কস্তুরাঘাট এলাকায় নদীবন্দর

সীমানা নির্ধারণ নিয়ে আবারও স্থানীয়দের বাধার মুখে বিআইডব্লিউটিএ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৮:০২ পিএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট এলাকায় নদীবন্দরের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে ফের বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে বাধা দিতে রোববার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে শহরের বাঁকখালী নদীর খুরুশকুল ব্রিজ এলাকায় অবরোধ করেন স্থানীয়রা। ক্ষতিগ্রস্তদের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ে পিছু হটেন বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১-৫ সেপ্টেম্বর বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকায় নদীবন্দরের সীমানা উল্লেখ করে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এতে কয়েকশ কাঁচা ও আধাপাকা বাড়ি গুঁড়িয়ে দেন উচ্ছেদকারীরা। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট হলে উচ্ছেদ বন্ধ ও বাস্তবতার ভিত্তিতে নদীবন্দরের সীমানা নির্ণয়ের আদেশ দেন আদালত। এরপর বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকলেও শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে আবারও সীমানা নির্ধারণ কার্যক্রম শুরু করেন তারা।

রোববার দুপুরে কাঁটাতার ও পিলার দিয়ে সীমানা নির্ধারণে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা আসবেন—এমন খবরে সকাল থেকেই স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। সকাল থেকে বদরমোকাম, কস্তুরাঘাট ও পেশকারপাড়ার লোকজন গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ শুরু করেন। এতে ওই এলাকার যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

দুপুর ১২টার দিকে একই জায়গায় কয়েকশ নারী-পুরুষ জড়ো হয়ে মানববন্ধন করেন। এটা দেখে পুলিশ, র‌্যাব, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা কস্তুরাঘাট এলাকায় পৌঁছান। তারা আসার পর উত্তেজনা আরও বাড়ে। শেষ পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণের কাজ বন্ধ করেই ফিরে যায় বিআইডব্লিউটিএ।

বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বরের ওই উচ্ছেদ অভিযানে ৪৯৬টি অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে প্রায় ৬৩ একর জমি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার জমি আবার দখলের ঝুঁকি থাকায় কাঁটাতারের বেড়া ও সীমানা পিলার দেওয়ার উদ্যোগ নেয় বিআইডব্লিউটিএ।

বিক্ষোভকারীদের একজন পারুল ইয়াসমিন বলেন, ‘উচ্ছেদ এলাকায় আমাদের জমি ও খতিয়ান আছে, খাজনাও দিচ্ছি। বিনা কারণে আমরা কয়েকবার ক্ষতির মুখে পড়েছি। আদালতের দারস্ত হয়েছি। আদালতের আদেশ না মেনে বিআইডব্লিউটিএ এখানে কাঁটাতার-পিলার দিলে আমরা মানবো না। ক্ষতিপূরণ কিংবা আলোচনা না করে কাঁটাতার দেওয়া চলবে না।’

আরেক নারী ছফুরা খাতুন বলেন, ‘কষ্টের টাকায় জমি কিনেছিলাম। সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে আর স্থানীয় হয়েও আমাদের বসতবাড়ি গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। লাঠি নিয়ে নেমেছি, হয় মরবো নয় নিজেদের অধিকার আদায় করবো। শহীদ হবো এখানে। ক্ষতিপূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ জায়গায় স্থায়ী কোনো অবকাঠামো হতে দেবো না।’

স্থানীয়দের বিক্ষোভে একাত্মতা ঘোষণা করে জেলা মহিলা দলের সভাপতি ও কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাসিমা আকতার বকুল বলেন, ‘বাঁকখালী নদীর দখল নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর পৃথক তিনটি মামলা করেছে। বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ নিয়েও হাইকোর্টে তিনটি মামলা হয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি না করে ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করে জায়গাজমিতে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা অন্যায়।’

তবে আন্দোলনকারীদের এসব দাবি অস্বীকার করে বিআইডব্লিউটিএর কক্সবাজার নদীবন্দরের পোর্ট অফিসার মো. আবদুল ওয়াকিল বলেন, ‘অবরোধকারীদের বড় অংশ ভাসমান লোকজন। তাদের জমির বৈধ কাগজ নেই। উচ্ছেদ করা নদীর জমিতে সীমানা পিলার বসানো হচ্ছে। এটাকে কেন্দ্র করে পুরোনো দখলদাররা ভাসমান লোকজন জড়ো করে সরকারি কাজে বাধা দিচ্ছেন।’

২০১৯ সালের যৌথ জরিপ ম্যাপ অনুযায়ী এলাকায় উচ্চ ও টেকসই সীমানা পিলার স্থাপন, সাইনবোর্ড বসানো আর কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ ৩-১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

আবদুল ওয়াকিল আরও বলেন, ‘সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, আমরা কাউকে উচ্ছেদ করছি না। এ মুহূর্তে কোনো উচ্ছেদ অভিযানও পরিচালিত হচ্ছে না। শুধু ১-৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে এলাকার সীমানা উদ্ধার করা হয়েছিল সেই অংশে পিলার বসাবো। আমাদের উদ্বেগ পিলার না বসালে, সীমা দৃশ্যমান না থাকলে ২০২৩ সালের মতো দখলদার আবারও দখলের চেষ্টা করতে পারে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুর রহমান জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে পিলার স্থাপনের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সায়ীদ আলমগীর/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।