যতবার হামলার শিকার হয়েছেন নুরুল হক নুর

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩৯ পিএম, ৩০ আগস্ট ২০২৫
সবশেষ শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীর কাকরাইলে হামলার শিকার হন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, ছবি: জাগো নিউজ

মাথায় আঘাত, ভেঙে গেছে নাক ও চোয়ালের হাড়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে, চোখে রক্তজমাট বেঁধেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, ৪৮ ঘণ্টার আগে বলা যাচ্ছে না শঙ্কামুক্ত কি না।

এমন অবস্থা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন তিনি।

নুরুল হক নুরের ওপর নৃশংস হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠনসহ সচেতন নাগরিকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বইছে নিন্দার ঝড়। অনেকে বলছেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময় বেশ কয়েকবার হামলার শিকার হন নুর। গত বছরের ৫ আগস্টের পর সরকার বদলেছে, তবু নুরের ওপর এমন হামলা ন্যাক্কারজনক ঘটনা।

যতবার হামলার শিকার হয়েছেন ভিপি নুর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী নুরুল হক নুর ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে রাজপথের আন্দোলনে নামেন। তার হাত ধরেই রাজনীতির মাঠে আসেন আখতার হোসেন, নাহিদ হোসেন ও আসিফ মাহমুদরা।

আরও পড়ুন:

২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের মধ্যদিয়ে রাজনৈতিক পথচলা শুরু নুরের। সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্যানেলের প্রার্থী হয়ে। এরপর রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজের আসন আরও পাকাপোক্ত করেন। গঠিত হয় তার দল গণঅধিকার পরিষদ।

নুরের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায়। তার বাবা ইদ্রিস হাওলাদার ও মা মরহুম নিলুফা বেগম। তিন ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে নুর দ্বিতীয়। তার বাবা কৃষক ইদ্রিস হাওলাদার একসময় চরবিশ্বাস ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নুর একসময় মুহসীন হল ছাত্রলীগের মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। পরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িয়ে ছাত্রলীগ থেকে ছিটকে পড়েন। এরপর থেকেই একজন দক্ষ রাজনীতিক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়া শুরু করেন।

যতবার হামলার শিকার হয়েছেন ভিপি নুর

আরও পড়ুন:

নুরুল হক নুরের ওপর হামলার শুরুটা সেই কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই। ছাত্রলীগের দফায় দফায় হামলা, মামলা, নির্যাতন যেন পিছু ছাড়ছে না তার। গত কয়েকবছর বিশেষ করে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিগত সাত বছরের শাসনামলে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ বার হামলার শিকার হন নুর। এসব হামলার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো তাকেই বেশ কয়েকবার মামলা আর ধরপাকড়ের শিকার হতে হয়েছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের ৩০ জুন নুরের ওপর প্রথম হামলা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে নুরসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এরপর হামলার শিকার হন ২০১৯ সালের ১১ মার্চ, ডাকসু নির্বাচনের দিন। নির্বাচনে ভোট কারচুপির প্রতিবাদ করতে গিয়ে রোকেয়া হলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হন নুর। হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাকে। সেখানে বসেই ভিপি পদে জয়ের সংবাদ পান তিনি। ভিপি হয়ে ক্যাম্পাসে গিয়েও হামলার মুখে পড়েন নুর। পরদিন ১২ মার্চ ক্যাম্পাসে ঢোকার পর নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার ওপর হামলা চালায়। এ ছাড়াও ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল এক ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে এসএম হলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন নুর। সেখানেও তাকে কিলঘুষি মারা হয়।

আরও পড়ুন:

২০১৯ সালের ২৫ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ইফতারে গিয়ে জেলা ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়েন নুর। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে মঞ্চ থেকে ফেলে দেন। ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বরে টাঙ্গাইলের সন্তোষে মওলানা ভাসানীর মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের দু’দফায় হামলার শিকার হন নুরুল হক নুর।

যতবার হামলার শিকার হয়েছেন ভিপি নুর

২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর নুরুল হক নুরের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা। এতে নুরের বাম হাতের আঙুল ভেঙে যায়। সে সময় নুরুল হক নুর ডাকসুর ভিপি ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৬ মে বগুড়ায় ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েও হামলার শিকার হন নুর।

২০২৩ সালের ১৮ জুলাই গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয় দখল নিয়ে পুলিশের সঙ্গে হট্টগোল হয় গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের। এ সময় পুলিশের ধস্তাধস্তিতে নুরসহ দুইজন আহত হন। সে বছরই ২ আগস্ট বড় হামলার ঘটনা ঘটে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর হামলা-মামলা-হয়রানি বন্ধ, গুলিস্তানে মাদরাসা শিক্ষার্থী হাফেজ রেজাউল করিম হত্যা এবং বুয়েট শিক্ষার্থীদের আটকের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে সমাবেশ ডাকে নুরের দল। সেই সমাবেশে যোগ দিতে শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে টিএসসির কাছাকাছি এলে হামলার শিকার হন নুর।

আরও পড়ুন:

এরপর ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগেও বেশ কয়েকবার মামলা ও ধরপাকড়ের শিকার হন নুর। জুলাই-আগস্টে নাহিদ, হাসনাতদের অন্যতম সহযোদ্ধাও তিনি। গণঅভ্যুত্থানের সময় কারাবন্দি ও নির্যাতিত হতে হয় তাকে।

যতবার হামলার শিকার হয়েছেন ভিপি নুর

সবশেষ শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাতে রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টি (জাপা) ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। জাপার কার্যালয়ের সামনে দিয়ে গণঅধিকার পরিষদের একটি মিছিল যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বলেন, জাপার হামলার প্রতিবাদে রাত সাড়ে ৯টার দিকে গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয়ের সামনে সভাপতি নুরুল হক, তিনিসহ নেতাকর্মীরা সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক এ সময় তাদের ওপর হামলা চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

এসএনআর/এমএমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।