স্মৃতিগদ্য

পদতলে নুয়ে শ্রদ্ধা

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৩৩ পিএম, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

আশরাফুল ইসলাম আকাশ

সবেমাত্র নবম শ্রেণিতে উঠেছি। জানুয়ারি মাস চলছে। শ্রেণিকক্ষ এখনো জমে ওঠেনি। এর মধ্যেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমালেন আমার বাবা। তার ইহলোক ত্যাগের প্রভাব সরাসরি পড়লো আমার পড়াশোনায়। বড় ভাই-বোনের সহযোগিতায় কোনোমতে স্কুলের বেতন পরিশোধ করতে পারছি। কিন্তু মাস শেষে প্রাইভেট টিউশন ফি পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এভাবে ছয় মাস কেটে গেল।

সময়ের সাথে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে থাকলো। যেন আমার চারপাশ ঘন-কালো অন্ধকার হতে শুরু করেছে। আর কিছুতেই সম্ভব নয়। বিদ্যালয়ের বেতন পরিশোধেও টানাপোড়েন দেখা দিলো। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালা যে, স্বপ্নের পড়ালেখাই এখন বন্ধ হওয়ার পথে। এমন দুঃসময়ে দেবদূত হয়ে এলেন আমার বিদ্যাপিঠের কয়েকজন মহান শিক্ষাগুরু। যাদের অসামান্য সহযোগিতা আজকের এই পথে এনে দাঁড় করিয়েছে। নিজ হাতে মশাল জ্বালিয়ে আমাকে দেখিয়েছেন আলোর দিশা। আজকের যে জ্ঞান, দক্ষতা আর অর্জন তার প্রতিটি ক্ষেত্রেই আছে তাঁদের অবদান।

বাবার মৃত্যুর পর সবার আগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন শ্রী উত্তম কুমার। বাণিজ্য বিভাগে পড়ার সুবাদে তাঁর বাাড়িতে হিসাববিজ্ঞানের পাঠ নিতাম। তবে মাসের বেতন ৪০০ টাকা পরিশোধ করা আমার পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। স্যার আমার পারিবারিক জটিলতা জানতেন এবং অনুধাবন করতেন। অন্ধকারচ্ছন্ন দিনগুলোয় দেবদূতের ভূমিকায় হাজির হলেন তিনি। মওকুফ করলেন তাঁর মাসিক পারিশ্রমিক। বিনিময়ে আমার কাছে চাইলেন, যেন মানুষের মতো মানুষ হতে পারি। তাঁর ত্যাগকে সম্মান করি।

আরও পড়ুন
লাল শাড়ি ও রাতের গল্প
আয়েশা সিদ্দিকার গল্প: প্লান্টোফাইল

বছর ছয়েক হলো পড়ালেখার পাঠ চুকিয়েছি। এখন কর্মজীবনে প্রবেশ করেছি। সুযোগ হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফোন করে এখনো নিজ সন্তানের মতো শরীরের খোঁজ-খবর নেন উত্তম স্যার। খবর রাখেন পরিবারের সদস্যদের ভালো-মন্দ। নিয়মিত উপদেশ দিয়ে যান এখনো। স্যারের থেকে বিনা স্বার্থের এই ভালোবাসা আমাকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করে। তাঁর ঋণ কখনো শোধ করার মতো নয়।

শুধু উত্তম স্যারই নন, আমার জীবনের আলোকবর্তিকা হয়ে এসেছিলেন গণিত শিক্ষক হায়দার আলী, বাংলার শ্রী নন্দ কৃষ্ণ রয় এবং শ্রী গজেন্দ্র রায়ের মতো শিক্ষাজনেরা। জীবনের টার্নিং পয়েন্ট খ্যাত নবম-দশম শ্রেণিতে তাঁরা আমাকে অসীম সহযোগিতা করেছেন। কেউ নেননি মাসের পর মাস বেতন, কেউ অর্ধেক কমিয়ে কেউবা আমার দেওয়া মাসিক বেতন দিয়ে আমাকেই শিক্ষা উপকরণ কিনে দিয়েছেন।

আমার এ শিক্ষকদের চাওয়া একটাই ছিল, যেন আমি তাঁদের এতটুকু ত্যাগকে বিসর্জন না দিই। জীবনযুদ্ধে হেরে না যাই। আজ বলতে চাই, হেরে যাইনি স্যার, জীবনকে উপলব্ধি করেছি। আপনাদের ছোট আকাশ হয়ে প্রতিনিয়তই স্বপ্নের পিছু ছুটছি। পদতলে নুয়ে আপনাদের জানাই শ্রদ্ধা। সুযোগ এলে আবারও ফিরতে চাই আপনাদের শাসনের বাহুডোরে, বেতের বাড়ি কিংবা স্নেহমাখা ভালোবাসা নিতে। আরেকবার জন্ম নিলে আপনাদের ছাত্র হয়ে পৃথিবীতে আসতে চাই।

লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, বগুড়া করোনেশন ইনস্টিটিউশন।

এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।