এসএসসিতে বাজিমাত

অদম্য মেধাবী লিতুন জিরার বাড়িতে ফুল-মিষ্টি নিয়ে ইউএনও

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ১১:৩৫ এএম, ১২ জুলাই ২০২৫

যশোরের মণিরামপুরে ‘হাত-পা ছাড়াই জন্ম নেওয়া’ অদম্য মেধাবী লিতুন জিরার চমক জাগানিয়া সাফল্যে তাকে অভিনন্দন জানাতে তার বাড়িতে ছুটে গেছেন মণিরামপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্না। এসময় তাকে নিজহাতে মিষ্টিমুখ করান তিনি।

বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া এই ছাত্রীর বাড়িতে শুক্রবার (১১ জুলাই) ফুল ও মিষ্টি নিয়ে হাজির হন ইউএনও। এসময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হবে বলে তিনি।

ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করে লিতুন জিরা জানায়, সে আরও ভালোভাবে লেখাপড়া করে চিকিৎসক হতে চায়।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) প্রকাশিত এসএসসির ফলাফলে লিতুন জিরা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। হাত-পা ছাড়াই জন্ম নেওয়া লিতুন জিরা থুতনি দিয়ে লিখে জিপিএ-৫ পাওয়ার খবর দেশজুড়ে আলোচিত হয়।

একের পর এক পরীক্ষায় অদম্য ইচ্ছেশক্তির বলে বলীয়ান হয়ে লিতুন জিরা মেধা ও প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। ভবিষ্যতে এই মেধাবী ও লড়াকু সন্তান সমাজের পিছিয়ে পড়া ও আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।

মণিরামপুর উপজেলার গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় লিতুন জিরা।

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার সাতনল খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান ও জাহানারা বেগম দম্পতির দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে লিতুন জিরা ছোট। বড় ছেলে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন।

অদম্য মেধাবী লিতুন জিরার বাড়িতে ফুল-মিষ্টি নিয়ে ইউএনও

পরিবারের ও সহপাঠীরা জানায়, লিতুন জিরা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ও জেএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে। প্রাথমিকে বৃত্তি পায় সে। শ্রেণির সেরা শিক্ষার্থীর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চায়ও রেখেছে চমক জাগানো অবদান। লিতুন জিরার একাগ্রতা আর অদম্য ইচ্ছেশক্তির কাছে তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হার মেনেছে। উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি বা পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যক্রমেও স্বীকৃতি পেয়েছে সে।

লিতুন জিরার বাবা হাবিবুর রহমান জানান, তিনি গণমাধ্যমকর্মীসহ প্রশাসনের সবার কাছে কৃতজ্ঞ। সবাই যার যার অবস্থান থেকে বরাবরই সহযোগিতা করেছেন লিতুন জিরাকে।

মা জাহানারা বেগম জানান, তিনিও কৃতজ্ঞ। সবাইকে বরাবরের মতো পাশে থাকার অনুরোধ তার।

মণিরামপুরের ইউএনও নিশাত তামান্না বলেন, প্রশাসন সবসময় লিতুন জিরার পাশে থাকবে। একাগ্রতা ও প্রবল ইচ্ছেশক্তি থাকলে সবকিছু অর্জন করা যায়, তার নজির স্থাপন করেছে লিতুন জিরা। তিনি লিতুন জিরার জিপিএ-৫ পাওয়ার খবরে খুবই খুশি হয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসকও তার সাফল্যে খুশি হয়েছেন বলে জানান। অচিরেই লিতুন জিরাকে জেলা প্রশাসকের পক্ষ হতে সংবর্ধিত করা হবেও তিনি জানান ইউএনও।

জানা যায়, সব বাঁধা টপকে সমাজের ৮-১০ জন স্বাভাবিক শিশুর মতোই এগিয়ে চলেছে লিতুন জিরা। বরং এক্ষেত্রে স্বাভাবিক শিশুর চেয়েও দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে সে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে পর পর দুই বছর লিতুন জিরা উপজেলা পর্যায়ে মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন, ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রচনা প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন, একই সালে জাতীয় শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতায় গোল্ড মেডেল অর্জনসহ একই বছরের ৪ জানুয়ারি লিতুন জিরা খুলনা বেতারে গান গাওয়ার সুযোগ পায়।

লিতুন জিরার মা জাহানারা বেগম আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন, জন্মের পর মেয়ে লিতুন জিরার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় অনেক রাত চোখের পানিতে ভাসিয়েছেন। যার দুই হাত-পা নেই, সেই মেয়ে বড় হয়ে কী করতে পারবে, এমন অজানা শঙ্কায় আঁতকে উঠতেন তিনি। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়ের লেখাপড়ার প্রবল আগ্রহ ও মেধার স্বাক্ষরতায় সেই আশঙ্কা আশার আলোয় রূপ নিয়েছে তার কাছে।

বাবা কলেজ শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি যে কলেজে চাকরি করেন, দীর্ঘ ১৯ বছরেও সেটি এমপিওভুক্ত হয়নি। তারপরও ছেলেমেয়েদের কখনো অভাব বুঝতে দেননি। হাঁটাচলা করতে না পারা লিতুন জিরা শিশু বয়স থেকে কর্দমাক্ত পথ মাড়িয়ে ঝড়-বর্ষা মাথায় নিয়ে হুইল চেয়ারে করে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে গেছেন তিনি। এসএসসিতেও সে প্রত্যাশিত ফলাফল পেয়েছে। এখন কলেজেও তাকে প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, লিতুন জিরা ভবিষ্যতে সমাজের পিছিয়ে পড়া ও আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। সেই স্বপ্ন পূরণে তিনি সবার দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন।

মিলন রহমান/এমএন/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।