ডেইলি স্টারে আগুনে আর্কাইভ নষ্ট, কান্নায় ভেঙে পড়লেন ফটোসাংবাদিক
দৈনিক ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় ভবনটির নিচের তিন তলা অনেকাংশ পুড়ে যায়, আর ওপরের সাত তলা পর্যন্ত প্রত্যেক ফ্লোরে দেখা যায় ভাঙচুরের চিহ্ন।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে নিজের প্রিয় কর্মস্থলের এই চিত্র দেখে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি ডেইলি স্টারের ফটোসাংবাদিক প্রবীর দাশ। অন্য দিনের মতো অফিসে এলেও তার হাতে ছিল না ক্যামেরা কিংবা লেন্স। বরং সহকর্মীরাই ক্যামেরাবন্দি করছিলেন তার নিঃস্ব হয়ে পড়ার মুহূর্তগুলো। কেউ কেউ তাকে সান্ত্বনাও দেন।
প্রবীর দাশ জাগো নিউজকে জানান, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে তার বহু বছরের পেশাগত জীবনের অমূল্য স্মৃতি ধ্বংস হয়ে গেছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার স্বপ্ন শেষ। আমার ড্রয়ারে যা ছিল এখন কিছুই নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ক্যামেরা, লেন্স ও আনুষঙ্গিক মিলিয়ে একেকজন ফটোসাংবাদিকের ড্রয়ারে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার জিনিস থাকে। আমার সব স্মৃতি—এত বছরের ক্যারিয়ারের তোলা ছবি, চার-পাঁচটি হার্ডড্রাইভ—সব পুড়ে গেছে।’
শুধু প্রবীর দাশ নন, ডেইলি স্টার ভবনের সামনে জড়ো হওয়া প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ কর্মীকেই প্রিয় কর্মস্থলের পুড়ে যাওয়া ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে হাহাকার করতে দেখা যায়।
ডেইলি স্টারের প্রধান ফটোসাংবাদিক জাগো নিউজকে জানান, তাদের বিভাগের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। তিনি বলেন, ‘ক্যামেরা, লেন্সসহ কিছুই নেই। একটি লেন্সের দামই কয়েক লাখ টাকা। আমাদের সব শেষ।’
ডেইলি স্টারের অনুমতিতে কয়েকজন সাংবাদিক ভবনটি ঘুরে দেখেন। তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গ্রাউন্ড ফ্লোর, ফার্স্ট ফ্লোর ও সেকেন্ড ফ্লোর পুড়ে গেছে। গ্রাউন্ড ফ্লোরে ছিল রিসেপশন ও একটি এক্সিবিশন হল। সেকেন্ড ফ্লোরেও আরেকটি এক্সিবিশন হল ছিল। থার্ড ফ্লোরে ছিল স্টোররুম।’
তিনি বলেন, ‘পঞ্চম ফ্লোরের ক্যান্টিন ভাঙচুর করা হয়েছে। এর ওপরের কনফারেন্স হলের চেয়ার-টেবিল ভেঙে ফেলা হয়েছে। তার ওপরের ফ্লোরগুলোতে ডেইলি স্টারের প্রশাসন, হিসাব, মানবসম্পদ বিভাগ ছিল—সেখানকার সব ভেঙে তছনছ করা হয়েছে। ষষ্ঠ তলায় নিউজরুমের এক পাশের কম্পিউটার ভেঙে ফেলা হয়েছে।’

এদিকে সকাল ১০টার দিকেও প্রথম আলো ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, চারতলা ভবনটির অনেকাংশ পুড়ে গেছে এবং সেখানে ভাঙচুরের স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। আগুনের ধোঁয়া তখনও বের হচ্ছিল। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা আগুন নেভানোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন।
ভবনের সামনে অনেক মানুষকে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগকে সমর্থন করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সংঘটিত এই ঘটনায় দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের অফিসে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠে। পরিস্থিতির কারণে পরদিন দুই পত্রিকারই ছাপা সংস্করণ প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রথমে প্রথম আলো কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পরে হামলার লক্ষ্যবস্তু হয় পাশের ডেইলি স্টার ভবন। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় বিজিবির সদস্যদেরও এলাকায় টহল দিতে দেখা যায়।
ঘটনার রেশ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকাতেও। হামলাকারীদের একটি অংশ পরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ও ছায়ানট ভবনের দিকে গিয়ে ভাঙচুর চালায় বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শাহবাগ এলাকা থেকে একটি মিছিল কারওয়ান বাজারের দিকে অগ্রসর হয়। মিছিলটি প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে পৌঁছে বিক্ষোভে রূপ নেয়।
জেপিআই/এমআইএইচএস/এমএস