বড় ভূমিকম্প মোকাবিলায় কতটা সক্ষম ফায়ার সার্ভিস?

তৌহিদুজ্জামান তন্ময়
তৌহিদুজ্জামান তন্ময় তৌহিদুজ্জামান তন্ময় , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:০৮ এএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে পরপর বেশ কয়েকটি ভূমিকম্পে জনমনে বৃদ্ধি পেয়েছে ভয়-আতঙ্ক। গত ২১ নভেম্বর ৫ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। এরপর ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও ছয়বার হালকা ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্পগুলোর বেশিরভাগেরই উৎপত্তিস্থল ছিলো নরসিংদী অঞ্চল। একই এলাকায় বারবার ভূমিকম্প হওয়ায় বিশেষজ্ঞরাও বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।

অবিরত ভূমিকম্পে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই রাতের বেলায় ঘুমাতে ভয় পাচ্ছেন, আবার কেউ বাসাবাড়ির নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। ভূমিকম্প প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় জনসাধারণের মধ্যে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে বড় মাত্রায় ভূমিকম্প হলে ঢাকায় হতাহতদের উদ্ধার ও ভূমিকম্প পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুতি রয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের? সেই প্রশ্ন সামনে আসছে।

অবিরত ভূমিকম্পে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই রাতের বেলায় ঘুমাতে ভয় পাচ্ছেন, আবার কেউ বাসাবাড়ির নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। ভূমিকম্প প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় জনসাধারণের মধ্যে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে বড় মাত্রায় ভূমিকম্প হলে ঢাকায় হতাহতদের উদ্ধার ও ভূমিকম্প পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুতি রয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের? সেই প্রশ্ন সামনে আসছে।

বড় ভূমিকম্প মোকাবিলায় কতটা সক্ষম ফায়ার সার্ভিস?
সম্প্রতি ঢাকায় ভূমিকম্পের পর ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ধ্বংসাবশেষের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও উৎসুক জনতা/ছবি: জাগো নিউজ

নগরবাসী মনে করেন, বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে হয়তো সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুবরণ করতে হতে পারে অথবা দিনের পর দিন আটকা থাকতে হতে পারে ধ্বংসস্তূপে। কারণ ফায়ার সার্ভিস সাধারণ মানুষের উদ্ধার কার্যক্রম কতদিনের মধ্যে চালাবে তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।

আরও পড়ুন

ভূমিকম্পে ঢাকার কোন এলাকা নিরাপদ?
হঠাৎ বড় ভূমিকম্প হওয়ার কারণ কী? যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা
ভূমিকম্পে প্রাণ গেলো ১০ জনের
ভূমিকম্পে সচিবালয়ে নতুন ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোট ছোট ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের আগাম বার্তা। রাজধানীর ঢাকায় যেভাবে ভবন নির্মিত হয়েছে সেদিক বিবেচনায় বড় ভূমিকম্প হলে শুধু ঢাকা শহরে আটকা পড়বে কয়েক লাখ মানুষ। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে একবারে এতো মানুষকে উদ্ধার করা দুরূহ। সেক্ষেত্রে উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে দেশের বাইরে থেকে অভিজ্ঞ উদ্ধারকারী দল আনা লাগতে পারে। তাতে উদ্ধার কার্যক্রম চলতে পারে বেশ কয়েকদিন ধরে।

দুর্যোগে ভরসা ফায়ার সার্ভিস

ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড, ঘূর্ণিঝড়, পাহাড় ধ্বসসহ যেকোনো দুর্যোগে মানুষের কাছে বড় ভরসার নাম ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু জনবলের ঘাটতি ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে প্রায়ই বেকায়দায় পড়তে হয় সংস্থাটিকে। রাজধানীতে বা বিভাগীয় শহরগুলোতে ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি মানুষের বসবাস। দুর্যোগ পরবর্তী উদ্ধার কাজে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফায়ার স্টেশন বা জনবল নেই।

বড় ভূমিকম্প মোকাবিলায় কতটা সক্ষম ফায়ার সার্ভিস?
গত ২১ নভেম্বর ভূমিকম্পের সময় তাড়াহুড়া করে হল থেকে নিচে নামার সময় আহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ শিক্ষার্থী/ফাইল ছবি

ফায়ার সার্ভিস বলছে, বড় আকারে ভূমিকম্প হলে কোনো দেশের ফায়ার সার্ভিসেরই এককভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তবে পর্যাপ্ত ভলান্টিয়ার প্রস্তুত করছে ফায়ার সার্ভিস। ভূমিকম্পের মতো বড় দুর্যোগ মোকাবিলার স্বার্থে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ফায়ার সার্ভিসের ডিরেক্টর ট্রেনিং ও ডেভেলপমেন্ট বিভাগকে ঢাকার অদূরে পূর্বাচলে নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ঝুঁকি বিবেচনায় চলতি বছরের মে মাসে ফায়ার সার্ভিসের অপারেশনাল বিভাগকে ঢাকার মিরপুরে স্থানান্তর করা হয়েছে যাতে করে বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার কার্যক্রম চালানো যায়।

‘সারাদেশে ফায়ার সার্ভিস এখন পর্যন্ত ৫৫ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করেছে। ঢাকাকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় রাজধানীতে ভলান্টিয়ার তৈরি কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে স্পেশাল সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ টিম, যারা ধ্বসে পড়া ভবনের ভেতরে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে বিশেষ দক্ষ।’— ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লে. কর্নেল এমএ আজাদ আনোয়ার

এছাড়া উদ্ধার সহায়তায় ‘কুইক রেসপন্স’ করতে ৬০ সদস্যের ‘স্পেশাল ফোর্স’ গঠন করা হয়েছে। ঢাকার বাইরেও প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ২০ জনের একটি করে ‘স্পেশাল টিম’ প্রস্তুত করা হয়েছে—যারা বিশেষভাবে ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে উদ্ধার অভিযানের জন্য প্রশিক্ষিত।

আরও পড়ুন
ওমরের (রা.) শাসনকালে ‍ভূমিকম্প, ভাষণে যা বলেছিলেন তিনি
ভূমিকম্প হলে তাৎক্ষণিক যা করবেন
ভূমিকম্প আতঙ্কে হল থেকে লাফ, ঢাবিতে ২১ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত

বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ও জনবল অপ্রতুলতা

ভূমিকম্প, অগ্নিদুর্ঘটনা ও অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণের লক্ষ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর গঠিত ‘স্থায়ী বিশেষজ্ঞ প্যানেল’ একাধিক সুপারিশ করেছে। সম্প্রতি অধিদপ্তরে আয়োজিত সেমিনারে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশলী, স্থপতি, দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষক প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

বড় ভূমিকম্প মোকাবিলায় কতটা সক্ষম ফায়ার সার্ভিস?
গত ২১ নভেম্বর ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে রাস্তায় জড়ো হন সাধারণ মানুষ/ফাইল ছবি

সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এশিয়ার উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ও জনবল অপ্রতুলতার বিষয়টি উল্লেখ করেন। গ্যাপ এরিয়া ও অঞ্চলভিত্তিক ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করেন তারা। ওয়াসার সব পাম্প স্টেশনে ফায়ার ব্রিগেড কানেকশন স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেন। পাশাপাশি উচ্চঝুঁকিপূর্ণ সরকারি ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনীয় করে গড়ে তোলা এবং শহরমুখী ফায়ার স্টেশন বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। জায়গা সংকট হলে সরকারি ভবনের নিচের দুই তলা ফায়ার স্টেশন হিসেবে ব্যবহারের বিকল্প প্রস্তাব করা হয়।

৮ বিভাগীয় শহরে স্পেশাল টিম

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ২০ জন করে আট বিভাগীয় শহরে মোট ১৬০ জনের স্পেশাল টিম গঠন করা হয়েছে। যদি ঢাকায় ভূমিকম্প হয় তাহলে আশপাশের বিভাগের টিমগুলোকেও দ্রুত স্থানান্তর ও রেসপন্স করানো সম্ভব হবে। ঢাকা বা চট্টগ্রাম শহরের যে জনসংখ্যা সে তুলনায় ফায়ার সার্ভিসের জনবল, ইকুইপমেন্ট বা স্টেশন সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিসের জনবল, যন্ত্রপাতি ও স্টেশন সংখ্যা বাড়াতে হবে।

‘অগ্নিকাণ্ড, বন্যা থেকে শুরু করে যেকোনো বড় দুর্যোগে প্রথম সাড়াদানকারী বাহিনী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। দুর্যোগ মোকাবিলায় সবচেয়ে বেশি আত্মত্যাগের রেকর্ডও এই বাহিনীরই। দেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় ফায়ার সার্ভিস সর্বোচ্চ প্রস্তুতি ধরে রাখতে কাজ করছে।’ — ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল

ভূমিকম্পের আগাম অ্যালার্ট পেতে অ্যাপ তৈরির ভাবনা

সম্প্রতি সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ভূমিকম্পের বিষয়ে সতর্কতা জানানোর কোনো অ্যাপ আমাদের দেশে নেই। ১০ সেকেন্ড আগে সতর্কতা জানানোর অ্যাপ অনেক দেশে আছে বলে কথিত। আমরাও চিন্তা-ভাবনা করছি এমন একটি অ্যাপ চালু করা যায় কি-না।

বড় ভূমিকম্প মোকাবিলায় কতটা সক্ষম ফায়ার সার্ভিস?
সম্প্রতি ভূমিকম্পে রাজধানী ঢাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটে/ছবি: সংগৃহীত

আরও পড়ুন
‘এত বড় ভূমিকম্প আমার জীবনে দেখিনি’
ঢাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে রাস্তায় মানুষ
ভূমিকম্পে পুরান ঢাকা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ?
ঢাকায় ভূমিকম্প অনুভূত

তিনি বলেন, বাড়িঘর তৈরি করার সময় বিল্ডিং কোড মেনে চলতে হবে। না মানলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

৫৫ হাজার ভলান্টিয়ার, বিশেষ সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ টিম

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লে. কর্নেল এম এ আজাদ আনোয়ার জাগো নিউজকে জানান, ভূমিকম্পসহ যেকোনো প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগে প্রথম সাড়াদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। ভূমিকম্পে দ্রুত উদ্ধার নিশ্চিত করতে সব উদ্ধার সরঞ্জাম ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। এতে কোনো এলাকায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হলে অন্য এলাকা থেকেও দ্রুত সহায়তা পাঠানো সম্ভব হবে। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ফায়ার সার্ভিস নিয়মিত মহড়া, ক্যাম্পেইন ও গণসংযোগ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এসব কার্যক্রমের উদ্দেশ্য—ভূমিকম্পের সময় মানুষ যেন আতঙ্কিত না হয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

ভূমিকম্প আগাম জানার কোনো নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভূমিকম্প থামানো যায় না, তা ধরে নিয়েই প্রস্তুত থাকতে হবে।

লে. কর্নেল আজাদ আরও বলেন, সারাদেশে ফায়ার সার্ভিস এখন পর্যন্ত ৫৫ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করেছে। ঢাকাকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় রাজধানীতে ভলান্টিয়ার তৈরি কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে স্পেশাল সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ টিম, যারা ধ্বসে পড়া ভবনের ভেতরে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে বিশেষ দক্ষ। পূর্বাচল মাল্টিপারপাস স্টেশনে অবস্থানরত এই দল যেকোনো ভূমিকম্প পরিস্থিতিতে দ্রুত উদ্ধার নিশ্চিত করতে কাজ করছে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাছাই করা দক্ষ ফায়ারফাইটারদের নিয়ে ৬০ সদস্যের বিশেষ কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প বা গ্যাস লাইনের বিস্ফোরণের ঘটনায় যেকোনো উচ্চঝুঁকির পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দিতে এই দলকে পূর্বাচলে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, ভূমিকম্পে রাস্তা পরিষ্কার ও উদ্ধার অভিযান শুরু করতে ফায়ার সার্ভিস বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কনস্ট্রাকশন যানবাহনের তালিকাও তৈরি করেছে। ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা আছে; তবে বড় দুর্যোগ মোকাবিলায় এই সক্ষমতা আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

বড় ভূমিকম্প মোকাবিলায় কতটা সক্ষম ফায়ার সার্ভিস?
ভূমিকম্পের প্রতীকী ছবি

সবসময় প্রস্তুত রাখতে হবে খাবারসহ ইমার্জেন্সি প্যাক

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লে. কর্নেল এমএ আজাদ আনোয়ার বলেন, ‘জরুরি সুরক্ষা হিসেবে শুকনা খাবার, পানির বোতল, টর্চ লাইট ইমার্জেন্সি প্যাক হিসেবে স্টোর করে রাখতে হবে। যদি কেউ আটকাও পড়ে যায় তাহলে যেন অন্তত ৪৮ বা ৭২ ঘণ্টা সাপোর্ট নিতে পারে। যারা ভবনের উঁচু তলায় যেমন—দোতলা বা তিনতলায় থাকেন, তাদের পক্ষে সম্ভব হলে নেমে বাইরে খোলা জায়গায় চলে যেতে হবে। খোলা মাঠ বা এরকম জায়গায়, যেখানে ওপর দিয়ে ইলেকট্রিকের কেবল (বৈদ্যুতিক তার) নেই বা বিল্ডিং ভেঙে পড়ার আশঙ্কা নেই, এরকম জায়গায়।’

বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি মাথায় রেখে চলছে প্রস্তুতি

বড় মাত্রায় ভূমিকম্প হলে হতাহতদের উদ্ধার ও ভূমিকম্প পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিসের প্রস্তুতি কতটা—জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল জাগো নিউজকে বলেন, অগ্নিকাণ্ড, বন্যা থেকে শুরু করে যেকোনো বড় দুর্যোগে প্রথম সাড়াদানকারী বাহিনী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। দুর্যোগ মোকাবিলায় সবচেয়ে বেশি আত্মত্যাগের রেকর্ডও এই বাহিনীরই। দেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় ফায়ার সার্ভিস সর্বোচ্চ প্রস্তুতি ধরে রাখতে কাজ করছে।

তিনি বলেন, সর্বশেষ ২১ নভেম্বরের ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প দেশের মানুষকে নতুন করে আতঙ্কিত করেছে। বড় মাত্রায় ভূমিকম্প সংঘটিত হলে সম্ভাব্য ধ্বংসযজ্ঞ মোকাবিলা করা একা ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ ভূমিকম্পের সঙ্গে ওয়াসা, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সুয়ারেজসহ বিভিন্ন সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমও বিঘ্নিত হবে। ভবন ধ্বস, অগ্নিকাণ্ড ও হতাহতের মতো বড় ঝুঁকি তৈরি হবে। তাই এখন থেকেই সব প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিতভাবে প্রস্তুতি ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা জরুরি।

বড় ভূমিকম্প মোকাবিলায় কতটা সক্ষম ফায়ার সার্ভিস?
ভূমিকম্পের কারণে সচিবালয়ে নতুন নির্মিত ১ নম্বর ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে/ছবি: সংগৃহীত

উদ্ধার কাঠামো সুরক্ষায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে অপারেশনাল টিম

ফায়ার সার্ভিসের ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল জানান, ভূমিকম্প হলে আমাদের নিজস্ব স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। উদ্ধারকারী অপারেশনাল টিম যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে উদ্ধার কাজ করবে কে? এ কারণেই কমান্ডিং ফোর্স হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনাল ইউনিটকে মিরপুরে স্থানান্তর করা হয়েছে। একইসঙ্গে ডিরেক্টর ট্রেনিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টকে পূর্বাচলে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

পূর্বাচলে প্রস্তুত ৬০ সদস্যের স্পেশাল কুইক রেসপন্স টিম

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাছাই করা দক্ষ ফায়ারফাইটারদের নিয়ে ৬০ সদস্যের বিশেষ কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প বা গ্যাস লাইনের বিস্ফোরণের ঘটনায় যেকোনো উচ্চঝুঁকির পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দিতে এই দলকে পূর্বাচলে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডিজি মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, ভূমিকম্পে গ্যাস লাইন থেকে বিস্ফোরণের মতো দ্বিতীয় দুর্যোগ ঘটতে পারে। এজন্যই আমরা বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত এই দলকে প্রস্তুত রেখেছি, যাতে তারা দ্রুততম সময়ে অভিযান শুরু করতে পারে।

টিটি/এমএমকে/এমএমএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।