স্কুলশিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রমে স্থবিরতা

মুরাদ হুসাইন
মুরাদ হুসাইন মুরাদ হুসাইন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:১৩ এএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১
সারাদেশে এখন পর্যন্ত ১২ লাখ স্কুলশিক্ষার্থীকে প্রথম ডোজের আওতায় আনা হয়েছে

সারাদেশে স্কুলশিক্ষার্থীদের করোনা টিকার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এখন পর্যন্ত কার্যক্রমের আওতায় এসেছে ৫৫টি জেলা। যেসব জেলায় টিকা দেওয়া হচ্ছে সেখানে রয়েছে ব্যাপক ধীরগতি। কেন্দ্র দূরে হওয়া, সংরক্ষণে প্রতিবন্ধকতা, এসএমএস প্রাপ্তি নিয়ে সমস্যাসহ নানান জটিলতায় এ কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।

এরই মধ্যে সারাদেশে এক কোটির বেশি স্কুলশিক্ষার্থীর মধ্যে ১২ লাখ শিক্ষার্থীকে প্রথম ডোজ টিকার আওতায় আনা হয়েছে। ১ জানুয়ারি থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হবে বলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে জানা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের (২০২১ সাল) ১ নভেম্বর রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে আনুষ্ঠানিকভাবে ১২-১৭ বছরের শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ঢাকা মহানগরের আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয় অস্থায়ী টিকাকেন্দ্র। ২৬ নভেম্বর থেকে শুরু হয় জেলা পর্যায়ের কার্যক্রম। বর্তমানে দেশের ৫৫টি জেলায় এ কার্যক্রম চলছে। সেখানে ১২-১৭ বছরের শিক্ষার্থীদের দেওয়া হচ্ছে টিকা।

Vaccine-School.jpg

মিরপুরে ঢাকা কমার্স কলেজে টিকা নিতে শিক্ষার্থীদের ভিড়/ফাইল ছবি

টিকা কার্যক্রম শুরুর পর সুরক্ষা অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন জটিলতা, ১৭ ডিজিটের জন্মনিবন্ধন সনদ গ্রহণ না করা, টিকাকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা, টিকার জন্য এসএমএস না আসা, কেন্দ্রে টিকা সংকটসহ নানা জটিলতা তৈরি হয়। এসব কারণে টিকা থেকে বঞ্চিত হয় অনেকে। এ কারণে সুরক্ষা অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন না হলেও পরিচয়পত্র নিয়ে কেন্দ্রে গেলে টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে রেজিস্ট্রেশন না থাকলে শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না টিকার সনদ।

মাউশির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এ পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় ১২ লাখ শিক্ষার্থীকে করোনা টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থীকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে পরীক্ষার্থীদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে দেওয়া হয় করোনার টিকা। ১ জানুয়ারি থেকে তাদের দেওয়া হবে দ্বিতীয় ডোজের টিকা।

জেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের টিকার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি রয়েছে। তাদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে টিকা কার্যক্রম। কমিটিতে জেলা প্রশাসক ও জেলার সিভিল সার্জেন্ট প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী যে গতিতে টিকা কার্যক্রম শুরুর কথা ছিল সেটি হয়নি। দায়িত্বরতদের অবহেলার কারণে টিকা কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ঢাকায় সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে অধিকাংশই প্রথম ডোজ পেয়েছে। তবে সারাদেশে ১২-১৭ বছরের মোট এক কোটির অধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে গত দুই মাসে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে প্রায় ১২ লাখ শিক্ষার্থীর। ঢাকার শিক্ষার্থীদের জন্য দ্বিতীয় ডোজ শুরু হলেও জেলা পর্যায়ে এটা কবে শুরু হবে তা এখনো অনিশ্চিত।

Vaccine-School.jpg

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিটি জেলা সদরে টিকাকেন্দ্র করায় দূর থেকে অনেকে আসতে আগ্রহ পাচ্ছে না। নানা জটিলতার কারণে কেউ কেউ আবার টিকা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছে। পরে আর তারা আসছে না। এ বিষয়ে সরকারিভাবে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

লালমনিরহাট হাতিবান্ধা ইউনিয়নের একজন অভিভাবক অভিযোগ করেন, তার ছেলে সালমান নবম শ্রেণিতে পড়ে। টিকার জন্য সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করার ১২ দিন পর এসএমএস আসে। পরে তারা নির্ধারিত সময়ে কেন্দ্রে গিয়ে অপেক্ষা করে তিন ঘণ্টা। কিন্তু টিকা না পেয়ে ফিরে আসে। সন্তানকে আর টিকা দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন এই অভিভাবক।

অপরদিকে আরেক অভিভাবক কুড়িগ্রাম চিলমারী উপজেলার বাসিন্দা হায়দার আলীর অভিযোগ একই। তিনি জানান, তার স্কুলপড়ুয়া মেয়ে নাবিলা হায়দারকে দুই দফায় জেলা সদরের কেন্দ্রে নিয়েও টিকা ছাড়া ফিরে আসতে হয়েছে। টিকা সংকট থাকায় তার মতো অনেকে এসএমএস পেয়েও টিকা দিতে পারেনি।

Vaccine-School.jpg

১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলার পর উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা

জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক ও স্কুলশিক্ষার্থীদের টিকা তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক শাহেদুল খবির জাগো নিউজকে বলেন, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন কারণে টিকাদান কার্যক্রমে কিছুটা ধীরগতি হয়েছে। জেলা পর্যায়ে টিকা মজুত রাখায় কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়েছে। টিকা মজুতের জন্য নির্ধারিত তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়। যেসব স্কুলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে রাখা হয়েছে টিকা। এ ধরনের জায়গা সংকট থাকায় জেলা পর্যায়ে সদরে টিকাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেশিদিন কেন্দ্র রাখা সম্ভব হচ্ছে না, সেখানে একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। এসব কারণে জেলা পর্যায়ে দ্রুতগতিতে টিকা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, সব শিক্ষার্থীকে দুই ডোজ টিকার আওতায় আনা হবে। এরই মধ্যে ঢাকা মহানগরের শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার পর দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া শুরু হবে।

ঢাকা মহানগরের পর জেলা পর্যায়ের ১২-১৭ বছরের শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে ৪৭টি জেলায় এ কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে ৫৫টি জেলায় টিকা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান মাউশির পরিচালক।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে টিকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিভাগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় টিকা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

এমএইচএম/জেডএইচ/এএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।