জেলার সবচেয়ে বড় গরু ‘বরিশালের বস’
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় খামারে বেড়ে ওঠা প্রায় ৫৫ মণ ওজনের ‘বরিশালের বস’র দাম হাঁকা হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। আর বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ৩০ মণ ওজনের ‘তুফান’র দাম হাঁকা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। এরমধ্যে ‘বরিশালের বস’ই জেলার সবচেয়ে বড় গরু বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
‘বরিশালের বস’ নাম দেওয়া বিশালদেহী ষাঁড়টি অস্ট্রেলিয়ান হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের। আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বড়বাশাইল গ্রামের শামীম সিকদার তার খামারে বেশ যত্ন করে তিন বছর ধরে পশুটি লালন-পালন করেছেন।
খামার মালিক শামীম সিকদার জাগো নিউজকে বলেন, তিন বছর আগে খুলনার শাহাপুর এলাকা থেকে তিনি ফ্রিজিয়ান জাতের বাছুরটি কিনেছিলেন। তখন বয়স ছিল এক বছর। এরপর তার খামারে নিয়ে এসে লালন-পালন করেন। তিন বছরে ‘বরিশালের বস’র খাবার বাবদ খরচ হয়েছে ছয় লাখ টাকার বেশি। আনুষাঙ্গিক আরও এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে গরুটির ওজন ২ হাজার ২০০ কেজি বা প্রায় ৫৫ মণ।
শামীম সিকদার বলেন, গরুটি উচ্চতা প্রায় সাড়ে ৬ ফুট আর লম্বায় সাড়ে ১০ ফুট। প্রতিদিন গরুটির খাবার খরচ লাগে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। ভুসি, চিটা গুড়, খৈল, ছোলা, খুদ ভাত, ঘাস ইত্যাদি খাবার খাইয়ে তাকে বড় করে তোলা হয়েছে। তাছাড়া কাঁঠাল খেতে পছন্দ করে বরিশালের বস। তাই মৌসুমে প্রতিদিন কাঁঠালের ব্যবস্থা থাকে। চার-পাঁচটি কাঁঠাল খেয়ে ফেলতে পারে অনায়াসেই। তবে মোটাতাজাকরণের জন্য কোনো ওষুধ খাওয়ানো হয়নি।
খামার মালিক শামীম সিকদার বলেন, তার খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে ২০৬টি গরু আছে। তবে এর মধ্যে বরিশালের বসের হাবভাব অনেকটা আলাদা। তাছাড়া তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন আকার, ওজন, দাম ও সৌন্দর্য্য বিবেচনায় জেলার বিভিন্ন খামারে বেড়ে ওঠা গরুর মধ্যে তার বরিশালের বসই সেরা। ৫৫ মণ ওজনের ষাঁড়টিকে এবারের কোরবানি ঈদ উপলক্ষে তিনি বিক্রি করতে চান। দাম চাচ্ছেন ৩৫ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, ষাঁড়টি দেখতে প্রতিদিন তার খামারে উৎসুক মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। তবে কোরবানির ঈদ এগিয়ে এলেও এখনো তেমন ক্রেতা আসছে না। বড় গরু হাটে বা বাইরের জেলার হাটে নিয়ে বিক্রি করা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। তাই হাটে বা বাজারে না নিয়ে খামারেই বিক্রি করতে চান বিশালদেহী ষাঁড়টি। তাতে দামে কিছুটা ছাড় দিতে হলেও তিনি রাজি আছেন।
তিনি বলেন, দূরদূরান্ত থেকে কয়েকজন গরুটি দেখতে আসছেন। কিন্তু দামে মিলছে না। ২২ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে চেয়েছেন বরিশালের বাইরের একজন ক্রেতা। ৩০ লাখ টাকার বেশি হলে বিবেচনা করে দেখবেন বলে তিনি জানান।
আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামান তরফদার বলেন, খামারি শামীম সিকদারের ‘বরিশালের বস’ নামের ষাঁড়টি এ উপজেলার সবচেয়ে বড় গরু। তাছাড়া আশপাশের উপজেলায় এত বড় আর কোনো গরুর খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে বরিশালের বসকে কেনার ক্রেতা বরিশাল অঞ্চলে পাওয়া কঠিন হবে। তাই এটিকে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে নিয়ে বড় হাটে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরাদি ইউনিয়নের রানীর হাট এলাকার ব্যবসায়ী ইমদাদুল হক রায়হানের প্রায় ৩০ মণ ওজনের তুফান নামে গরুটি এরই মধ্যে এলাকায় সাড়া ফেলেছে। ব্যবসায়ী রায়হানের ইটভাটায় আলাদা একটি শেডে রেখে লালন-পালন করা হচ্ছে তুফানকে।
ব্যবসায়ী ইমদাদুল হক রায়হান জানান, তুফানের মতো গরু লালন-পালন খুবই ব্যয়বহুল ও কষ্টের। খাবার ও বাসস্থান ভিন্ন হলেও পরিবারের অন্য সদস্যদের মতোই অতি যত্ন করেই গরুটি পালন করা হয়েছে। গরুটিকে দেখভাল করার জন্য আলাদা করে মানুষ রাখতে হয়েছে।

ফ্রিজিয়ান জাতের তুফান
শখ করে ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি তিনি দুই বছর আগে ১ লাখ ৫ হাজার টাকায় কিনেছিলেন। তখন বয়স ছিল এক বছর। ওজন ছিল মাত্র চার মণ। এর পর থেকে পরিবারের সদস্যদের মতো এটিকে আদরযত্ন করেছেন। ধান, গম ও ভুট্টার গুড়া, খড় ও নেপিয়ার ঘাসসহ সুষম খাদ্য ও উপযুক্ত চিকিৎসা দিয়ে তুফানকে বড় করে তোলা হয়েছে।
ব্যবসায়ী রায়হান জাগো নিউজকে বলেন, গরুটি এখানে নিয়ে আসার পর অপরিচিত কাউকে দেখলেই শিং দিয়ে গুঁতা দেওয়ার চেষ্টা করত। বেশ রাগী স্বভাবের ছিল। এসব কারণে স্থানীয় শিশু-কিশোররা এক সময় গরুটিকে তুফান বলে ডাকা শুরু করে। এভাবে গরুটির নাম তুফান হয়ে যায়। তুফানের বয়স এখন তিন বছর।
গরুটির মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত লম্বা প্রায় ৭৯ ইঞ্চি, চওড়া ৯৪ ইঞ্চি এবং উচ্চতা প্রায় ৬৫ ইঞ্চি। গায়ের রং সাদা-কালো। চার দাঁতের গরুটির ওজন প্রায় ১ হাজার ২০০ কেজি বা প্রায় ৩০ মণ।
ইমদাদুল হক রায়হান বলেন, তুফানের পেছনে প্রচুর অর্থ খরচ হচ্ছে। এখন প্রতিদিন গরুটির খাবারের পেছনে খরচ হয় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। আলাদা লোক রাখা থাকলেও দিনের বেশির ভাগ সময়ই তুফানের পরিচর্যায় খেয়াল রাখতে হয় তাকে। খাওয়ানো, গোসল করানো, চিকিৎসাসহ সবকিছুতে খেয়াল রাখতে হয়। শুরুতে তুফানের দাম ১০ লাখ টাকা হাঁকলেও ক্রেতার সাড়া না পেয়ে দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলাউদ্দিন মাসুদ জানান, উপজেলার রানীরহাট এলাকার ব্যবসায়ী ইমদাদুল হক রায়হান এতবড় গরু লালন-পালন করছেন জানা ছিল না। বিষয়টি জানতে পেরে সোমবার বিকেলে সরেজমিনে লোক পাঠিয়ে খবর নিয়েছি। উপজেলায় যে কয়টা ষাঁড় আছে, সেগুলোর তুলনায় আকারে তুফান বড়। আমরা চেষ্টা করছি বরিশাল ও বাইরের বিভিন্ন এলাকায় যাদের বড় গরু কেনার আগ্রহ রয়েছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে।
বরিশাল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নুরুল আলম জানান, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে জেলার বেশিরভাগ খামারি দেশি জাতের গরু পালন করেছেন। এবার জেলায় ৮ হাজার ১৩ জন খামারি ১ লাখ ৮ হাজার ৬০০টির মতো গবাদিপশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন।
ডা. নুরুল আলম বলেন, এবার সদর উপজেলার চরকাউয়া, কাশিপুর, আগৈলঝাড়া, বাকেরগঞ্জসহ আরও কয়েকটি স্থানে বিভিন্ন খামারে বেশ বড় আকারের ষাড় বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যতদূর খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বড়বাশাইল গ্রামের শামীম সিকদারের খামারে থাকা ষাঁড়টি জেলার সবচেয়ে বড় গরু। তবে এ ধরনের বড় গরু কেনার মতো ক্রেতা বরিশালে তেমন একটা নেই। এ কারণে অনলাইনে কেনাকাটায় মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। খামারি ও ক্রেতাসাধারণকে কোরবানির পশু অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয়ের অনুরোধ করা হচ্ছে। অনলাইনে পশু বেচাকেনার জন্য প্রাণিসম্পদ জেলা ও ১০ উপজেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্যোগে ‘অনলাইন কোরবানির হাট’ নামের ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছে। আশা করছি অনলাইনে ভালো দামে গরুগুলো বিক্রি করতে পারবেন খামারি ও মালিকরা।
সাইফ আমীন/এফএ/জেআইএম