পূবালী ব্যাংকের রেমিটেন্স চুরির সময় হ্যাকার গ্রেফতার
নরসিংদীর ঘোড়াশালে পূবালী ব্যাংকে হ্যাকিং করে বিদেশি রেমিটেন্সের টাকা চুরির সময় ফারুক নামে এক হ্যাকারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল শাখায় অর্থ চুরির সময় তাকে হাতেনাতে আটকের পর পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃত ফারুক মিয়া উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজৈর গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় ছিলেন। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আন্তর্জাতিক হ্যাকার চক্রের সদস্য বলে স্বীকার করেছেন।
পুলিশ ও ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন যাবত একটি চক্র ওয়েস্টান ইউনিয়নের মাধ্যমে বিদেশ থেকে প্রেরিত অর্থের গোপন নম্বর হ্যাকিং করে। এরপর নকল ভোটার আইডি কার্ড ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের অর্থ চুরি করে আসছে। চক্রটি বিকেলে ঘোড়াশাল পূবালী ব্যাংক শাখায় হানা দেয়।
ঘোড়াশাল পূবালী ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক আক্তারুজ্জামান জানান, কুয়েত প্রবাসী সায়েম রমিজ উদ্দিন তার ভাই মো. আলামিন মিয়ার নামে ওয়েস্টান ইউনিয়ন মানি ট্রান্সফার এর মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা বাংলাদেশে পাঠান। হ্যাকার চক্রের সদস্যরা গোপন নম্বরটি হ্যাক করে ফেলে। চক্রটির সদস্য ফারুক মিয়া (৩০) গোপন নম্বর ও নকল ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে আমাদের শাখায় টাকা উত্তোলন করতে আসেন।
টাকা দেয়ার সময় ভোটার আইডি কার্ডটি দেখে ব্যাংকের ক্যাশিয়ার মেহেদী হাসান ও জুয়েল মিয়ার সন্দেহের সৃষ্টি হয়। পরে তারা প্রবাসীর ভাই আলামিনের কাছে ফোন করলে অর্থ চুরির বিষটি নিশ্চিত হয়। পরে আলামিন নামধারী প্রতারক ফারুক মিয়াকে চ্যালেঞ্জ করলে তিনি দৌঁড়ে ব্যাংক থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে তাকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
অন্যদিকে, গত সপ্তাহে হ্যাকার ফারুক গোপন নম্বর হ্যাক করে ঘোড়াশাল অগ্রণী ব্যাংকের শাখা থেকে ২০ হাজার টাকা উত্তেলন করেছে।
ঘোড়াশাল অগ্রণী ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, গ্রেফতারকৃত ফারুক গত সোমবার ফরিদা ইসয়ামিন নামে এক গ্রাহকের গোপন নম্বর চুরি করে আমাদের শাখা থেকে ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে।
টাকা উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওয়েস্টান ইউনিয়ন মানি ট্রান্সফারের সিস্টেম হলো বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর পর সেখানকার ব্যাংক থেকে একটি গোপন নম্বর (পাসওয়ার্ড) দেয়া হয়।
ব্যাংক কর্মকর্তা পাসওয়ার্ড, নাম ও ভোটার আইডির উপর ভিত্তি করে টাকা প্রদান করেন। হ্যাকাররা পাসওয়ার্ড নম্বর হ্যাক করার পর নকল আইডি কার্ড তৈরি করে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে আসেন। এখন আইডি কার্ড যাচাই করার কোনো পদ্ধতি ব্যাংকে নেই। তাই গোপন নম্বরের উপর ভিত্তি করেই টাকা দেয়া হয়। আর সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে হ্যাকাররা।
গ্রেফতারকৃত হ্যাকার ফারুক পুলিশকে জানিয়েছে, কুয়েত থেকে জুয়েল নামে এক হ্যাকার তাকে গোপন নম্বর সরবরাহ করে। পরে সে নম্বর নিয়ে নকল আইডি কার্ড তৈরি করে তিনি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেন।
পলাশ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফারুক হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষটি স্বীকার করেছেন। তার কাছ থেকে একাধিক নকল ভোটার আইডি কার্ড জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
এআরএ/আরআইপি