কোর্ট ফি ও স্ট্যাম্প সংকট, ব্যবস্থা নিতে গভর্নরকে চিঠি

দেশের সব আদালতে জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ। তবে, বেশ কিছু দিন ধরে সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব আদালতে স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি'র সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থার উত্তরণে জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ ব্যবস্থায় স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি সরবরাহ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার (বিচার) এস কে তোফায়েল হাসানের সই করা চিঠিতে সুপ্রিম কোর্টসহ অধস্তন সব আদালত ও ট্রাইব্যুনালে স্ট্যাম্প, কার্টিজ পেপার, কোর্ট ফি ও ফলিওর স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে বিচার বিভাগ অন্যতম। সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগ এবং দেশের ৬৪টি জেলার অধস্তন আদালতে প্রতি কার্যদিবসে বিচারপ্রার্থী জনগণের পক্ষে মামলা দায়েরসহ অন্যান্য দরখাস্ত দাখিলের সময় জুডিসিয়াল ও নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি সংযুক্ত করতে হয়। আদালতে দাখিল করা স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফির মাধ্যমে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেয়ে থাকে। জুডিসিয়াল ও নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প জালিয়াতির কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হতে বঞ্চিত হচ্ছিল।
নকল স্ট্যাম্প ও কোর্ট কি শনাক্তকরণের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সুপ্রিম কোর্ট, ডাক বিভাগ, সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন বাংলাদেশ লিমিটেড (এসপিসিবিএল), ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট ও পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে কিছু স্বল্পমেয়াদি ও কিছু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আইসিডি ইউভি এলইডি ফ্ল্যাশ লাইট (ইউভি-৩৬৫ এনএম) ডিভাইস ব্যবহার করে নকল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি শনাক্তকরণের নিমিত্ত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট অধস্তন আদালতের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি/সম্পাদকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে এবং অধস্তন আদালতে আইসিডি ইউভি এলইডি ফ্ল্যাশ লাইট (ইউভি-৩৬৫ এনএম) ডিভাইস বিতরণ করে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং দেশের ৬৪টি জেলায় স্ট্যাম্প, কার্টিজ পেপার, কোর্ট ফি ও ফলিওর সংকট বিরাজ করছে। বিচারপ্রার্থীদের বাধ্য হয়ে কয়েক গুণ বেশি দামে ভেন্ডরদের কাছ থেকে এসব কিনতে হচ্ছে। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
ভেন্ডরদের অভিযোগ, ট্রেজারিতে স্ট্যাম্প, কার্টিজ পেপার, কোর্ট ফি ও ফলিও এর সংকট থাকায় ট্রেজারি শাখা থেকে চাহিদামত স্ট্যাম্প, কার্টিজ পেপার, কোর্ট ফি ও ফলিওর সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টসহ অধস্তন সকল আদালত ও ট্রাইব্যুনালে স্ট্যাম্প, কার্টিজ পেপার, কোর্ট ফি ও ফলিওর স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশক্রমে আপনাকে অনুরোধ করা হলো।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী জাগো নিউজকে বলেন, ‘জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফির সংকটের বিষয়টি আমরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মহোদয়কে জানিয়েছি। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্টদের জরুরি ভিত্তিতে জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি সরবরাহ করতে বলেছেন। আমরা প্রধান বিচারপতির নির্দেশনার কথা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও আইন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। আশা করছি, দ্রুতই এ সংকট কেটে যাবে।’
যদিও গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের প্রায় সব আদালতে জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি সংকটের কথা জানিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে সুপ্রিম কোর্টে একের পর এক চিঠি আসছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন বিচারপ্রার্থীরা।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ সংকটের নেপথ্যে সিন্ডিকেটের কারসাজি থাকতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি সরবরাহ করতে গভর্নরকে চিঠি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
এফএইচ/এমএএইচ/