যে কারণে পদ্মায় মিলছে না ইলিশ
ইলিশ নোনা পানির মাছ হলেও ডিম পাড়ার সময় পাওয়া যায় মিঠা পানি অর্থাৎ নদীতে। আর ভৌগলিক কারণে রাজবাড়ী জেলার ৫ উপজেলার ৪টিই পদ্মা নদী তীরবর্তী। ফলে এ জেলার জেলেদের জালে ধরা পড়ে রুপালি ইলিশ। কিন্তু আগে এ পরিমাণ বেশি হলেও বিগত কয়েক বছর ধরে পদ্মায় আর সেভাবে ইলিশ পাওয়া যায় না। এতে হতাশ রাজবাড়ীর জেলে ও ব্যবসায়ীরা।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীর পদ্মায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭৯৭ মেট্রিক টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮৩০ মেট্রিক টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮১১.৮৬ মেট্রিক টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮৩৮.৩৬ মেট্রিক টন ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮২৬ মেট্রিক টন ইলিশ পাওয়া গেছে। যা গত অর্থ বছরের তুলনায় ১২ মেট্রিক টন কম।
সাধারণ জনগণ বলছেন, স্থানীয়ভাবে ইলিশ পেলে অনেক কম দামে পেতেন। পদ্মায় ইলিশ না পাওয়ায় বেশি দামে কিনতে হয়। যা তাদের মতো নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের সাধ্যের বাইরে। আসলেই কি ইলিশ পাচার হয়, নাকি সত্যিই ধরা পড়ছে না। যদি নদীতে ইলিশ না পাওয়া যায় তাহলে কারণ চিহ্নিত করে রাজবাড়ীর পদ্মায় ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে কর্তৃপক্ষের যথাযথ হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

এদিকে জেলার রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দে সবচেয়ে বেশি ইলিশ পাওয়া যায়। জেলায় ৫ হাজার জেলে ইলিশ ধরার সঙ্গে জড়িত।
জেলে খোকন মন্ডল, মোস্তফা বলেন, মতিয়ার মোল্লা, সফিকসহ অনেকে বলেন, তারা বহু বছর ধরে পদ্মায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আগে কিছু ইলিশ মাছ পেলেও ৫-৬ বছর ধরে নদীতে কোনো ইলিশ পাচ্ছেন না। মূলত চাঁদপুরসহ ওই অঞ্চলে অধিকহারে ইলিশ আহরণ, নদীর গভীরতা ও স্রোত কম থাকাসহ বিভিন্ন কারণে রাজবাড়ীর পদ্মায় পাওয়া যায় না ইলিশ। মৌসুমের সময় কিছু পাওয়া গেলেও সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা নদীতে নামেন না। আবার নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে পাওয়া যায় না ইলিশ। ফলে রুই, কাতলা, পাঙ্গাস, বোয়ালসহ নদীর ছোট মাছ ধরেই তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। ইলিশ মাছ পেলে তারা যেমন লাভবান হতেন, তেমনি জেলাবাসীও কম দামে পেতো স্বাদের এই মাছ।

পদ্মা তীরবর্তী উড়াকান্দা বাজারের মৎস্য আড়তদার রওশন আলী সরদার ও আলমগীর শেখ বলেন, পদ্মায় কোনো ইলিশ মাছ নাই। মাছ ধরা পড়লে তাদের আড়তে আসতো। প্রতিদিন এক থেকে দুই লাখ টাকার নদীর বিভিন্ন ধরনের মাছ এই আড়তে বেচা-কেনা হয়। কোনো কোনো সময় বেশিও বেচা-কেনা হয়।
রাজবাড়ীর মাছ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফয়েজ উদ্দিন ফকির বলেন, পদ্মার ইলিশ সুস্বাদু। কিন্তু রাজবাড়ীর পদ্মার ইলিশ তারা পান না। তারা বরিশাল, ভোলা, মহিপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, পাথরঘাটাসহ বিভিন্ন স্থানের ইলিশ এনে রাজবাড়ীতে বিক্রি করেন। যার কারণে দামও বেশি পড়ছে। পদ্মায় ইলিশ পেলে দামও একটু কম হতো।

পদ্মা খরস্রোতা নদী হওয়ায় রাজবাড়ীর অংশসহ উজানে মাত্রাতিরিক্ত পলি পড়ে অসংখ্য ডুবচর সৃষ্টি, দখল-দূষণসহ নানা কারণে ইলিশের অবাধ বিচরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে দিন দিন রাজবাড়ীতে কমছে ইলিশের প্রাপ্তি। এছাড়া নদী হারিয়েছে তার চিরচেনা রূপ। এসব বাধা পেরিয়ে রাজবাড়ীর পদ্মা নদীতে আসছে না তেমন ইলিশ। যার কারণে মিলছেও না ইলিশ।
রাজবাড়ী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলছেন, পদ্মা নদীর ডুবচরে বাধাগ্রস্ত হয়ে ইলিশ সাগরে ফিরে যায়। যার কারণে দিন দিন নদীতে ইলিশ কমে যাচ্ছে। ডুবচর খনন করে ইলিশের অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করা গেলে পদ্মায় ইলিশের উৎপাদন বাড়তে পারে। তারপরও পদ্মায় ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে মা ইলিশ সংরক্ষণ, জাটকা সংরক্ষণসহ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নদীতে অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি জেলের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইলিশের সঙ্গে সর্ম্পৃক্ত জেলার প্রায় ৫ হাজার জেলেকে নিয়মিত সরকারি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেন তারা।
এফএ/এএসএম