ইসির সংলাপে বক্তারা
নির্বাচনে ইসির মেরুদণ্ড শক্ত না হলে সব কিছুই কঠিন হবে
আসন্ন নির্বাচনে ইসির মেরুদণ্ড শক্ত না হলে সব কিছুই কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচনী সংলাপে অংশ নেওয়া বক্তারা। তারা বলেন, নির্বাচন কমিশনের যদি মেরুদণ্ড থাকে, যদি সাহস থাকে তবেই স্বাধীন হতে পারবে।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংলাপ হয়। এসময় শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীরা অংশ নেন।
নির্বাচন কমিশনকে সাহসী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, দেশের সাবেক তিন প্রধান বিচারপতির পরিণতি আপনারা দেখেছেন। একজন প্রধান বিচারপতিকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে ৫ আগস্টের আগে। আরেজনকে ৫ আগস্টের পর মব করে বের করে দেওয়া হয়েছে। আরেকজন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক এখন কারাগারে।
তিনি বলেন, আপনারা সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের পরিণতি দেখেছেন। তারা কিন্তু সেই সাহস ও মেরুদণ্ড দেখাতে পারেনি।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ, যদি মেরুদণ্ড থাকে, যদি সাহস থাকে তবেই স্বাধীন হতে পারবেন।
সংলাপ থেকে বেরিয়ে রোবায়েত ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সরকার যদি কোনো বাধা তৈরি করে, সরকারের কোনো উপদেষ্টাও যদি বাধা তৈরি করে তখন নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হবে সেটা মিডিয়ার সামনে এক্সপোজ করা। সরকারের কোন কোন লোক এবং কোন কোন নীতিমালা সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করলে সেটাও স্পষ্ট করতে ইসিকে বলেছি। সবাই মিলে বলেছি যে, সবচেয়ে দরকার হচ্ছে ইসির সাহস এবং মেরুদণ্ড।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে মিডিয়ার একটা অবাধ বিচরণ যেন থাকে। ভোটকেন্দ্র থেকে শুরু করে ভোটারদের জায়গা থেকে শুরু করে, ইলেকশন ক্যাম্পেইনে সর্বত্র যেন মিডিয়ার একটা ভিজিলেন্স যেন তৈরি করতে পারে সেটা বলেছি। এর মধ্য দিয়ে একটা ট্রান্সপারেন্সি তৈরি হবে।
সাংবাদিক, কলামিস্ট সোহরাব হাসান বলেন, এতদিন দেখে এসেছি যে সরকার নির্বাচন কমিশনের ওপর খবরদারি করে। আমরা বলেছি, নির্বাচন কমিশনকে এই শক্তি অর্জন করতে হবে, এই সাহস অর্জন করতে হবে, যাতে সরকারকে খবরদারি করতে পারে। কারণ শুধু নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু, অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন করা সম্ভব নয়, যদি সরকার, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী সহযোগিতা না করে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক গণতন্ত্রায়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক গণতন্ত্রায়নের কথা বলছি, যাতে কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব এই নির্বাচনে না থাকে। এটা নির্বাচন কমিশনের সামনে কঠিন পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় জয়ী হবে কি না সেটা ইসির বিষয়। জয়ী হলে সবাই অভিনন্দিত অভিনন্দিত করবে। আর জয়ী না হলে পূর্বসূরিদের কথা মনে রাখতে বলছি।
নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক করে সোহরাব হাসান বলেন, নির্বাচন হয় জনগণের ক্ষমতায়নের জন্যই। নির্বাচনে জনগণ বাছাই করবে তাদের প্রতিনিধি কে হবেন। কিন্তু সেই বাছাইয়ের যদি সুযোগ না থাকে যেটা আমরা ২০২৪, ২০১৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে দেখেছি, এই নির্বাচনেও সেই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যদি কোনো ব্যত্যয় ঘটে তাহলে নির্বাচন কমিশনকে শুধু কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে না, আগামী নির্বাচন যথেষ্ট যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
তিনি বলেন, কিছু দল বাদ দিয়ে নির্বাচন করার প্রস্তুতি চলছে। একটি পক্ষকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়ার কথা চলছে। ঐকমত্য কমিশনে ৩০টি দলের সঙ্গে কথা হচ্ছে। সেখান থেকেও কেউ যদি বলে নির্বাচনে যাবে না তাহলে পরিস্থিতি কী হবে, সে বিষয়টা ভাবতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা সেরা নির্বাচনের কথা বলেন। কাউকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে সেরা নির্বাচন কীভাবে হবে?
ইসির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের নির্বাচন করার যেমন মানসিকতা থাকতে হবে তেমনি নির্বাচন না করার মানসিকতাও থাকতে হবে। আপনাদের বিবেচনায় যদি মনে করেন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, তাহলে নির্বাচন থেকে সরে আসা উচিত, আপনাদের পদত্যাগ করা উচিত।
এমওএস/এমআইএইচএস/জিকেএস