নেপালে প্লেন বিধ্বস্ত

অবতরণের সময় ‘উইং ফ্ল্যাপ’ খোলেনি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৩২ এএম, ২০ জানুয়ারি ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত

নেপালের পোখারায় বিধ্বস্ত এটিআর ৭২-এর পাইলটরা অবতরণের সময় উইং ফ্ল্যাপ সম্পূর্ণরূপে স্থাপন করতে হয়তো ব্যর্থ হয়েছে। সেকারণে এ ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, প্রাথমিক তদন্তের পর এমনটাই জানা গেছে। যদিও গত রোববার ফ্লাইট ৯৬১ বিধ্বস্ত হওয়ার সঠিক কারণ ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার বা ব্ল্যাক বক্স পরীক্ষা করার পর জানা যাবে।

আরও পড়ুন>৭২ আরোহী নিয়ে নেপালে প্লেন বিধ্বস্ত, নিহত ৪০

প্লেনের ডানার পেছন দিকে ‘উইং ফ্ল্যাপ’ থাকে। এটি প্লেনটির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। অবতরণের সময় গতি কমিয়ে রানওয়ে স্পর্শ করার আগ মুহূর্তে প্লেনকে সোজা, স্থির রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই উইং ফ্ল্যাপ।

প্রাথমিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ফ্ল্যাপগুলো সম্পূর্ণরূপে স্থাপন করা হয়নি।

দুর্ঘটনার পরপরই দুটি মোবাইল ফোনের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। দ্বিতীয় ভিডিওটি ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর অনলাইনে প্রকাশ পায় এবং ভাইরাল হয়। এটি সোনু জয়সওয়াল নামে একজন ভারতীয় যাত্রীকে বিমানটি নামার কয়েক সেকেন্ড আগে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে দেখা যায়। ফুটেজে দেখা গেছে, ফ্ল্যাপগুলো পুরোপুরি নিচে ছিল না। সেকারণে বিশেষজ্ঞরা সন্দেহ করছেন, এ কারণে হয়তো বিমানটি থেমে যেতে পারে।

এটিআর-এর একজন ক্যাপ্টেন কুমার পান্ডে বলেন, ভিডিওটি দেখার পর আমি হতবাক হয়েছি। জানালা থেকে, আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, বিমানের উইং ফ্ল্যাপের একপাশ পুরোপুরি স্থাপন করা হয়নি। আমি ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে কথা বলছি, তবে বিস্তারিত তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মনে হচ্ছে পাইলটরা গোলমাল করেছে। যদি তাই হয়, এটা একটা বড় ধরনের অবহেলা। তারা মৌলিক চেকলিস্ট অনুসরণ করেনি।’

আরও পড়ুন>নেপালে প্লেন বিধ্বস্ত/দুর্ঘটনাস্থল থেকে ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার

পান্ডে বলেন, ল্যান্ডিং চেকলিস্ট অনুযায়ী, কো-পাইলট সাধারণত রিপোর্ট করে যখন বিমানটি ১ হাজার ফুটে নেমে যায়, যে স্তরে বিমানটি অবতরণের জন্য সম্পূর্ণরূপে স্থিতিশীল হওয়ার কথা। সাধারণত প্রতি ঘণ্টায় ২৯৬ কিলোমিটার গতিবেগে পাইলট ল্যান্ডিং গিয়ার ছেড়ে দেন। এ ধাপে ১৫ ডিগ্রিতে স্থাপন হয় ফ্ল্যাপ। যখন গতিবেগ ২৭৭ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার নিচে যায়, তখন ফ্ল্যাপগুলো ৩০ ডিগ্রিতে সেট করা উচিত। এই প্রক্রিয়া একটি মসৃণ অবতরণের জন্য বিমানকে স্থিতিশীল করে। পাইলটরা তখন বিমানটিকে রানওয়ের সঙ্গে সারিবদ্ধ করেন। কিন্তু ভিডিওতে ১৫ ডিগ্রিতে ফ্ল্যাপ দেখা যাচ্ছে।’

কাঠমান্ডু পোস্ট অন্তত চারজন এটিআর ক্যাপ্টেন ও তিনজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের সাধারণ উপসংহার হলো ‘পাইলটরা অবতরণের সময় বাধ্যতামূলক চেকলিস্ট বাদ দিয়ে থাকতে পারেন।’

এর আগে, রোববার দুর্ঘটনার পর পোখারা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মুখপাত্র অনুপ যোশি বলেন, আকাশ পরিষ্কার ছিল সেদিন।

আরও পড়ুন>নেপালে ৫ বছরের মধ্যে আরও একটি ভয়াবহ প্লেন দুর্ঘটনা

জোশি, একজন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারও, তিনি আরও বলেন, ‘ফ্লাইট ক্যাপ্টেন পরে রানওয়ে ১২ যা পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত, সেটিতে সুইচ করার অনুমতি চেয়েছিলেন। আমরা নিশ্চিত ছিলাম না কেন। অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, এবং সেই অনুযায়ী, বিমানটি অবতরণ করা শুরু করে।’

ইয়েতি এয়ারলাইন্সের একজন কর্মকর্তা পোস্টকে বলেছেন, এটি নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলেও ক্যাপ্টেন অঞ্জু খাতিওয়াদার জন্য পরিচিত ছিল। তিনি ফ্লাইট পরিচালনার সময় বাম আসনে ছিলেন।

রোববার (১৫ জানুয়ারি) পশ্চিম নেপালের কাস্কি জেলার পোখারায় ইয়েতি এয়ারলাইন্সের একটি প্লেন ৭২ আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত হয়। এখন পর্যন্ত ৭১ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১৫ জন বিদেশি নাগরিক।

সূত্র: দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট

এসএনআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।