হাটিকুমরুল-রংপুর চার লেনে ব্যয় ১১ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা
ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের হাটিকুমরুল-রংপুর অংশ চার লেন হচ্ছে। ১৯০ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ সংক্রান্ত প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটির আওতায় বঙ্গবন্ধু সেতুর অন্য প্রান্তে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল-রংপুর পর্যন্ত ১৫৭ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেন করা হবে। এজন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন সম্পন্ন হয়েছে। তবে ব্যয় অন্যান্য চার লেন প্রকল্পের তুলনায় একটু বেশি।
প্রসঙ্গত, ঢাকা-চট্টগ্রাম ১৯২ দশমিক ৩ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে ব্যয় হচ্ছে ৩ হাজার ৭৯৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হচ্ছে ১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এ হিসাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের চেয়ে হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণে ২ দশমিক ৬৪ গুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে।
আর ৮৭ দশমিক ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ৮১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হচ্ছে ২০ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেনের চেয়ে হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়কে ব্যয় হচ্ছে ২ দশমিক ৫১ গুণ বেশি।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক এ প্রসঙ্গে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম বা ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন করার ক্ষেত্রে কোনো জমি অধিগ্রহণ করতে হয়নি। আগে থেকেই জমি অধিগ্রহণ করা ছিল বলে কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণ ব্যয় কম ছিল। তবে হাটিকুমরুল-রংপুর চার লেন করার জন্য বেশকিছু জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী জমির দামও অনেক বেড়ে গেছে। এতে নির্মাণ ব্যয় কিছুটা বেশি হওয়াই স্বাভাবিক।
কমিশন সূত্র জানায়, হাটিকুমরুল-রংপুর চার লেন প্রকল্পে জমি প্রয়োজন হবে ১৮৪ হেক্টর। এজন্য জমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় বাদ দিলে চার লেন নির্মাণে ব্যয় দাঁড়াবে ৬ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। আর কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়বে ৪৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা, যা চলমান প্রকল্প দুটির দ্বিগুণের বেশি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বনপাড়া-হাটিকুমরুল অংশটি নির্মাণ করা হয় ২০০৫ সালে। সে সময় কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হয়েছিল ৫ কোটি টাকা। হাওরের ভেতর দিয়ে হওয়ায় সেখানে ৯ মিটার পুরু মাটির স্তর তৈরি করতে হয়। সেটাই ছিল বাংলাদেশে মহাসড়ক নির্মাণে সর্বোচ্চ ব্যয়ের উদাহরণ।
প্রকল্পটির অর্থায়নে এশিয়ান হাইওয়ে, বিমসটেক ও সাসেক রোড করিডোরের আওতাভুক্ত হওয়ায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এক্ষেত্রে ৯ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা সহায়তা দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, রংপুর-হাটিকুমরুল মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ে ১ ও ২-এর রুটভুক্ত। আবার বিমসটেক রোড করিডোর ৩ ও সাসেক হাইওয়ে করিডোর ৫-এর রুটভুক্তও এ মহাসড়ক। চার দেশের (বিবিআইএন) মোটরযান চলাচলে প্রাথমিক চিহ্নিত রুটগুলোর একটি এটি। ফলে অভ্যন্তরীণের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠায় রংপুর-হাটিকুমরুল মহাসড়কটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আগামী বছর শুরু করে ২০১৯ সালে প্রকল্পটি শেষ করার কথা।
এমএ/জেএইচ/এমএস