শওকত মাহমুদ
জেলে চিকিৎসাহীন কষ্টে আছি, রিমান্ডে নিলে জীবনের ঝুঁকি বাড়বে
রমনা মডেল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় রিমান্ড শুনানিতে নিজের অবস্থান ও শারীরিক দুরবস্থার কথা তুলে ধরে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা খন্দকার আন্না।
আদালতে কথা বলার অনুমতি পেয়ে তিনি জানান, ৩৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে তিনি পাঁচবার প্রেস ক্লাবের সভাপতি, ছয়বার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন মতবিরোধ ও বিচ্ছেদ থাকলেও পরিচিত কারও অপকর্মের দায় নিজের ওপর বর্তানো যায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নিজের শারীরিক অবস্থার কথা তুলে ধরে শওকত মাহমুদ বলেন, আমার ছয়টা বাইপাস সার্জারি হয়েছে। প্রতিদিন পাঁচবার ইনসুলিন নিতে হয়। জেলে চিকিৎসা ছাড়া কষ্টে আছি। এই অবস্থায় আমাকে রিমান্ডে নিলে জীবনের ঝুঁকি বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, অতীতে বিভিন্ন সরকারের সময় কারাবরণ করেছি, অসংখ্য মামলার মুখোমুখি হয়েছি। যে সরকার বহু মামলা প্রত্যাহার করেছে, সেই সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবো- এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়।
রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ, শওকত মাহমুদ বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগসাজশে সরকারবিরোধী অস্থিরতা তৈরির পরিকল্পনায় জড়িত থাকতে পারেন। এই অভিযোগ তদন্তে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি বলে উল্লেখ করে তারা ১০ দিনের রিমান্ড চান।
অন্যদিকে, তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিলের আবেদন করে বলেন, গুরুতর অসুস্থ একজন প্রবীণ সাংবাদিককে রিমান্ডে নিলে তিনি অতিরিক্ত ভোগান্তির শিকার হবেন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড বাতিলের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এই মামলায় এরইমধ্যে মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীসহ আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
পুলিশের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, শওকত মাহমুদ এনায়েত করিম চৌধুরীর সঙ্গে যোগসাজশে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনা, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষে কাজ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করছিলেন। কোন কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের সঙ্গে তিনি ‘শলাপরামর্শ’ করেছেন, তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি।
এনায়েত করিমকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিন্টো রোড থেকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজেকে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার চুক্তিভিত্তিক এজেন্ট দাবি করেন এবং দেশে এসে সরকার পরিবর্তনের পরিকল্পনার কথা জানান। তার কাছে থাকা দুইটি ফোন জব্দ করে তাতে সরকারের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ তথ্য পাওয়ার দাবি করে পুলিশ।
মামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে আরও চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন, এস এম গোলাম মোস্তফা আজাদ, জাতীয় পার্টির রওশনপন্থি অংশের মহাসচিব কাজী মো. মামুনুর রশীদ, সাংবাদিক মো. আজহার আলী সরকার এবং যুব সংহতির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব রিফাতুল ইসলাম পাভেল। তাদের সবাই বর্তমানে কারাগারে।
এমডিএএ/এএমএ/এমএস