হাড় ও দাঁত রক্ষা করবে এই মৌসুমি ফল
বছরের এই সময়টায় কাঁচাবাজারে স্টলে স্টলে দেখা যায় গাঢ় সবুজ আমড়া। টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি অনেকেরই প্রিয়, বিশেষ করে আচার বা চাটনি হিসেবে। তবে আমড়া শুধু স্বাদের জন্য নয়, এটি পুষ্টিগুণেও ভরপুর।
আমড়ায় আছে প্রচুর ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম ও ফাইবার, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা থেকে শুরু করে ত্বক, হজম ও হাড়ের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক এই মৌসুমি ফলের পুষ্টিগুণগুলো-
- ১. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়
আমড়ায় ভরপুর থাকে ভিটামিন সি, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সামান্য পরিমাণ আমড়া খেলে সর্দি-কাশি বা মৌসুমি সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ক্লিনিকাল বায়োকেমিস্ট্রি-তে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, ভিটামিন সি শরীরে অ্যান্টিবডি উৎপাদন বাড়ায় এবং সংক্রমণ থেকে কোষকে রক্ষা করে।
- ২. ত্বক ও চুলের যত্নে কার্যকর
আমড়ায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা ত্বককে টানটান রাখে ও বার্ধক্য বিলম্বিত করে। নিয়মিত আমড়া খেলে ত্বক উজ্জ্বল হয়, চুলও মজবুত হয়।

জার্নাল অব ডার্মাটোলজিকাল সায়েন্স-এর গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন সিসমৃদ্ধ ফল ত্বকের কোষ পুনর্গঠন ও ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
- ৩. হজমশক্তি উন্নত করে
আমড়ায় আছে প্রাকৃতিক ফাইবার, যা হজম প্রক্রিয়া সহজ করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া এর অল্প অ্যাসিডিক স্বাদ পাচকরস নিঃসরণ বাড়ায়, ফলে খাবার হজমে সুবিধা হয়। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায়ও আমড়াকে হজম শক্তিবর্ধক ফল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
- ৪. হাড় ও দাঁত মজবুত করে
আমড়ায় পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস, যা হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের জন্য এটি খুবই উপকারী।
জার্নাল অব ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির তথ্যমতে, নিয়মিত আমড়া খেলে শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণ বাড়ে ও হাড় ক্ষয় প্রতিরোধ হয়।
- ৫. ডায়াবেটিস ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
আমড়ার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, অর্থাৎ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায় না। এতে থাকা পলিফেনল উপাদান রক্তে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। পাশাপাশি এতে ক্যালরি কম থাকায় এটি ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
কীভাবে খাবেন: আমড়া কাঁচা বা পাকা—দুইভাবেই খাওয়া যায়। টুকরো করে সালাদ, চাটনি, স্মুদি কিংবা সরাসরি লবণ-মরিচ ছিটিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত ঝাল বা নোনতা আচার হিসেবে না খাওয়াই ভালো, এতে পুষ্টিগুণ কিছুটা নষ্ট হয়।
সতর্কতা: আবার আমড়ায় টক উপাদান বেশি থাকায় গ্যাস্ট্রিক বা আলসার রোগীদের পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। খালি পেটে না খাওয়াই ভালো।
সূত্র: ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ক্লিনিকাল বায়োকেমিস্ট্রি, জার্নাল অব ডার্মাটোলজিকাল সায়েন্স, জার্নাল অব ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আয়ুর্বেদিক ফুড রিসার্চ সেন্টার
এএমপি/জিকেএস