‘মন্ত্রিত্ব করেন কিন্তু দালালি করবেন না’
আইনজীবীদের উদ্দেশে সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘আমি সারাজীবন দল করেছি, মন্ত্রী হয়েছি কিন্তু কখনও সুপ্রিম কোর্টে এসে দলীয় পরিচয় দেইনি। আপনারা মন্ত্রিত্ব করেন কিন্তু দালালি করবেন না। আত্মসম্মানবোধ রেখে যে অর্থ উপার্জন করা যায় সেটাই আইন পেশার বৈশিষ্ট্য।’
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনাতনে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও বিরাজমান পরিস্থিতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. কামাল বলেন, সুপ্রিম কোর্ট কোনো বিশেষ ব্যক্তির নয়, জনগণের। সংবিধানকে সমুন্নত রাখা এবং দেশের ১৬ কোটি জনগণের অধিকার রক্ষার জন্যই এই সুপ্রিম কোর্টের সৃষ্টি। এই সুপ্রিম কোর্ট ও সংবিধানকে যারা ধ্বংসের চেষ্টা করছেন জনগণ তাদের ক্ষমা করবেন না।
তিনি বলেন, দলীয় পরিচয় দিয়ে আইনজীবী কোর্টে ঘুরে বেড়ায় সে রোগে আক্রান্ত না হওয়াই ভাল। বিচারক ও সরকারি কৌসুলি হওয়ার জন্য কি দলের দালালি করতে হবে? বিবেক ও চিন্তা শক্তির ওপর নির্ভর করে আইন পেশা পরিচালনা করুন। যদি তা না পারেন তাহলে এ পেশা ছেড়ে দিন। এ পেশায় থেকে জাতির পিতা থেকে শুরু করে অসংখ্য লোককে আইনি সাহায্য দিয়েছি, কখনও প্রতিদান চাইনি।
তিনি আরো বলেন, কিছু কিছু জজ যদি কুকর্ম করে থাকে তাদের হাত থেকে বিচার বিভাগ ও সংবিধানকে রক্ষা করতে হবে।
ড. কামাল বলেন, অনেক আইনজীবী আছেন যারা কোটি টাকা নিয়ে জামিন এনে দেন তারা আইনজীবী নয়, তারা ভাগাড়।
হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের প্রশ্ন যখন আসবে তখন আইনজীবীদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে সবকিছুই অর্জন করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, আমি বারের সম্পাদক ছিলাম তখন বারের সদস্য ছিল আড়াই হাজার। এরপর ১৫ বছর জজিয়তি করেছি। এখন বারের সদস্য সাড়ে ৬ হাজার। এটা উৎসাহজনক।
তিনি আরো বলেন, এই সুপ্রিম কোর্টে আপনারা (আইনজীবী) আছেন, থাকবেন। আপনারাই ন্যায় বিচার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মশাল তুলে ধরবেন। আর এর জন্য শর্ত একটাই আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বিচারপতি নজরুল বলেন, ১৫ বছর যখন হাইকোর্টের বিচারক ছিলাম তখন কেউ কখনও অন্যায় অনুরোধ নিয়ে আমার সামনে আসেননি। কারণ জানেন অনুরোধ করলে উল্টো ফল হবে।
হাইকোর্টের বিচারক নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে নিমগাছ থেকে ফজলি আম আশা করা বাতুলতা মাত্র। ফজলি গাছ রোপণ করেন তাহলে ফজলি আমই পাবেন।
আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই নীতিমালা করার জন্য আপনাদের সোচ্চার হতে হবে। প্রয়োজনে আন্দোলন করতে হবে। আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে এটা অর্জন করা অবশ্যই সম্ভব।
এফএইচ/এসএইচএস/এবিএস