চাষি বাজারে দৈনিক আড়াই কোটি টাকার রসুন বিক্রি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ০২:২০ পিএম, ২৭ মার্চ ২০২৩

শরীয়তপুরের জাজিরার কৃষকদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে পদ্মা সেতু। জমে উঠেছে স্থানীয় মিরাশা চাষি বাজার। ফলে ঘুরছে এখানকার অর্থনৈতিক চাকাও। প্রতিদিন এ বাজারে আড়াই কোটি টাকার রসুনসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা মিরাশা বাজারে আসেন। পেঁয়াজ-রসুনসহ বিভিন্ন শাক-সবজির কিনে নিয়ে যান। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ফলে এ বাজারে সারাদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন।

চাষের মাছেই বাজার ভরা 

সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষকরা রসুন, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচামরিচ, টমেটো, করলা, বেগুন, ধনেপাতাসহ নিজেদের চাষের বিভিন্ন মশলা ও শাক-সবজি বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন। বাজারটিতে মশলা ও শাক-সবজির প্রায় দুই শতাধিক পাইকারি দোকান রয়েছে। এরমধ্যে ছোট বড় ৬৫-৭০টি রসুন বেচাকেনার আড়ত রয়েছে। এসব দোকানে নারী-পুরুষ সমান তালে কাজ করেন। সারাদিন কাজ করে তারা ৫০০-৭০০ টাকা ইনকাম করতে পারেন।

নুর ইসলাম মিয়া নামের স্থানীয় এক চাষি বলেন, বিঘা প্রতি জমিতে রসুন চাষ করতে ২৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন প্রতি বিঘা জমির রসুন ৫০-৫২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত ৬ বছর ধরে রসুন চাষ করে লোকসান দিয়ে আসছিলাম। এ বছর ভালো দাম পাওয়ায় ভালো আছি।

আরও পড়ুন: চাষের মাছেই বাজার ভরা 

আড়ৎ মালিক আব্দুল জলিল মাদবর বলেন, কাঁচা রসুনের বাজার দর ৫০-৭০ টাকা। প্রতিদিন ৫-১২ হাজার কেজি রসুন বিক্রয় হয়। পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর এখানকার রসুন ঢাকা, নাটোর, খুলনা, যশোর, চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ রাজধানীর শ্যাম বাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যায়। উৎপাদন ও মান ভালো হওয়ায় এ রসুন দেশের প্রায় সব জেলা থেকে পাইকারা আসে।

jagonews24

নারায়ণগঞ্জের ভোলতা থেকে আসা পাইকার মো. বেলায়েত চোকদার বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে ঢাকা থেকে মাত্র ২ ঘণ্টায় জাজিরার চাষি বাজারে এসে পৌঁছেছি। এখানকার রসুনের মান ভালো। খুব কম সময়ে রসুনসহ কাঁচামাল কিনলাম।

যশোর থেকে আসা ফয়সাল সরদার নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, অনেক আগে থেকে জাজিরার চাষি বাজারে মোকাম করি। চাষি বাজারে আসি রসুন, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচামরিচসহ বিভিন্ন রকমের শাক-সবজি কিনি। নির্বিঘ্নে মালামাল কিনে গন্তব্যে ফিরতে পারি। এ বাজারের রসুন অন্য এলাকার রসুনের তুলনায় বেশ ভালো এবং দামে কমে পাওয়া যায়।

সত্তার খান নামের রসুনের এক শ্রমিক জানান, দলবদ্ধ হয়ে কাজ করি। কোনো সময় বসে থাকতে হয় না। কয়দিন পর পেঁয়াজ উঠবে। এখানে কাজ করে সংসার ভালোই চলছে।

কল্পনা নামের এক নারী শ্রমিক জানান, চাষি বাজারে কাজ করে সংসার চলে। ছেলেমেয়ে নিয়ে সুখে আছি। সারাদিন কাজ করে ৬০০-৭৫০ টাকা পাই।

jagonews24

মিরাশা চাষি বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোকন খালাসি বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকে বেচাকেনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সারাদেশ থেকে দ্রুত সময়ে আমাদের বাজারে আসেন পাইকাররা। দুই থেকে তিন ঘণ্টা ব্যবধানে রাজধানীসহ সারাদেশে মালামাল পৌঁছানো যায়।

এ বিষয় জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) মো. জামাল হোসেন বলেন, এবার জাজিরায় রসুনের ভালো ফলন হয়েছে। এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরও বেশি চাষ হয়েছে। কাঁচা রসুন ৫৫-৬০টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

আরএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।