ফাইনালে ভারত-পাকিস্তান স্মরণীয় পাঁচ লড়াই

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৪২ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভারত ও পাকিস্তান ক্রিকেটে মুখোমুখি হওয়া মানেই বাড়তি উত্তেজনা। তবে যে কোনো টুর্নামেন্ট ফাইনালে দু’দলের দেখা হয়েছে খুব কম। গত ৪০ বছরে মাত্র পাঁচবার। আর এবারই প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ ফাইনালে নামছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। ১৯৮৪ সালে এশিয়া কাপ শুরু হওয়ার ৪১ বছর পর এই প্রথম এ টুর্নামেন্টের ফাইনালে মুখোমুখি ভারত এবং পাকিস্তান।

দু’দলের এই শিরোপা লড়াইয়ের আগে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ভারত-পাকিস্তানের পাঁচ স্মরণীয় ফাইনাল।

১৯৮৫, মেলবোর্ন, ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব ক্রিকেট– শ্রীকান্ত-শাস্ত্রীদের দাপট

১৯৮৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব ক্রিকেটের ফাইনালে মুখোমুখি হয় দুই দল। ৫০ হাজার দর্শকের সামনে পাকিস্তান ৯ উইকেটে ১৭৬ রানেই থেমে যায়। কপিল দেব ও লক্ষ্মণ শিবরামকৃষ্ণন নেন তিনটি করে উইকেট। জাভেদ মিয়াঁদাদ (৪৮) ও ইমরান খান (৩৫) ছাড়া কেউই দাঁড়াতে পারেননি ওই ফাইনালে।

জবাবে ক্রিশ শ্রীকান্তের ঝোড়ো ৬৭ আর রবি শাস্ত্রির অপরাজিত ৬৩ রান ও ১০৩ রানের জুটির ওপর ভর করে ভারত ৮ উইকেটে জয় পায়। শাস্ত্রী জেতেন ‘চ্যাম্পিয়ন অব চ্যাম্পিয়নস’ খেতাব ও বিখ্যাত অডি গাড়ি।

Miandad

১৯৮৬, শারজাহ, অস্ট্রাল-এশিয়া কাপ, মিয়াঁদাদের শেষ বলের ছক্কা

শারজাহর অস্ট্রাল-এশিয়া কাপের ফাইনাল ইতিহাস হয়ে আছে একটি শটের জন্য। শ্রীকান্তের ৭৫ বলে ৮০, সুনিল গাভাস্কারের ৯২ এবং দিলিপ ভেঙসরকারের ৫০ রানে ভর করে ভারত সংগ্রহ করে ৭ উইকেটে ২৪৫ রান। ওয়াসিম আকরাম নেন ৪২ রানে ৩ উইকেট। জবাবে পাকিস্তানের অবস্থা ছিল টলোমলো; কিন্তু জাভেদ মিয়াঁদাদ একাই দাঁড়িয়ে থেকে ম্যাচকে নিয়ে আসেন শেষ বলে ৪ রানের সমীকরণে।

শেষ বলে চেতন শর্মার ফুলটস তুলে মারেন তিনি, ছক্কা। ১১৬ রানে অপরাজিত থেকে পাকিস্তানকে শিরোপা এনে দেন মিয়াঁদাদ। ওই মুহূর্তে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেটের মানসিকতার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

১৯৯৪, শারজাহ, অস্ট্রাল-এশিয়া কাপ, আমির সোহেল-সাঈদ আনোয়ারের ব্যাটিং ঝড়

১৯৯৪ সালে আরেকটি অস্ট্রাল-এশিয়া কাপ ফাইনালে পাকিস্তানের দুই ওপেনার সাঈদ আনোয়ার (৪৭) ও আমির সোহেল (৬৯) দুর্দান্ত সূচনা এনে দেন। তাদের ৯৬ রানের জুটি চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়তে সহায়তা করে। পরে বাসিত আলির ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ২৫০ রান তোলে পাকিস্তান। রাজেশ চৌহান নেন ৩ উইকেট। এক ওভারে ইনজামাম-উর হক ও সেলিম মালিককে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

Washim Akram

জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই ধুঁকতে শুরু করে ভারত। প্রথম ওভারেই অজয় জাদেজাকে ফিরিয়ে দেন ওয়াসিম আকরাম। ১১ ওভারে তারা তোলে ৫৯ রান। টেন্ডুলকার-সিদ্ধু চেষ্টা করলেও দল গুটিয়ে যায় ২০০ রানের নিচে। ৬৯ রান, ২ উইকেট আর ২ ক্যাচ নিয়ে আমির সোহেল হলেন ম্যাচসেরা।

২০০৭, জোহানেসবার্গ, টি-২০ বিশ্বকাপ ফাইনাল, মিসবাহর হৃদয়ভাঙা, ধোনিদের সাফল্য

প্রথম টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল ছিল টানটান উত্তেজনায় ভরা। ইতিহাসে প্রথম কোনো বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি ভারত এবং পাকিস্তান। স্বাভাবিকভাবেই টানটান উত্তেজনায় ভরা ম্যাচ।

গৌতম গম্ভীরের ৪৫ বলে ৭৫ আর ২০ বছর বয়সী তরুণ রোহিত শর্মার ১৬ বলে অপরাজিত ৩০ রানের ঝোড়ো ইনিংসে ভারত করে ১৫৭ রান। ডেথ ওভারে উমর গুল রান আটকে রাখতে সক্ষম হন, ২৮ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট।

জবাবে পাকিস্তান লড়াইটা ভালোই শুরু করে। ইমরান নাজির ১৩ বলে ৩৩ রান করে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন। কিন্তু রবিন উথাপ্পার একটি ডিরেক্ট হিটে ইমরান নাজির রানআউট হতেই ম্যাচে ফেরে ভারত। আরপি সিং ২৬ রানে ৩টি এবং ইরফান পাঠান ১৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে মাঝের ওভারগুরোতে আটকে ফেলেন।

Dhoni

শেষ দিকে লড়াইয়ের ব্যাটন চলে আসে মিসবাহ-উল-হকের হাতে। তার কল্যাণে ঘুরে দাঁড়ায় পাকিস্তান। শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৩ রান, বল হাতে ছিলেন অচেনা নাম জোগিন্দর শর্মা। মিসবাহ স্কুপ মারতে গিয়ে শ্রীশান্থের হাতে শর্ট ফাইন লেগে ধরা পড়েন। ভারত জয় পায় ৫ রানে, আর শুরু হয় টি-২০ বিপ্লব। সেই জোগিন্দর শর্মা অবশ্য আর ভারতের হয়ে কখনো খেলেননি।

২০১৭, লন্ডন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনাল, ফাখর জামান ও আমিরের অনবদ্য একটিদিন

২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তান ছিল পুরোপুরি আন্ডারডগ। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে তাদেরকে কেউ গোনায়ও ধরেনি। এমনকি ফাইনালের আগে একবার পাকিস্তানকে হারিয়েছিল ভারত।

ফাইনালে সেই ভারতের মুখোমুখি পাকিস্তান। আর ফাইনালে এসে ভারতকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তানিরা। ফাখর জামান ভাগ্যবান যে, ম্যাচের শুরুতেই নো-বলের কারণে জসপ্রিত বুমরাহর হাত থেকে বেঁচে যান। লাইফলাইন পেয়ে তিনি খেলেন দুর্দান্ত ইনিংস। ১০৬ বলে করেন ১১৪ রান। পাকিস্তান তোলে ৩৩৮ রানের বিশাল ইসিংস। আজহার আলি ৫৯, বাবর আজম করেন ৪৬ রান। মোহাম্মদ হাফিজ ৩৭ বলে খেলেন ৫৭ রানের ইনিংস।

2017 champions trophy

জবাব দিতে নেমে মোহাম্মদ আমিরের আগুনঝরা বোলিংয়ে ভারত হারায় শুরুর তিন ব্যাটার– রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি ও শিখর ধাওয়ানকে। হার্দিক পান্ডিয়ার ৪৩ বলে লড়াকু ৭৬ রানের পরও ভারত গুটিয়ে যায় ১৫৮ রানে। ৬ ওভারে ১৬ রানে ৩ উইকেট নেন আমির। হাসান আলি ৬.৩ ওভারে ১৯ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। শাদাব খান ৭ ওভারে ৬০ রান দিলেও নেন ২ উইকেট।

১৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় পায় পাকিস্তান, যা আইসিসি টুর্নামেন্ট ফাইনালে সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়।

আইএইচএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।