নেপালে জেন জি আন্দোলনের ৩ মাস পরেই সংস্কার রূপরেখা সই, কী আছে চুক্তিতে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩৭ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
নেপালে সংস্কার রূপরেখা সই/ ছবি: ফেসবুক@ পিএম সুশীলা কার্কি

নেপালে সরকার পতনের তিন মাস পরেই সংস্কার রূপরেখায় সই করেছে অন্তর্বর্তী সরকার ও জেন জি আন্দোলনের নেতারা। এই চুক্তির মাধ্যমে গত সেপ্টেম্বরের জেন জি নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হলো। ওই আন্দোলনে নেপালি কংগ্রেস ও সিপিএন–ইউএমএল নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল।

গত বুধবার (১০ ডিসেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী সুশিলা কার্কি ১০ দফার এই চুক্তিতে সই করেন। জেন জি আন্দোলনের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন শহীদ পরিবারের প্রতিনিধি ভোজ বিক্রম থাপা। তবে চুক্তি সইয়ের পরপরই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে জেন জিদের একাংশ বিক্ষোভ করে।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, এই চুক্তি জেন জি আন্দোলনের চেতনা ও জনআকাঙ্ক্ষার যথাযথ প্রতিফলন ঘটায়নি। ‘জেন জি মুভমেন্ট নেপাল’-এর নেতা অজয় সোরাডি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানস্থলেই প্রকাশ্যে চুক্তির কাগজ ছিঁড়ে ফেলেন। প্রধানমন্ত্রী সুশিলা কার্কি অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে আরেক জেন জি নেতা মিরাজ ঢুঙানাও এই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেন।

আরও পড়ুন>>
শীতল নেপালের উত্তপ্ত রাজনীতি
নেপালে ভোটের হাওয়া/ রাজনীতির সমীকরণ বদলে দিচ্ছে সরকার পতনের কান্ডারিরা
নেপালেও ‘বালিশ কাণ্ড’: বৃহত্তম দুর্নীতি মামলায় আসামি সাবেক মন্ত্রীসহ ৫৫ জন
নেপালে জেন-জি বিক্ষোভে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর দলের বড় সমাবেশ

তবে আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ সুদান গুরুং, পুরুষোত্তম যাদব, রক্ষা বাম, তাশি লাজোম ও ভাবনা রাউত চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

কী আছে সংস্কার রূপরেখায়?

চুক্তির মূল দিকগুলোতে সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ দিতে একটি কমিশন গঠন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার, বিচার বিভাগ ও সরকারি প্রশাসনে সংস্কার, জেন জি আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের বিচার ও ক্ষতিপূরণ এবং দুর্নীতি দমনের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। এই চুক্তিতে সেপ্টেম্বরের জেন জি আন্দোলনকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গণআন্দোলন’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। নেপালে এর আগে ১৯৯০ ও ২০০৬ সালের আন্দোলন প্রথম ও দ্বিতীয় গণআন্দোলন হিসেবে পরিচিত।

নেপালের ইতিহাসে এই প্রথম ডিজিটাল নেতৃত্বাধীন আন্দোলন এবং সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিরোধকে নাগরিক মতপ্রকাশের বৈধ রূপ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলো। চুক্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের চরিত্র অরাজনৈতিক এবং এটি একটি ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি থেকে জন্ম নিয়েছে।

সরকার ও জেন জি পক্ষের প্রতিনিধিরা যৌথভাবে চুক্তির খসড়া প্রস্তুত করেন। সরকারের পক্ষে আলোচনায় ছিলেন সূর্য ঢুঙেল এবং জেন জি পক্ষের প্রতিনিধি ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রাজু চাপাগাঁই।

এছাড়া, গত ৮–৯ সেপ্টেম্বরের সহিংস আন্দোলনে প্রাণহানি ও সরকারি-বেসরকারি সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী ব্যক্তি ও পরিস্থিতি তদন্তে গঠিত গৌরী বাহাদুর কার্কি নেতৃত্বাধীন কমিশনের কার্যপরিধি আরও সম্প্রসারণে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে।

স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সুশিলা কার্কি বলেন, ‘আমরা চাই, তরুণরাই এই দেশকে নেতৃত্ব দিক। জেন জেড আন্দোলনের ক্ষেত্রে নেপাল এখন বিশ্বে একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে।’

চুক্তির প্রস্তাবনায় সংবিধানের প্রাসঙ্গিকতা ও বৈধতা স্বীকার করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, আবাসন, ভূমি, ভাষা, সংস্কৃতি, লিঙ্গসমতা ও সমষ্টিগত অধিকারকে রাষ্ট্রীয় নীতির অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ফেডারেল ব্যবস্থা, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ও বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা সৃষ্টি, উদ্ভাবন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে।

চুক্তিতে জেন জি আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার ব্যক্তিদের মুক্তির কথাও বলা হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ড বা সংগঠিত গুরুতর অপরাধে জড়িতদের ক্ষেত্রে তদন্ত শেষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হলে ১৫ দিনের মধ্যে তাদের মুক্তির সুপারিশ করবে কমিশন।

চুক্তিতে আরও বলা হয়েছে, আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবারের জন্য জরুরি ও দীর্ঘমেয়াদি সহায়তায় একটি উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। ক্ষতিপূরণ, বিনামূল্যে চিকিৎসা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা এবং শহীদদের স্মরণে উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেওয়ার কথাও এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

আন্দোলন চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনীর শক্তি প্রয়োগ নিয়েও চুক্তিতে পৃথক তদন্ত ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে আইনগত দুর্বলতা, নিরাপত্তা বাহিনীর কাঠামোগত সমস্যা ও অন্যান্য কারণ চিহ্নিত করে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ ও তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হবে।

দুর্নীতি দমন, রাজনৈতিক কোটা ও দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ বন্ধ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অপারদর্শিতা দূর করাও চুক্তির অন্যতম লক্ষ্য। সরকারি জমি ও অর্থ ব্যবহার করে রাজনৈতিক নেতা ও দলগুলোর নামে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ট্রাস্ট, ফাউন্ডেশন ও তহবিল তদন্ত করে প্রয়োজন হলে সেগুলো বিলুপ্ত ও সম্পদ রাষ্ট্রায়ত্ত করার কথাও বলা হয়েছে।

এছাড়া আগামী ৫ মার্চ অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন এবং ‘নোটা’ (None of the Above)সহ নির্বাচন সংস্কারের আইনি বিধান প্রবর্তনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

সূত্র: কাঠমান্ডু পোস্ট
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।