করোনাদুর্যোগে দুস্থ রোগীদের টাকা নিচ্ছেন না ডা. রামমোহন সরকার
করোনা সংক্রমণের ভয়ে যখন অনেক ডিগ্রিধারী চিকিৎসক সেবা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন, ঠিক তখনই বিনামূল্যে হোমিও চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীদের ওষুধ, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিচ্ছেন হোমিও চিকিৎসক রামমোহন সরকার।
ডা. রামমোহন সরকার রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি বাজারের নারুয়া রোডে মোল্লা মার্কেটের শাপলা হোমিও হলের হোমিও চিকিৎসক এবং রাজবাড়ী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক। প্রতিদিন তিনি বাসা ও চেম্বার মিলে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন রোগীর চিকিৎসা দেন।
ডা. রামমোহন সরকার বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে অসচ্ছল, হতদরিদ্র, দুস্থ ও কর্মহীন পরিবারগুলো পড়েছে চরম বিপাকে। তারা বড় বড় চিকিৎসক বা হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার বা সেবা না পেয়ে ফিরে বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। একজন চিকিৎসক হিসেবে আমি সেটা মানতে পারিনি। যে কারণে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আছে জেনেও ২০ মার্চ থেকে সব ধরনের রোগীদের সেবা দিতে শুরু করি।
তিনি বলেন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেবা দিচ্ছি। প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী আসে। এরমধ্যে নারী ও শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি। অসচ্ছল, হতদরিদ্র ও দুস্থ রোগীদের বিনামূল্যে এবং কর্মহীন হয়ে পড়া রোগীদের ৩০ শতাংশ ছাড়ে চিকিৎসা দিচ্ছি। এছাড়া রোগীদের করোনাভাইরাসে সচেতন করার পাশাপাশি বিনামূল্যে মাস্ক এবং স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়িত স্বেচ্ছাসেবীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়া হচ্ছে।
ডা. রামমোহন সরকার আরও বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছি। সামাজিক মূল্যবোধের জায়গা থেকেই করোনাযুদ্ধে এগিয়ে এসেছি। করোনাদুর্যোগ যতদিন থাকবে, ততদিন এভাবে সেবা দেব।
বাজারের স্থানীয়রা জানান, ডা. রামমোহন সরকারের হোমিও হলে প্রতিদিন নারী, শিশু, বয়স্কসহ অনেক রোগী আসেন। করোনা আতঙ্কের মধ্যেও তিনি নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে রোগী দেখছেন। অনেক ডাক্তার রোগী দেখা তো দূরের কথা, তারা তাদের চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছে।
হোমিও চিকিৎসা নিতে আসা নবাবপুরের রোগী সন্তান সম্ভাবা রানু বেগম বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে যেতে ভয় লাগে, আবার অনেকে বলে হাসপাতালে ডাক্তার নাই। যে কারণে ডা. রামমোহন সরকারের কাছ থেকে আসছি।
আরেক রোগী এনামুল করিম বলেন, আমি দীর্ঘদিন কানপাকা রোগে ভুগছি। হাসপাতালে অনেক রোগী আসা-যাওয়া করে। কার মধ্যে কী আছে, সেটা তো জানেন না। ফলে হাসপাতালের ডাক্তারের কাছে না গিয়ে হোমিও ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি। ডা. রামমোহন সরকার আমাকে দেখার পর ওষুধ ও মাস্ক দিলেও ওষুধের টাকা কম নিয়েছেন। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলেও তিনি যত্ন সহকারে রোগী দেখছেন।
সাহিদা বেগম নামে এক রোগী বলেন, টাকার অভাবে ভালো ডাক্তারের কাছে যেতে পারিনি।। দীর্ঘদিন ধরে হার্টের সমস্যায় ভুগছি। তাই হোমিও চিকিৎসা নিতে এসেছি। এখানে মাঝে মধ্যেই আসি। এবার ডাক্তার কোনো টাকা নেয়নি। আরও মাস্ক দিয়েছে।
উল্লেখ্য, রাজবাড়ীতে এখন পর্যন্ত ১৫ জন করোনারোগী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে বালিয়াকান্দিতে একজন।
রুবেলুর রহমান/বিএ/এমকেএইচ