝতে হবে। পাশাপাশি বিশ্বস্ত স্কলারশিপ প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত শর্টলিস্ট, যেমন- এমআইপিডিএল, এনওএইচএ, এমএআরআইএইচই, জিইএম, প্ল্যান্টহেল্থ, এমএজিএমএ, এএমএবিজি ও সাংবাদিকতার মতো জনপ্রিয় কোর্সগুলোর তথ্য প্রয়োজনে তুলনামূলকভাবে যাচাই করা যেতে পারে।
অভিজ্ঞ ইরাসমাস অ্যালামনাইরা বলেন, ৩ থেকে ৫টি ভালোভাবে মানানসই প্রোগ্রামে আবেদন করাই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। এতে আবেদন আরও শক্তিশালী ও ব্যক্তিনির্ভর হয়, এবং নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে।
সাধারণ যোগ্যতা
প্রোগ্রামভেদে যোগ্যতার কিছু পার্থক্য থাকে। সাধারণত ৩-৪ বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি প্রয়োজন। অনেক প্রোগ্রামে চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারেন, যদি তারা অধ্যয়ন/প্রত্যাশিত স্নাতক উত্তীর্ণ হওয়ার প্রমাণ দিতে পারে।
ইংরেজি দক্ষতা বাধ্যতামূলক। যে প্রোগ্রামে যে ধরনের দক্ষতা গ্রহণ করে সেই অনুযায়ী দিতে হবে। এক্ষেত্রে আইইএলটিএস (ন্যূনতম ৬.৫), টোয়েফেল, ডুয়োলিঙ্গ বা এমওআই যে কোনোটা হতে পারে। অনেক প্রোগ্রামে এমওআই থাকলেই আবেদন করা যায়, আইইএলটিএস বাধ্যতামূলক নয়।
সিজিপিএ নিয়ে কোনো কঠোর নিয়ম নেই। পুরো নির্বাচনের মূল ভিত্তি হলো- অভিজ্ঞতা, লক্ষ্য, ব্যক্তিগত অনুপ্রেরণা, প্রোগ্রামের সঙ্গে সামঞ্জস্য, একাডেমিক বা পেশাগত সংযোগ, গবেষণা বা প্রকল্প অভিজ্ঞতা এবং সহপাঠ্য কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা। তাই মাঝারি সিজিপিএর শিক্ষার্থীরাও চমৎকারভাবে নির্বাচিত হতে পারেন।
যেসব কাগজপত্র লাগবে
একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও ডিগ্রির সনদ
পাসপোর্ট/ন্যাশনাল আইডি
ইউরোপাস ধাঁচের সিভি
মোটিভেশন লেটার/স্টেটমেন্ট অব পারপাস
দুটি রিকমেন্ডেশন লেটার (শিক্ষক/সুপারভাইজার)
ইংরেজি দক্ষতার সনদ (আইইএলটিএস/টোফেল/এমওআই)
আবাসনের প্রমাণ/জাতীয়তার প্রমাণ (কিছু প্রোগ্রামে প্রয়োজন হয়)
আবেদন প্রক্রিয়া
বাংলাদেশ থেকে এরাসমুস মুন্ডুসে আবেদন করতে প্রথমে অফিসিয়াল ক্যাটালগ ঘেঁটে ও বিশ্বস্ত স্কলারশিপ প্ল্যাটফর্ম দেখে প্রোগ্রামগুলো খুঁজে বের করুন। নিজের ব্যাকগ্রাউন্ড ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের সঙ্গে মিল রেখে ৩-৫টি প্রোগ্রাম বাছাই করুন। প্রতিটি প্রোগ্রামের কারিকুলাম, ভাষাগত শর্ত, শেষ সময়সীমা ও ফান্ডিং বিষয়ক তথ্য ভালোভাবে যাচাই করুন। তারপর প্রয়োজনীয় নথি প্রস্তুত করুন। প্রয়োজন হলে আগে থেকেই ইংরেজি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করুন।
সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ অফিসিয়াল পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন জমা দিন। আবেদন জমা দেওয়ার পর ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করুন। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হলে অনেক প্রোগ্রামের জন্য সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। নির্বাচিত হলে অফার গ্রহণ করে ভিসা ও ভ্রমণপ্রস্তুতি শুরু করতে হবে।
সাধারণ সময়সীমা
বেশিরভাগ ইরাসমাস মুন্ডাস আবেদন শেষ সময় অক্টোবর থেকে জানুয়ারির মধ্যে। কিছু প্রোগ্রাম ডিসেম্বরেই শেষ হয়ে যায়, কিছু আবার ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত খোলা থাকে। তাই রেকমেন্ডেশন লেটার, ভাষা পরীক্ষার ফল, ট্রান্সক্রিপ্ট- সবকিছুই সময় নিয়ে করতে হয়। সবচেয়ে ভালো হলো- ডেডলাইনের অন্তত ৩–৪ মাস আগে প্রস্তুতি নেওয়া।
আবেদন শক্তিশালী করার কিছু টিপস
মোটিভেশন লেটারকে নির্দিষ্ট প্রোগ্রামের কারিকুলাম ও লক্ষ্য অনুযায়ী সাজান
অভিজ্ঞতা তথা ইন্টার্নশিপ, গবেষণা, স্বেচ্ছাসেবা সব প্রাসঙ্গিক তথ্য দিন
সিভি সংক্ষিপ্ত ও ফোকাসড রাখুন
অ্যালামনাই বা বর্তমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন
ডকুমেন্ট সংগ্রহ ও ভাষা পরীক্ষার প্রস্তুতি ২-৩ মাস আগে শুরু করুন
আত্মবিশ্বাসী হোন, কিন্তু অতিরঞ্জিত নয়- নিজের বাস্তব লক্ষ্য পরিষ্কারভাবে তুলে ধরুন
শেষ কথা
ইরাসমাস মুন্ডাস এমন একটি সুযোগ, যা পূর্ণ অর্থায়নে একাধিক দেশে পড়াশোনার পথ খুলে দেয় ও ক্যারিয়ার, নেটওয়ার্কিং থেকে শুরু করে বসবাস- সবক্ষেত্রেই বহুমাত্রিক সুবিধা দেয়। সঠিক পরিকল্পনা, সত্যিকারের প্রেরণা ও সময়মতো প্রস্তুতি থাকলে বাংলাদেশসহ যেকোনো দেশের শিক্ষার্থী এই প্রতিযোগিতামূলক স্কলারশিপে সফল হতে পারেন; সিজিপিএ যেমনই হোক, আর্থিক অবস্থা যাই হোক।
সূত্র: ইউএনবি
এসএএইচ