সারাদেশে ঘুরছে বঙ্গবন্ধু রেল জাদুঘর
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর দেখতে আপনাকে নির্দিষ্ট কোনো জেলা বা শহরে যেতে হবে না। বরং জাদুঘরটিই আপনার বাড়ির কাছের স্টেশনে যাবে। আর বিনামূল্যে তা দেখার সুযোগ পাবেন সাধারণ মানুষ। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও সুসজ্জিত রেলের কামরাটিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বেড়ে ওঠা ও কর্মময় জীবনের ঘটনাপঞ্জি দেখা যাবে পর্যায়ক্রমে। স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস দেখা যাবে ভিডিও এবং অডিওর মাধ্যমে।
জাদুঘরটি দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা ও সুদৃশ্য ইন্টেরিয়রের মাধ্যমে সাজানো হয়েছে। ছোট পরিসরে তৈরি করা হয়েছে ফুলের বাগান। যখন যে স্টেশনে যাবে, সেখানে প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা এতে প্রবেশ করতে পারবেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাসে ১ আগস্ট থেকে যাত্রা শুরু হয়েছে এই জাদুঘরের। গোপালগঞ্জ স্টেশনে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এ জাদুঘরের উদ্বোধন করেন। অন্যদিকে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সেদিন বিকেল ৫টায় চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে বাংলাদেশ রেলওয়ের ভ্রাম্যমাণ বঙ্গবন্ধু জাদুঘর উদ্বোধন করেছেন।
এই অভিনব জাদুঘরটির স্বপ্নদ্রষ্টা রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) মো. মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী।
জাগো নিউজকে তিনি বলেন, রেলের ইতিহাসে এটি প্রথম ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর। একটি ব্রডগেজ ও একটি মিটারগেজ কোচকে সর্বোচ্চ প্রযুক্তিতে সাজানো হয়েছে। জাদুঘরটিতে ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির পিতার ঐতিহাসিক জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, সংগ্রামী ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে। সাধারণ দর্শনার্থীরা টাচ স্ক্রিনে আঙুল স্পর্শ করতেই ভেসে আসবে বঙ্গবন্ধু ছবি, ভাষণ ও তার জীবনের নানা দিক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় দেড় বছর সময় নিয়ে নির্মিত এই ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরে প্রবেশ করেই দর্শনার্থীরা পরিচিত হবেন জাতির পিতার শৈশবের দিনগুলোর সঙ্গে। পর্যায়ক্রমে বঙ্গবন্ধুর ছাত্রজীবন, বেড়ে ওঠা, মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের মাধ্যমে গণমানুষের প্রাণের নেতা হয়ে ওঠা এবং ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক হিসেবে তার অবদান তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবর্ণনীয় নির্যাতনের চিত্র, মিথ্যা মামলা ও কারাভোগের করুণ দলিল, তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আপসহীন ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, জাতির গৌরবোজ্জ্বল ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা, যুদ্ধবিদ্ধস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ।
প্রতিটি ভিডিও নির্মাণ করা হয়েছে ভিডিও এবং স্থিরচিত্রের সমন্বয়ে। কোচের এক প্রান্তে একটি বড় এলইডিতে জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণসহ গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ, থিম সং এবং বঙ্গবন্ধুর উপর রচিত অন্যান্য গান প্রচার করা হচ্ছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাদুঘরটিতে রয়েছে জয় বাংলা স্লোগানের আদলে তৈরি করা একটি বুক শেল্ফ।
জাদুঘর প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালক বীরেন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরের মাধ্যমে সারাদেশে সাধারণ মানুষ বঙ্গবন্ধুকে জানার সুযোগ পাবেন।
জাদুঘর নিয়ে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী, আদর্শ তার আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেম সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই রেল জাদুঘর সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা স্টেশনগুলোতে বঙ্গবন্ধুর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার কর্মময় ও রাজনৈতিক জীবন এবং তার আত্মত্যাগ সাধারণ মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেবে।
কোথায় কখন থাকবে জাদুঘরটি
শিডিউলে দেখা যায়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে একটি জাদুঘর থাকবে সীতাকুণ্ড স্টেশনে থাকবে ৭ থেকে ৯ আগস্ট, চিনকিআস্তানা স্টেশনে থাকবে ৯ থেকে ১১ আগস্ট, ফেনী জংশনে থাকবে ১১ থেকে ১৫ আগস্ট, গুণবতী স্টেশনে থাকবে ১৪ থেকে ১৭ আগস্ট, নাঙ্গলকোট স্টেশনে থাকবে ১৬ থেকে ১৯ আগস্ট, লাকসাম জংশনে থাকবে ১৮ থেকে ২৩ আগস্ট, চৌমুহনী স্টেশনে থাকবে ২৪ থেকে ২৫ আগস্ট, মাইজদীকোর্ট স্টেশনে থাকবে ২৬ থেকে ২৭ আগস্ট, নোয়াখালী স্টেশনে থাকবে ২৮ থেকে ২৯ আগস্ট, চাঁদপুর স্টেশনে থাকবে ৩০ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর, কুমিল্লা স্টেশনে থাকবে ২ থেকে ৪ নভেম্বর, আখাউড়া স্টেশনে থাকবে ৫ থেকে ৮ নভেম্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে থাকবে ৯ থেকে ১০ নভেম্বর, ভৈরব স্টেশনে থাকবে ১১ থেকে ১২ নভেম্বর, নরসিংদী স্টেশনে থাকবে ১৩ থেকে ১৪ নভেম্বর, টঙ্গী জংশনে থাকবে ১৫ থেকে ১৬ নভেম্বর এবং ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে থাকবে ১৭ থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত।
অন্যদিকে আরেকটি কোচ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের গোপালগঞ্জ স্টেশনে থাকবে ভাটিয়াপাড়া ঘাট স্টেশনে থাকবে ৯ থেকে ১০ আগস্ট, মধুখালী জংশনে থাকবে ১২ থেকে ১৩ আগস্ট, রাজবাড়ী স্টেশনে থাকবে ১৫ থেকে ১৭ আগস্ট, ফরিদপুর স্টেশনে থাকবে ১৯ থেকে ২০ আগস্ট, পাংশা স্টেশনে থাকবে ২২ থেকে ২৩ আগস্ট, কুমারখালি স্টেশনে থাকবে ২৫ থেকে ২৬ আগস্ট, কালুখালী জংশনে থাকবে ২৮ থেকে ২৯ আগস্ট, কুষ্টিয়া স্টেশনে থাকবে ৩০ থেকে ৩১ আগস্ট, খুলনা স্টেশনে থাকবে ২ থেকে ৭ নভেম্বর, দৌলতপুর স্টেশনে থাকবে ৯ থেকে ১০ নভেম্বর, নোয়াপাড়া স্টেশনে থাকবে ১২ থেকে ১৩ নভেম্বর, যশোর স্টেশনে থাকবে ১৫ থেকে ১৮ নভেম্বর, বেনাপোল স্টেশনে থাকবে ২০ থেকে ২১ নভেম্বর, নাভারণ স্টেশনে থাকবে ২২ থেকে ২৩ নভেম্বর, মোবারকগঞ্জ স্টেশনে থাকবে ২৫ থেকে ২৬ নভেম্বর, দর্শনা স্টেশনে থাকবে ২৮ থেকে ২৯ নভেম্বর এবং চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে থাকবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
এইচএস/এমএইচআর/জিকেএস