ব্রাহ্মণবাড়িয়া

পুলিশ হেফাজতে যুবকের মৃত্যু, ক্যাম্প ইনচার্জ গ্রেফতার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ০৯:২৩ এএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে আব্দুল্লাহ (২৭) নামে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্যাম্প ইনচার্জ পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিম উদ্দিনকে সাময়িক বহিষ্কারের পর গ্রেফতার করা হয়েছে।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এদিন নিহতের ছোট ভাই সাকিল মিয়া বাদী হয়ে নবীনগর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় ছলিমগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মহিম উদ্দিনসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

নিহত আব্দুল্লাহ বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেজখালী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের আবুল মিয়ার ছেলে। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নিহতের পরিবার, স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ছলিমগঞ্জের তবি মিয়ার বাড়িতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর চুরির ঘটনা ঘটে। অজ্ঞাতপরিচয় চোর তার বাড়ি থেকে নগদ ৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তবি মিয়ার আত্মীয় নবীনগর থানায় অভিযোগ করেন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তবি মিয়া, আল আমিন ও আয়নালসহ অজ্ঞাতনামা ২০-২৫জন আব্দুল্লাহকে চোর সন্দেহে ছলিমগঞ্জ বাজারের সিএনজিস্যান্ডের সামনে আটক করে। পরে তারা প্রথমে আব্দুল্লাহকে রাস্তায় ও পরে বাড়িতে নিয়ে গণপিটুনি দেয়। তবি মিয়ার বাড়িতে আটকে রেখে আব্দুল্লাহকে নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে তারা প্লাস দিয়ে আব্দুল্লাহর হাতে ও কপালের চামড়া উঠিয়ে ফেলে। পরে আব্দুল্লাহকে সলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মাহিম উদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করে। স্থানীয় একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আব্দুল্লাহকে পুলিশ ক্যাম্পে নেওয়া হয়। মাহিম উদ্দিন ও তার লোকজন বিষয়টি কাউকে কিছু না জানিয়ে আব্দুল্লাহকে অবৈধভাবে ছলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে আটকে রেখে নির্যাতন করে। মিথ্যা চুরির অপবাদে পুলিশের নির্যাতনে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে আব্দুল্লাহ।

রোববার বিকেলে ছলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা আব্দুল্লাহকে ছলিমগঞ্জ অলিউর রহমান (প্রাইভেট) হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আব্দুল্লাহর মৃত্যু হয়।

এই ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই সাকিল মিয়া বাদী হয়ে সোমবার নবীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ছলিমগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মহিম উদ্দিনসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

এর প্রেক্ষিতে স্থানীয় জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে সোমবার ছলিমগঞ্জ ক্যাম্প ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে। উত্তেজনা বাড়তে থাকায় প্রশাসন ফাঁড়িটি বন্ধ করে দেয় ও সেনা মোতায়েন করে।

নিহতের চাচাতো ভাই শাকিল মিয়া বলেন, মিথ্যা চুরির অভিযোগে আমার ভাইকে গণপিটুনি দিয়েছে। আমার ভাইয়ের পায়ে সুই ঢুকিয়েছে। প্লাস দিয়ে কপালে চামড়া তুলেছে। ছলিমগঞ্জ পুলিশ ক্যাম্পে আটকে রেখে আমার ভাইকে নির্যাতন করেছে পুলিশ।

এই বিষয়ে জানতে রোববার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত নবীনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলামের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সোমবার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ওবায়দুর রহমান জানান, এই ঘটনায় ক্যাম্প ইনচার্জকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। পরে তাকে মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

আবুল হাসনাত মো রাফি/এমএন/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।