কীভাবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জয়, জানালেন সুমন

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৮:৩৩ পিএম, ১৭ জুলাই ২০২৫

সময় আর সাফল্যে কত কিছুই না বদলায়! এইতো ক’দিন আগেও ব্যর্থতাই সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছিল টাইগারদের। শ্রীলঙ্কা সফরে প্রথমে টেস্ট সিরিজ পরাজয়, তারপর ওয়ানডেতে সিরিজ হাতছাড়া। আর সর্বশেষ টি-টোয়েন্টিতে শুরুতে বাজেভাবে হেরে পিছিয়ে পড়া। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো এবং সিরিজ বিজয় সহজ ছিল না মোটেই।

লিটন দাসের নেতৃত্বে তরুণ বাংলাদেশ দলটি সে কঠিন বাঁধা অতিক্রম করেই প্রথমবারের মত টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে শ্রীলঙ্কার মাটিতে। তাই ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে টিম বাংলাদেশ এখন আবার পাদপ্রদীপের আলোয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইতিহাস গড়ে সিরিজ বিজয়ে খুশি পুরো বাংলাদেশ।

লিটন দাসের দলকে নিয়ে কথা হচ্ছে অনেক বেশি। ওপেনার তানজিদ তামিম, অধিনায়ক লিটন দাস, অফস্পিনার শেখ মেহেদী, বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল, দুই মিডল অর্ডার তাওহিদ হৃদয় ও শামীম পাটোয়ারীর নৈপুণ্যের প্রশংসা সবার মুখে মুখে।

অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশ দিনকে দিন টি-টোয়েন্টিতেও ভাল খেলতে শুরু করেছে। মানে এখন আর শুধু ওয়ানডে নয়, বাংলাদেশ ২০ ওভারের ক্রিকেটেও ভাল খেলার সামর্থ্য তৈরি করেছে। বলে রাখা ভাল, ইতিহাস-পরিসংখ্যানও তাই জানাচ্ছে। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, গত ২ বছর বাংলাদেশ ওয়ানডের চেয়ে টি-টোয়েন্টিতে বেশি ম্যাচ জিতেছে।

কিন্তু বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন তা মানতে নারাজ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টিম বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি সিরিজ বিজয়ে আর সবার মত হাবিবুল বাশারও খুশি। তবে তিনি কিছুতেই মানতে নারাজ যে, বাংলাদেশ এখন ওয়ানডের চেয়ে টি-টোয়েন্টিতে বেটার দল।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জাগো নিউজের সাথে আলাপে হাবিবুল বাশার প্রথমেই বলে বসেন, ‘আমি কিছুতেই মানতে নারাজ যে আমরা টি-টোয়েন্টিতে ওয়ানডের চেয়ে ভাল দল। আমার কোনভাবেই মনে হয় না টি-টোয়েন্টি আমাদের শক্তির জায়গা। বিশ্বাস করি না, এই ফরম্যাটে আমরা তেমন প্রভাবশালী দল। আমাদের মূল শক্তির জায়গা এখনও ওয়ানডে। মূলত ওয়ানডেতে আগের চেয়ে সাফল্যের হার যতই কমে যাক, টি-টোয়েন্টি আমাদের শক্তির জায়গা নয়।’

এটুকু শুনে হয়ত ভাবছেন, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ বিজয়কে মোটেই আমল নিচ্ছেন না বাশার। আসলে তা নয়। হাবিবুল বাশার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রাপ্তি ও অর্জনের চেয়ে ক্রিকেটারদের মানসিক দৃঢ়তা ও অ্যাপ্রোচের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বর্তমানে বিসিবির হেড অফ গেম ডেভোলপমেন্ট বাশারের মত, এই সিরিজে বড় অর্জন হলো আন্ডার প্রেশার ভাল খেলা।

টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বাশার বলেন, ‘একটা ম্যাচ হারলে অনেক বেশি সমালোচনা হতো। টেস্ট আর ওয়ানডে সিরিজ হাতছাড়া করায় আমাদের এমনিতে টিম ছিল আন্ডার প্রেশারে। আর একটা ম্যাচ হারলে টি-টোয়েন্টি সিরিজও হাতছাড়া হয়ে যেত। তিন ফরম্যাটে সিরিজ হারিয়ে ঘরে ফেরাটা মোটেই সুখকর হতো না। একটা বড়সড় ধাক্কা লাগতো। চারদিক থেকে সমালোচনার তীর নিক্ষিপ্ত হতো। তাই শেষ ২ ম্যাচে ছিল বিরাট চাপ। প্রচন্ড মানসিক দৃঢ়তা দেখানো ছাড়া এই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো মোটেই সহজ ছিল না। এ অবস্থায় সিরিজে ফিরে আসা ও সিরিজ জয়ের জন্য দরকার ছিল প্রচন্ড মানসিক দৃঢ়তা। আমরা সেটা দেখিয়েছি।’

এজন্য ক্রিকেটারদের কৃতিত্ব দিয়েও পরক্ষণে বলে ওঠেন, ‘তবে এ সাফল্যকে খুব বড় করে দেখার কিছু নেই। আমার মনে হয় না টি-টোয়েন্টিতে অনেক কিছু করে ফেলছি। একটা সিরিজ জিতেছি, ভালো। বাট এটাই শেষ নয়। আমাদের কাজ হলো ধারাবাহিকতা বজায় রেখে খেলা। বিশ্বকাপ সামনে। বিশ্বকাপে ভাল করতে হলে কনসিসটেন্সিটা খুব দরকার হবে। আমরা এখনো ইনকন্সিসটেন্ট। আমাদের বিশ্বাসটা কমে গিয়েছিল। এ সিরিজ বিজয়ে সেটা আবার ফিরে আসবে। সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

বাশারের কাছে টিম বাংলাদেশের যে দিকটা খুব ভাল লেগেছে তাহলো, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যেমন খেলা দরকার, শেষ ২ ম্যাচে লিটন দাসের দল ঠিক তাই খেলেছে।

তার ব্যাখ্যা, ‘প্রথম ম্যাচে আমরা ভাল খেলিনি। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যেমন খেলার কথা তা খেলতে পারিনি; কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে ঠিক নিজেদের শুধরে নিয়ে যা করণীয়, তাই করেছে ক্রিকেটাররা। দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে আমরা ভাল খেলতে শুরু করেছি। টি-টোয়েন্টি যেভাবে খেলা উচিৎ আমরা ঠিক সেভাবে খেলেছি। পজিটিভ ছিলাম। অ্যাপ্রোচ ছিল ইতিবাচক।’

শেষ দুই ম্যাচের অ্যাপ্রোচ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে হাবিবুল বাশার বলেন, ‘দ্বিতীয় খেলায় আমরা অল্প রানে প্রথম ২ উইকেট হারিয়েও বুকড ডাউন হইনি। ফ্রি খেলে গেছি। আর দ্বিতীয় ম্যাচে দেখেন, টার্গেট ছিল মাত্র ১৩৩। ওভার পিছু রানের তাড়া ছিল না মোটেই। জিততে ওভার পিছু মাত্র সাড়ে ৬ রানের মত দরকার ছিল। তারপরও আমরা পজিটিভ অ্যাপ্রোচে ব্যাট করেছি। মারার বলগুলো ঠিক মেরেছি।’

‘এই অ্যাপ্রোচটা আমরা খুব ভাল লেগেছে। টি-টোয়েন্টিতে সেই অ্যাপ্রেচটাই দরকার। সেটা ইমপরট্যান্ট। আবার আগে ব্যাটিং করলে যেন অন্তত ১৮০ রানের টার্গেট নিয়ে খেলি। সেটাও খুব প্রয়োজন। এই টাইপের ক্রিকেট খেলা খুব দরকার। এ সিরিজে পরপর দুই ম্যাচে দেখেছি আমরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এভাবে খেলতে চাই। এটা যদি কন্টিনিউ করতে পারি, তাহলে ভাল হবে।’

এআরবি/আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।