সাকিবের মতো খ্যাতি ‘ভালো লাগে না’ ছোট সাকিবের

ক্রীড়া প্রতিবেদক ক্রীড়া প্রতিবেদক নারায়নগঞ্জ থেকে
প্রকাশিত: ০৮:৩৭ পিএম, ১৩ জুন ২০২২

নাম তার ইয়াসিন আরাফাত সাকিব। নামের শেষে থাকা সাকিব শব্দটি শুনে চমকেই উঠতে হলো। নিশ্চিত হতে আবার জিজ্ঞাসা, ‘নাম কী বললেন?’ স্পষ্ট করে আবারও পুরো নামটি বললেন রংপুর শিশু নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের এক সদস্য। যা শুনে অবাক হওয়াই স্বাভাবিক!

যার কথা বলা হচ্ছে, তাকে মাঠে দেখে মনে হচ্ছিল যেনো ছোটবেলার সাকিব আল হাসানই হেঁটে বেড়াচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর এলেন বোলিং করতে; রানআপ থেকে শুরু করে অ্যাকশন ও ফলো থ্রু- সবই পুরোপুরি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের কার্বন কপি।

সোমবার জাতীয় স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালে তাই আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন এ বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার। চ্যাম্পিয়ন রংপুর শিশু নিকেতনের হয়ে নবম ওভারে বোলিং শুরু করেন তিনি। তার করা ২১তম ওভারেই মাত্র ৪৩ রানে অলআউট হয় রানার্স-আপ মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।

ফাইনালে ৬.২ ওভারে দুই মেইডেনসহ ১২ রান খরচায় একটি উইকেট নিয়েছেন এ ছোট সাকিব। তবে সেমিফাইনালে তার ঘূর্ণিজালে আটকা পড়েছে সুনামগঞ্জের সরকারি জুবিলি উচ্চ বিদ্যালয়। সাকিব সেদিন ১৯ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। তার জাদুতেই মাত্র ১০০ রান করেও ৪১ রানে জিতে ফাইনালে ওঠে রংপুর শিশু নিকেতন।

সেমিফাইনালে সেই নৈপুণ্য দেখানোর পর থেকেই ছোট সাকিব হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যান ১৬ বছর বয়সী ইয়াসিন আরাফাত সাকিব। তিনি নিজেও জানালেন, সাকিবকে অনুসরণ করেই ক্রিকেটীয় যাত্রাটা এগিয়ে নিতে চান আরও বড় পর্যায়ে।

ফাইনাল শেষে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে সাকিব বলেন, ‘সাকিব (আল হাসান) ভাইয়ের মতো বল করি এজন্য মনে হয় (ছোট সাকিব ডাকে)। সাকিব ভাইকে অনুসরণ করি আমি। তার মতো বোলিং পরিকল্পনা, বোলিং অ্যাকশন, (সঠিক) জায়গায় বল করা, আর্ম বল করা আবার একই জায়গায় পড়ে বাইরে বেরিয়ে যায়- ওগুলো শেখার চেষ্টা করি।’

Junior Sakib

সাকিবকে অনুসরণ করার ক্ষেত্রে কোচদের কাছ থেকেও অনুপ্রেরণা ও পরামর্শ পান ইয়াসিন আরাফাত সাকিব, ‘ছোট থেকেই সাকিব ভাইকে অনুসরণ করি। কোচরাও বলে যে, (সাকিব) ভাই এভাবে করে, তুইও যদি করিস ভালো হবে।’

নিজের বোলিং সম্পর্কে কোচদের দেওয়া পরামর্শ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার জায়গাটা (লেন্থ) আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে। এখন কোচ শুধু বলছেন জোরের ওপর বোলিং করতে। আস্তে সব বল করলে হয় যে সবসময় ঠিক জায়গায় পড়ে না। তাই বৈচিত্র্য আনতে জোরেও করতে বলেন।’

ছোট থেকেই অনেক খেলা দেখতেন এই ক্ষুদে সাকিব। সেই খেলার প্রতি ভালোবাসা থেকেই ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় ট্রায়াল দেন বিকেএসপির বিশেষ ক্যাম্পে। প্রথমবারেই সুযোগ পেয়ে শিখে নেন বোলিংয়ের বেসিক বিষয়গুলো।

সাকিব বলছিলেন, ‘ষষ্ঠ শ্রেণিতে বিকেএসপি ক্যাম্প দিয়ে শুরু আমার ক্রিকেট যাত্রা। বিকেএসপিতে ট্রায়াল দিয়েছিলাম। তারপর ওখানে নির্বাচিত হলে ক্যাম্পে ডাকে, ক্যাম্প থেকেই পরে পুরোপুরিভাবে ক্রিকেট শুরু। বিকেএসপির ক্যাম্পেই মূলত অনেক কিছু শিখেছি।’

সিনিয়র সাকিব আল হাসানের মতোই নিজেকে বড় পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান এই ক্ষুদে সাকিব, ‘ইনশাআল্লাহ (সাকিব ভাইয়ের মতো) অনেক বড় পর্যায়ে যেতে চাই। এজন্য অবশ্য অনেক কষ্ট করতে হবে। আমি কষ্ট করছি, পরিশ্রম করছি আলহামদুলিল্লাহ। সামনে আরও অনেক পরিশ্রম করতে হবে।’

তবে এখনও নিজের আইডলের সঙ্গে দেখা হয়নি রংপুরের এই ক্ষুদে ক্রিকেটারের, ‘সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগ হয়নি। অনেক ইচ্ছা আছে দেখা করার।’

সাকিবের সঙ্গে দেখা না হলেও ছোট সাকিব হিসেবে এরই মধ্যে পরিচিতি পেয়ে গেছেন ইয়াসিন আরাফাত সাকিব। তবে সবাই যে তাকে নিয়ে উন্মাদনা দেখায় তা ভালো লাগে না এ ক্ষুদে চ্যাম্পিয়নের। মূলত নিজেকে এখনও সেই খ্যাতির যোগ্য মনে করেন না বিধায় পা মাটিতেই রাখতে চান তিনি।

বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের মতো উন্মাদনা, খ্যাতি কেমন লাগে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘(এই উন্মাদনা) ভালো লাগে না। রাস্তায় গেলে সবাই বলে, এই সাকিব ভাই! এই ছোট সাকিব! এগুলো কী যে শুরু হয়েছে! হোটেলে খেতে গিয়েছি সেখানেও এমন শুনলাম। আমার এটা ভালো লাগে না। এখনও আসলে (এতো খ্যাতি পাওয়ার) সময়টা হয়নি। ওই যোগ্যতা এখনও হয়নি আমার।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘সাকিব ভাইয়ের জায়গায় যেতে পারলে তো ভাগ্য। অমনই কিছু করতে চাই ইনশাআল্লাহ। এখন লক্ষ্য মূলত ১৫ জনের তালিকায় থাকা। তারপর ভালো কিছু করা, জাতীয় দলে খেলা।’

এসএএস/আইএইচএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।