‘গতিদানব-গদা’ ট্রল নিয়ে যা বললেন সুজন
তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের মুখরোচক কথা-বার্তা। টীকা টিপ্পনি, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ। খালেদ মাহমুদ সুজনকে ফেসবুকে কেউ কেউ ‘গতিদানব’, কেউবা ডাকেন ‘গদা’।
‘গতিদানব’ বহুদূরে, তিনি ফাস্টবোলারই ছিলেন না কখনো। ক্যারিয়ারের প্রথম কয়েক বছর মাশরাফি বিন মর্তুজা আর এখন রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদরা যে গতিতে বোলিং করেন, খালেদ মাহমুদ সুজনের বলে কখনই ওত গতি ছিল না।
তাহলে তাকে ‘গতিদানব’ বা ‘গদা’ ডাকার কারণ কি? বলার অপেক্ষা রাখে না, সেটা ‘ট্রল’ করে বলা। পুরো বিষয়টাই ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন অনেকেই আছেন, যারা তার নামটা পর্যন্ত উল্লেখ করেন না, ঐ ‘গতিদানব’ আর ‘গদা’ নামেই তাকে পরিচিত করে তুলেছেন।
বিষয়টি খালেদ মাহমুদ সুজনের জন্য মোটেই সুখকর বা স্বস্তির নয়। বরং বিব্রতকর, অসম্মানজনকও। একজন ক্রিকেটার জাতীয় দলের হয়ে দীর্ঘ দিন খেলেছেন। টেস্ট আর ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করেছেন। বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’ হয়েছেন। সেটাও আবার পাকিস্তানের মত প্রবল শক্তিশালী ও কঠিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো বোলিং করে। এমন কটুক্তি, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ তার কেমন লাগে?
তিনি কি এসব দেখে ও শুনে বিব্রত-হতাশ, ক্ষুব্ধ? নাকি একদম গায়ে মাখেন না? এই গতিদানব-গদা নামকরণটা আসলে তার কাছে কেমন লাগে? এ সম্পর্কে আগেও কম বেশি কথা বলেছেন জাতীয় দলের এ সাবেক অধিনায়ক।
গতকাল (সোমবার) ক্রীড়া সাংবাদিক নোমান মোহাম্মদের ইউটিউব লাইভে তা নিয়ে ফের কথা উঠল। সঞ্চালক নোমান মোহাম্মদ বললেন, ‘আপনাকে সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে অনেক নামে ট্রল করা হয়, গতিদানব বলা হয়। এ ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কি?’
এমন প্রশ্নে খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘আসলে যারা বলেন, তাদের ওপর তো আর আমার নিয়ন্ত্রণ নেই। আমি নিয়ন্ত্রণের বাইরের কোন কিছুকেই নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না। এটা আমার ক্রিকেট অভিধানে নেই। আমি এসব নিয়ে মাথা ঘামাই না। কারা বলেন, আমি জানি না। আমি আসলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ততটা অ্যাক্টিভ নই। দেখা হয় না বললেই চলে। আমার বন্ধুরা বলে, এই করে সেই করে। কারা বলেন? আমি জানিও না।’
যারা গতিদানব বলেন, তাদের উদ্দেশ্যে খালেদ মাহমুদের বক্তব্য, ‘আমি কখনই ফাস্টবোলার ছিলাম না। কিন্তু একদম কম গতিতেও বল করিনি। আমার ১৩৭ কিলোমিটার গতিতে বল করার রেকর্ড আছে। এছাড়া ১৩৩/১৩৪ এ বল করেছি।’
কম গতিতে বল করেও কিন্তু সাফল্য পাওয়া সম্ভব। আন্তর্জাতিক আঙিনায় লঙ্কান সাবেক পেসার চামিন্দা ভাসই ছিলেন সবচেয়ে বড় উদাহরণ। সুজন তার প্রসঙ্গ তুলে আনেন। তবে কি চামিন্দা ভাসের সঙ্গে তুলনা করা যায় তাকে?
সুজন বললেন, ‘আমি তার সাথে মোটেই নিজেকে তুলনা করতে চাই না। তার সাথে তুলনার প্রশ্নই আসে না। তিনি অনেক বড় বোলার। শুধু উদাহরণ দিতে গিয়ে তার নামটা বলা। চামিন্দা ভাসও কিন্তু এক সময় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করেছেন। আবার ক্যারিয়ারের শেষ দিকে গিয়ে ১১০-১১৫ কিলোমিটার গতিতেও বল করেছেন।’
খালেদ মাহমুদ বোঝানোর চেষ্টা করেন, ঢাকার স্লো ও লো ট্র্যাকে পেস বোলার হিসেবে তাকে গতির চেয়ে বলের কারুকাজ বাড়ানোর দিকেই বেশি মনোযোগী হতে হয়েছে।
তার ভাষায়, ‘আমাদের ঢাকার ক্রিকেটে আমরা যখন খেলতাম, তখন গতির কথা চিন্তা করলে মার খেতে হতো। বল করলে সীমানার ওপার থেকে কুড়িয়ে নিয়ে আসতে হতো। আমাদের স্লো উইকেটে সাফল্য পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। আমাদের গতির চেয়ে বলের কারুকাজ শিখতে হয়েছে। আমি 'কাটার' রপ্ত করতে অনেক কষ্ট করেছি। ঘাম ঝরিয়েছি প্রচুর।’
বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অলরাউন্ডার যোগ করেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শচিন টেন্ডুলকার, বীরেন্দ্রর শেবাগসসহ যত বড় ব্যাটসম্যানের উইকেট পেয়েছি, সেগুলো লেগ কাটারেই পেয়েছি। লেগ কাটার রপ্ত করতে আমাকে প্রচুর কষ্ট করতে হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা শ্রম দিয়েছি।’
‘আমি কখনও ফাস্ট বোলার ছিলাম না। সবসময়ই মিডিয়াম পেসার। আমি কোনো সময় বলিনি আমি ফাস্টবোলার। মাঝখানে এসে চেঞ্জ বোলার হিসেবে বল করেছি। বলে বৈচিত্র্য আনা আর কারুকাজ করার দরকারই ছিল বেশি। আমার কোন অভিযোগ নেই। যারা বলার তারা বলবেন।’
সমালোচকদের উদ্দেশ্যে তার শেষ কথা, ‘অনেকে হয়তো আমার খেলাও দেখেনি। আমার সম্পর্কে হয়তো জানেও না। আমার বন্ধুদের কাছ থেকে আমি সেটাই শুনেছি। ওত বেশি মাথাব্যথা নেই আমার। আমি তো আর এসব কথা-বার্তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না।’
এআরবি/এমএমআর/পিআর