গোলটেবিল সংলাপে আলোচকরা
নারী ও তরুণ নেতৃত্ব ছাড়া অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি সম্ভব নয়
নারী ও তরুণদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ছাড়া বাংলাদেশের গণতন্ত্র শক্তিশালী হতে পারে না- এই অভিমত তুলে ধরেছেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও শিক্ষাবিদ প্রতিনিধিরা।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) অডিটোরিয়ামে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি: নারী ও তরুণ নেতৃত্বের অভিযাত্রা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল সংলাপে তারা এসব কথা বলেন।
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এবং নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহযোগিতায় এই সংলাপের আয়োজন করা হয়। সংলাপে বক্তব্য রাখেন জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, তরুণ প্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিজিএস-এর প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত জোরিস ভ্যান বোমেল এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান বদিউল আলম মজুমদার।
সংলাপে আলোচকরা বলেন, নারী ও তরুণরা জুলাই আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও তাদের অনেকেই এখন রাজনীতির মূলধারায় জায়গা পাচ্ছেন না। রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় নারীরা পিছিয়ে রয়েছেন। তরুণদের নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় দেখা যায় না।
সিজিএস প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান বলেন, পরিবর্তনের এক বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু ফলাফল আশাব্যঞ্জক নয়। তরুণরা পুলিশের ট্যাংকের সামনে দাঁড়িয়েছিল, নারীরা নেতৃত্ব দিয়েছিল। কিন্তু এখন তারা হতাশ। মূল রাজনৈতিক শক্তি যদি তাদের জায়গা না দেয়, তাহলে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়।
এ সময় নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত বলেন, অন্তর্ভুক্তি ও সংলাপ- এই দুটি শব্দ এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ। তরুণদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হতে প্রতিবন্ধকতা কী, তা খুঁজে বের করতে হবে। নারীরাও হয়রানির শিকার হন রাজনৈতিক কাঠামোতে। এইসব চ্যালেঞ্জ দূর করতে হবে।
রাজনীতিতে নারীর জন্য ‘টোকেনিজম নয়, বাস্তব ক্ষমতায়ন’ জরুরি
আইনজীবী রাশনা ইমাম বলেন, সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন কেবল টোকেনিজম। নারীদের ক্ষমতায়ন বলতে কেবল পদ নয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
গোলটেবিল সংলাপে ডাকসুর কার্যকরী সদস্য হেমা চাকমা বলেন, নারীদের পোশাক, চরিত্র- এসব প্রশ্ন আসে রাজনীতিতে নামলে। আদিবাসী নারীদের তো আরও বেশি বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হয়। আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বাস্তবতা হতাশাজনক।
আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান বলেন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে নারী ও তরুণদের ভূমিকা যেমন ছিল, তেমনি জুলাই আন্দোলনেও ছিল। কিন্তু আজ তাদের প্রান্তে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
তরুণদের নেতৃত্বে বাধা ‘নির্বাচনী কাঠামো ও দৃষ্টিভঙ্গি’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন গোলটেবিল সংলাপে বলেন, তরুণদের নিয়ে আমরা জাজমেন্টাল চিন্তা করি। অথচ নেতৃত্বে তারুণ্য ও প্রজ্ঞার সংমিশ্রণ দরকার।
এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, জুলাই আন্দোলনের পর তরুণদের কাঁধে রাষ্ট্র চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন তাদের ওপর ব্যর্থতার দায় চাপানো হচ্ছে। এটি অবিচার।
গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান বলেন, আন্দোলনে তরুণরা সামনে ছিল, কিন্তু এখন তারা উপেক্ষিত। রাজনৈতিক দলগুলো শুধু তাদের ব্যবহার করেছে, সুযোগ দেয়নি।
এই সংলাপের শেষ পর্যায়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা- নামে একটি যৌথ প্রতিশ্রুতিপত্রে সই করেন অংশগ্রহণকারীরা। এতে নারী ও তরুণদের রাজনৈতিক নেতৃত্বে অধিক অন্তর্ভুক্তির জন্য নীতিগত ও ব্যক্তিগত অঙ্গীকার জানানো হয়।
এসএম/এএমএ/এমএস