টেলিভিশনের টিআরপি প্রকাশে আদালতের নিষেধাজ্ঞা


প্রকাশিত: ১২:৪১ পিএম, ০৮ জুন ২০১৬

দেশের টেলিভিশন রেটিং (টিআরপি) প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এমআরবি বাংলাদেশকে ভুল তথ্য প্রদান করার কারণে তাদের তথ্য সরবরাহ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত।

টেলিভিশনের দর্শকপ্রিয়তা যাচাইয়ের উপায় হিসেবে এমআরবি সাপ্তাহিক ভিত্তিতে যে টিআরপি তথ্য প্রদান করত যা এই আদেশের ফলে বন্ধ করা হল। একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ জুন ঢাকা যুগ্ম জেলা জজ আদালত এই রায় প্রদান করেন।

ইতোপূর্বে টিআরপির নির্ভরযোগ্যতার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন টেলিভিশন ও সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করে আসছিল, যা আদালতের এই রায় দ্বারা প্রমাণিত হল।   

বাংলাদেশে টেরেস্টোরিয়াল আর স্যাটেলাইট মিলে ৩০টি চ্যানেল আছে। আরো বেশ কিছু চ্যানেল সম্প্রচারের অপেক্ষায়। কিন্তু কোন টেলিভিশনের অনুষ্ঠান সর্বাধিক জনপ্রিয়, তা নিয়ে রয়েছে বিভ্রান্তি । একসঙ্গে বেশ কয়টি চ্যানেলই দাবি করে তাদের অনুষ্ঠানগুলো শীর্ষে। এ নিয়ে বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারের শিকার হন দর্শক। পাশাপাশি টিআরপির ফলে বিজ্ঞাপনদাতা ও চ্যানেল কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত বিভ্রান্ত হচ্ছেন বলেও অনেক টিভি চ্যানেল কর্তাব্যক্তি অভিযোগ করেছেন। এর মূল কারণ মিটারের স্বল্পতা, রিপোর্ট প্রদানের অসচ্ছতা এবং লিয়াজোঁ স্থাপন করা।

আর এই কারণে দেখা যায় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের অনেক মানসম্পন্ন অনুষ্ঠানও দর্শকপ্রিয়তা পাচ্ছে না। আবার একটি সাধারণ অনুষ্ঠানের দর্শক অকল্পনীয়। মাঝে মধ্যে তো এরকম হয় যে, এক চ্যানেলের প্রচারিত নাটকের চেয়ে ওই সময়ে অন্য চ্যানেলে প্রচারিত বিজ্ঞাপনের দর্শক অনেক বেশি থাকে। ফলে এই প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা এবং নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বারবার।  

বিগত কয়েক বছরের জরিপ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এমআরবি একেক সময় একেক টিভি চ্যানেলের সঙ্গে টিআরপি বাড়ানোর দায়িত্ব নেয়। যে চ্যানেলের অনুষ্ঠান এক সপ্তাহে প্রথম হয়, পরের সপ্তাহে সেই একই অনুষ্ঠান দেখিয়ে সেই চ্যানেলের অবস্থান হয় ১৫ নম্বরে। আবার এরকমও নজির দেখা গেছে, পর পর ছয় ঈদে শীর্ষে থাকে যে চ্যানেলটি সপ্তম ঈদে তার অবস্থান ১০ নম্বরে।

অভিযোগ রয়েছে, এই কোম্পানির জরিপটি হাতে পেতে চাইলেও চ্যানেলকে গুনতে হয় অর্থ। বার্ষিক গ্রাহক হবার নাম করে কোম্পানিটি গ্রাহকদের কাছ থেকে ফি নিচ্ছে ভ্যাট ব্যতীত ১২ লাখ টাকা।

আর অনুষ্ঠান নির্মাতা ও প্রযোজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কাছে টিআরপি হলো বিভীষিকারূপী দৈত্যবিশেষ। কারণ এই টিআরপির উত্থান বা পতনই তাদের অনুষ্ঠানের দীর্ঘায়ু অথবা মৃত্যু ঘটাতে পারে। এ কারণে অনেক সময় দেখা যায়, খুব জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠানও টিআরপির অভাবে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। অথচ ওই টিআরপিটি ছিল সম্পূর্ণই ভূয়া!

এর বাইরেও বিদেশি চ্যানেলপ্রীতির নিদর্শন তো রয়েছেই। বাংলাদেশের টিভি দর্শক বছরজুড়ে টিভি অনুষ্ঠান কম দেখলেও বিভিন্ন উৎসব আয়োজনের বিশেষ অনুষ্ঠান রুটিন করেই দেখে থাকেন। তাদের উদ্ভট জরিপে এমনও দেখা গেছে ঈদের সময় পিক আওয়ারের বিরতিহীন অনুষ্ঠানের দর্শক থেকে একই সময়ে ভারতীয় বস্তাপচা অনুষ্ঠানের দর্শক বেশি। ফলে দেশীয় টিভিতে বিজ্ঞাপন মূল্য কমে যাচ্ছে। আর বিজ্ঞাপন মূল্য কমার কারণে মানহীন হচ্ছে দেশীয় টিভির অনুষ্ঠানগুলো। সর্বোপরি চ্যানেল হারাচ্ছে দর্শক।
   
এসব কারণেই ২০১৪ সালের ৩ জুন বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব টিভি চ্যানেল ওনার্স’ (অ্যাটকো) ওই জরিপ বর্জন করে। তাদের ভাষ্যমতে, এমআরবির জনপ্রিয়তা যাচাই পদ্ধতি বিজ্ঞানসম্মত নয়। তবে ভালো কোনো জরিপ কোম্পানি দেশে গণযোগাযোগের যেকোনো মাধ্যমের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে চাইলে স্বাগত জানানো হবে বলেও তারা জানান। এ প্রসঙ্গে তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

টেলিভিশন রেটিং পয়েন্টস বা সংক্ষেপে টিআরপির ধারণাটির বিশ্বজুড়ে পরিচিতি থাকলেও বাংলাদেশের টিভি দর্শকদের কাছে এই বিষয়টি খুব একটা পরিচিত নয়। তবে আমাদের দেশে টিআরপির ধারণাটি নতুন হলেও ইতোমধ্যে এটি বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও চ্যানেলসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং বিজ্ঞাপনদাতাদের দৃষ্টিতে গুরুত্ব পেতে শুরু করেছিল।

কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি করায় এমআরবিকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আদালতের রায়কে গণমাধ্যমের সর্বস্তরের সংশ্লিষ্ট সবাই দেশের টেলিভিশন শিল্প রক্ষায় এটি একটি যুগান্তকারি পদক্ষেপ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

এলএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।