কাউকে পাশে পাচ্ছেন না মমতা
সারদা কেলেঙ্কারিতে গত শুক্রবার গ্রেফতার হন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডান হাত বলে পরিচিত পরিবহনমন্ত্রী মদন মিত্র। এতে কোণঠাসা হয়ে এখন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে পাল্টা তোপ দাগানো শুরু করেছেন মমতা। এ নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বদলে যেতে শুরু করেছে অনেক হিসাব-নিকাশ। ঘোর দুর্দিনে কাউকেই পাশে পাচ্ছেন না মমতা। তাকে গ্রেফতারের দাবিতে মাঠে নেমেছে রাজ্যের বামরা। গতকালই মদন গ্রেফতারের প্রতিবাদে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেন মমতা। খবর : এবিপি আনন্দ, এনডিটিভি ও ডিএনএ।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সারদাকাণ্ডে মদন মিত্র গ্রেফতারের পর কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার যে লক্ষণ দেখা দিচ্ছিল, তা বিঘি্নত হতে পারে। শনিবার কলকাতার আদালতে মদন বলেছেন, দিলি্ল থেকে নির্দেশ পেয়েই তাকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। তিনি নিজেকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার বলেও দাবি করেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে মোদি সরকারকে সম্মতি দেন দীর্ঘদিন ধরে আপত্তি জানানো মমতা। বিভিন্ন সভায় কেন্দ্রকে সহযোগিতা করার কথাও বলছিলেন তিনি।
আবার বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের সঙ্গে কেন্দ্রে ধর্মনিরপেক্ষ জোট গড়ারও তোড়জোড় করছিলেন তিনি। সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে রাজ্যে বিজেপির উত্থান, বর্ধমানে জঙ্গিদের আস্তানায় বিস্ফোরণের মতো ঘটনায় বেকায়দায় পড়া মমতা সব কুল রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। রাজ্যে বিজেপিকে ঠেকাতে কংগ্রেস, বাম, তৃণমূল একজোট হওয়ার একটা আভাস দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু সখ্যের হাত বাড়ানো কংগ্রেসও তার বিপদে পুরো নীরব। বামরা নেমেছে মমতার গ্রেপ্তারের দাবিতে। তৃণমূল সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন, মদন গ্রেফতারের পর থলের বেড়াল বেরিয়ে আসার আশঙ্কাতেই এমন ক্ষেপেছেন মমতা। ফলে এখন তার পাল্টা আক্রমণ কেন্দ্র কীভাবে মোকাবেলা করে, তার ওপর নির্ভর করছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির অনেক কিছুই।
গতকালই দলীয় বৈঠকে বসে লাগাতার আন্দোলনের রূপরেখা নির্ধারণ করেন মমতা। আজ সোমবার লোকসভায় বিক্ষোভ করবেন দলটির সাংসদরা। একই দিনে কলকাতায় হবে মহামিছিল। এ ছাড়া প্রতিদিন গোষ্ঠ পালের মূর্তির নিচে অবস্থান ধর্মঘটও করবে তৃণমূল। এ আন্দোলনে বিভিন্ন দাবির সঙ্গে সাহারা শিল্পগোষ্ঠীর কেলেঙ্কারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যোগ রয়েছে বলেও অভিযোগ প্রচার করবে তৃণমূল।
সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে বেশ ক`জন সাংসদ ও নেতার পর গ্রেফতার হলেন কোনো মন্ত্রী। কেলেঙ্কারি তদন্তে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই নামার পর থেকেই সারদার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের বিভিন্ন যোগসূত্র বেরিয়ে আসছিল। মদন মিত্রকে সিবিআই তলব করার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন মোড় দেখা দেয়। রাস্তায় মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি সমাবেশে `কে হরিদাস, আমাকে বাম্বু দাও` ধরনের অশ্লীল মন্তব্য করে আক্রোশ প্রকাশ করেন মমতা। এই `হরিদাস` ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শনিবার এক সভায় ভারতের আরেক আর্থিক কেলেঙ্কারি ঘটান প্রতিষ্ঠান সাহারা গ্রুপের সুব্রত রায়ের সঙ্গে মোদির সম্পর্ক আছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতারের দাবি তোলেন মমতা।