মোবাইল ফোনের বাজারে চীনের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করতে চায় ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৫৫ পিএম, ১৫ জানুয়ারি ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত

বলতে গেলে ভারতসহ এশিয়ার অধিকাংশ দেশের মোবাইল ফোনের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে একচেটিয়া আধিপত্য ধরে রেখেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন। ‍শুধু মোবাইল নয়, প্রযুক্তির বিশ্ববাজারেই বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে দেশটির। তবে সম্প্রতি চীনের মোবাইলে ফোনের বাজারে ভাগ বসানোর পরিকল্পনা করছে ভারত।

আরও পড়ুন: চীন-ভারত: সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে?

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতে বিক্রি হওয়া সব ধরনের মোবাইল ফোনের ৬০ শতাংশ বা তারও বেশি হলো চীনা। তাই চীনের এ বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হলে ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

jagonews24

এদিকে, ভারতীয় কোম্পানিগুলো আশা করছে, অদূর ভবিষ্যতে তারা নিজ দেশেই বিশ্বমানের মোবাইল ফোন শিল্প গড়ে তুলতে পারবে। যার মাধ্যমে চীনা মোবাইল ফোন নির্মাণকারী কোম্পানিগুলোকে টেক্কা দেওয়া সহজ হবে।

মুম্বাইয়ের একটি মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন দীপা আসওয়ানি। নতুন একটি স্মার্টফোন কেনা তার কাছে নতুন মিশনের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। একটি মোবাইল ফোন কেনার আগে সবদিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

বিবিসিকে দীপা বলেন, মোবাইল ফোন কেনার আগে কোন কোম্পানিরটা কিনবো, তা নিয়ে অনেকবার চিন্তা-ভাবনা করি। একটি ফোনের জন্য খুব বেশি পয়সা খরচ করার কোনো যৌক্তিকতা দেখি না। আমি সাধ্যের মধ্যে এমন একটা স্মার্টফোন চাই, যাতে ভালো ভালো সব ফিচার থাকবে।

আরও পড়ুন: ২০২২ সালে প্রযুক্তি জগতে যত আলোচিত ঘটনা

দুমাস ধরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দীপা ‘ওয়ানপ্লাস টেন-আর’ মোবাইল ফোনটি কেনেন, যার দাম পড়ে ৪০০ ডলার বা প্রায় সাড়ে ৩২ হাজার রুপি। ভারতের বাজারে বিক্রি হওয়া অধিকাংশ মোবাইল ফোনের মতো দীপার ওয়ানপ্লাস ফোনটিও চীনে তৈরি হওয়া।

ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের হিসাবে ৩২ হাজার রুপির অংকটি বেশ বড়। তবে দীপার সাধ্যের সঙ্গে মিল খাওয়ায় ও স্মার্ট ফোনটিতে আধুনিক সব ফিচার থাকায় এটি নিয়ে সন্তুষ্ট দীপা।

ভারতে চীনা মোবাইল ফোনের বাজার:

এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, ২০২২ সালে ভারতে যত মোবাইল ফোন বিক্রি হয়েছে তার ৬০ শতাংশই চীনে তৈরি। কিন্তু এ সংখ্যা ২০২১ সালে তুলনায় চার শতাংশ কম, যা ছিল ৬৪ শতাংশ। অনেকের দাবি, ভারতে চীনা মোবাইল ফোন বিক্রির পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণ হলো, ভারতীয় কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতা শুরু করেছে।

ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ভারত কি টিকে থাকতে পারবে?

ভারতের বাজারে চীনা মোবাইল ফোনের আধিপত্যকে যেসব কোম্পানি চ্যালেঞ্জ করছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো মাইক্রোম্যাক্স ইনফরমেটিক্স। তারা ২০০৮ সালে মোবাইল ফোনের বাজারে প্রবেশ করে ও ২০১০ সালের মধ্যে ফিচার ফোন তৈরিতে ভারতের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানিতে পরিণত হয়।

তবে এমন সফলতার পরও মাইক্রোম্যাক্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রাজেশ আগরওয়াল বলেন, চীনা স্মার্টফোন নির্মাতাদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়াটা খুবই কঠিন। এর একটি বড় কারণ হলো, তারা আমাদের অনেক আগে থেকে বাজারে এসেছে ও তাদের মোবাইলে ফোনের দাম সব শ্রেণির মানুষের নাগালের মধ্যে।

jagonews24

তাছাড়া, চীনা কোম্পানিগুলোর উৎপাদন ব্যবস্থা খুবই শক্তিশালী। পাশাপাশি তারা অধিকাংশ প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ স্থানীয় উৎস থেকে সংগ্রহ করতে পারে, কিন্তু আমরা এখনো সে সামর্থ্য অর্জন করতে পারিনি।

মূল সমস্যা হলো, ভারতে মোবাইল ফোনের চার্জার, কেবল ও ব্যাটারির মতো কিছু যন্ত্রাংশ তৈরি হয়, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ চিপস বা স্ক্রিনের মতো সূক্ষ্ম ও জটিল যন্ত্রাংশগুলো বিদেশ থেকে আনতে হয়।

মোবাইলের ‘রেডিয়েশন ঠেকাতে’ ভারতে এবার গোবরের তৈরি চিপ

‘আমরা কেবলমাত্র বিশাল এ বাজারে প্রবেশ করতে শুরু করেছি। ধীরে ধীরে আমাদেরও সব যন্ত্রাংশ নিজ দেশেই তৈরি করতে হবে। তাছাড়া শুধু অভ্যন্তরীণ চাহিদা নয়; মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য তথ্য ও যোগাযোগ (আইসিটি) প্রযুক্তির বিশ্ববাজারেও আমাদের প্রবেশ করতে হবে।’

রাজেশ আরও বলেন, আমরা যখন একটি নতুন মোবাইল ফোন বাজারে ছাড়ি তখন আমাদের আশা থাকে, প্রায় ১০ লাখ ইউনিট বিক্রি হবে। কিন্তু কোনো চীনা কোম্পানি যখন নতুন কোনো মোবাইল ফোন বাজারে নিয়ে আসে, তখন আমাদের ১০ গুণ ইউনিট বিক্রি হয়। আর এর কারণেই তারা ফোনের দাম মানুষের সাধ্যের মধ্যে রাখতে পারে।

এরই মধ্যে ‍উদ্যোগ নিয়েছে ভারত সরকার:

জানা যায়, চীনা মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে টেক্কা দিতে ২০২১ সালের এপ্রিলে একটি উদ্যোগ নেয় ভারতীয় সরকার। প্রোডাকশন লিংকড ইনসেন্টিভ বা পিএলআই নামের ওই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো, ভারতে আইসিটি প্রযুক্তির উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি টেলিকম ও নেটওয়ার্কিং যন্ত্রপাতি তৈরি করা।

পিএলআই প্রকল্পের আওতায় মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ ভারতে তৈরি করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে একটি ভারতীয় মোবাইল ফোনের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ যন্ত্রাংশ ভারতে তৈরি হচ্ছে। পিএলআইয়ের লক্ষ্য এ পরিমাণ ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত করা।

দেশটির সেলুলার অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স সমিতির (আইসিইএ) চেয়ারম্যান পংকজ মহিন্দ্রু বলেন, ভারতে মোবাইল ফোন উৎপাদন এখন আগের থেকে অনেক দ্রুতগতিতে বাড়ছে। কিছু কিছু কোম্পানি বিশ্ববাজারে বেশ ভালোও করছে।

যে কারণে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হচ্ছে ভারত

ভারতের মোবাইল ফোন নির্মাকারী কোম্পানি লাভা ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান হরি ওম রাই বলন, আগামীতে মোবাইল ফোন উৎপাদনের আন্তর্জাতিক কেন্দ্রে পরিণত হবে ভারত।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের কিছু বড় বড় মোবাইল ফোন ও যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান চীনা পণ্যের ওপর অধিক নির্ভরশীল হওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে। তার কথায়, এসব প্রতিষ্ঠান যদি অন্য কোনো দেশের সঙ্গে চুক্তি করে, তাহলে ভারতের চেয়ে আকর্ষণীয় ও উপযুক্ত বিকল্প আর হবে না।

সূত্র: বিবিসি

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।