এমএসএফের প্রতিবেদন
আগস্টে গণপিটুনিতে হত্যার সংখ্যা বেড়েছে
আগস্ট মাসে ৩৮টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। জুলাই মাসে এই সংখ্যা ছিল ৫১টি। গণপিটুনিতে আগস্টে ২৩ জন নিহত হয়েছেন আর ৪৩ জন গুরুতর আহত হন। জুলাই মাসে নিহতের সংখ্যা ছিল ১৬।
মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) আগস্ট মাসের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। রোববার (৩১ আগস্ট) এমএসএফের গণমাধ্যমে এই প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজেদের তথ্যানুসন্ধানে এই প্রতিবেদন তৈরি করে সংস্থাটি।
আরও পড়ুন:
- নাটোরে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে একজন নিহত
- ২০২৪ সালে গণপিটুনিতে নিহত ১২৮ জন: আসক
- ৩২ নম্বরে ফুল দিতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার সেই রিকশাচালকের জামিন
নিহতদের মধ্যে ১০ জনকে চুরির অভিযোগ, ৪ জনকে সন্দেহজনক চুরির অভিযোগ, ৩ জনকে ডাকাতির অভিযোগ, ১ নারীসহ ২ জনকে পূর্বশত্রুতার জেরে, ১ জন মাদক মামলায় অভিযুক্ত, ২ জনকে ছিনতাইয়ের অভিযোগ ও ১ জনকে চাঁদাবাজির অভিযোগে হত্যার ঘটনা ঘটে।
সাংবাদিকদের নির্যাতন
আগস্ট মাসে দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ৩৩টি ঘটনায় ৯৬ জন সাংবাদিক হামলা, হয়রানি, হুমকি, হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আগস্টে আক্রান্ত সাংবাদিকদের সংখ্যা জুলাই মাসের তুলনায় প্রায় তিন গুণ। আর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে জুলাইয়ের প্রায় দ্বিগুণ।
আরও পড়ুন-
- সাংবাদিকদের ওপর হামলায় ডিআরইউয়ের নিন্দা ও প্রতিবাদ
- আরেকজনকে কোপানোর ভিডিও ধারণ করায় খুন হন সাংবাদিক তুহিন
এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্ট মাসে আক্রান্ত সাংবাদিকদের মধ্যে ১ জন হত্যা এবং ৩৬ জন সাংবাদিক আইনি হয়রানির শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১ জন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২৩ জন সাংবাদিক তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আহত ও হামলার শিকার হয়েছেন। লাঞ্ছনা ও হুমকির শিকার হয়েছেন ১৬ জন সাংবাদিক এবং ২০ জন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে হত্যা, চাঁদাবাজি ও মানহানির মামলা।
রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা
আগস্ট মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। তাদের মধ্যে দুজন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৪ জন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী-সমর্থক। সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ এবং সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
সহিংসতার ৩৮টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বে ২৩টি, বিএনপি-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ৫টি, এনসিপি-আওয়ামী লীগ দ্বন্দ্বে ২টি, বিএনপি-এনসিপি দ্বন্দ্বে ১টি, বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষে ২টি, আওয়ামী লীগ-জামায়াত সংঘর্ষে ১টি, আওয়ামী লীগ-গণপরিষদ ১টি, জাতীয় পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদের সংঘর্ষের ২টি, গণ অধিকার পরিষদ-পুলিশের ১টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
কারা হেফাজতে মৃত্যু
আগস্ট মাসে কারা হেফাজতে মৃত্যু কমেনি। এমএসএফের তথ্য বলছে, আগস্টে কারা হেফাজতে মোট ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এর সংখ্যা ছিল ১০। এ মাসে ৩ জন কয়েদি ও ৭ জন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন-
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৩ জন হাজতি, ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে ১ জন হাজতি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে ১ জন হাজতি, কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে ১ জন হাজতি, নড়াইল কারাগারে ১ জন হাজতি এবং রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার, রাঙামাটি জেলা কারাগার ও শরীয়তপুর জেলা কারাগারে একজন করে কয়েদি মারা যান।
সংখ্যালঘু নির্যাতন
এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে বিভিন্ন পর্যায়ে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ১০টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট ২টি, ধর্ষণের ১টি, জমি দখলের ঘটনা ১টি, ১টি গুজব এবং ৩টি ঘটনায় কটূক্তির অভিযোগে ৩ জন যুবককে গ্রেফতার করা হয়।
নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা
এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে ৩৪৯টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, যা গত মাসের তুলনায় ৩টি কম। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ৪৭টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৯টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৪টি। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৯ জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী।
আরও পড়ুন-
ধর্ষণের শিকার ৪৭ জনের মধ্যে ১১ জন শিশু, ১৭ জন কিশোরী, অন্যদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ৬ জন কিশোরী ও ৯ জন নারী এবং ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয় ২ জন শিশু ও ১ জন কিশোরী। ধর্ষণের চেষ্টা ২৪টি, যৌন হয়রানি ২১টি, শারীরিক নির্যাতনের ৯৪টি ঘটনা ঘটে।
এসএম/এসএনআর/এমএস