তামিমরা সরে দাঁড়ালেও নির্বাচনী লড়াইয়ে তার পক্ষের সাতজন
তামিম ইকবাল ও তার পক্ষের ১৫ প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। আজ বুধবার সকালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামস্থ বিসিবি কার্যালয়ে স্ব-শরীরে এসে তামিম ও তার ১৫ পরিচালক প্রার্থী নিজ নিজ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
কেন এই মনোনয়ন প্রত্যাহার? কী কারণে তামিম ইকবাল তথা বিএনপিপন্থিদের নির্বাচন বয়কটের এ সিদ্ধান্ত? তামিম ইকবাল নিজেই দিয়েছেন তার ব্যাখ্যা।
বুধবার সকালে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে মিডিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে তামিম বলেন, ‘আমিসহ ১৪-১৫ জন (আসলে মোট ১৬ জন) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছি। প্রত্যাহারের কারণ খুবই স্পষ্ট। আমার কাছে মনে হয় না বিস্তারিত কিছু বলার আছে। নির্বাচন কোন দিকে যাচ্ছে, এই জিনিসটা এখন পরিষ্কার। যখন যেমন মনে হচ্ছে, যখন যা মনে হচ্ছে, তখন তা করা হচ্ছে। এটা আসলেই নির্বাচন নয়, ক্রিকেটের সঙ্গে এই জিনিসটা কোনো দিক থেকেই মানায় না।’
তামিম আরও যোগ করেন, ‘যারা নাম প্রত্যাহার করেছেন, তারা সবাই হেভিওয়েট প্রার্থী। তাদের ভোটব্যাংকও শক্তিশালী। এটা একটা প্রতিবাদ। দিনশেষে এই নোংরামির অংশ হয়ে আমরা থাকতে পারব না। বাংলাদেশ ক্রিকেট এটা ডিজার্ভ করে না। যারা এভাবে নির্বাচন করতে চান, তারা করতে পারেন। তবে আজ ক্রিকেট শতভাগ হেরে গেছে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আপনারা বড় গলায় বলেন, বাংলাদেশে ফিক্সিং বন্ধ করা লাগবে, আগে নির্বাচনের ফিক্সিং বন্ধ করার চিন্তা করেন। পরে ক্রিকেটের ফিক্সিং বন্ধ করার চিন্তা করবেন। এই নির্বাচন বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য একটা কালো দাগ হয়ে থাকল।’
বিএনপিপন্থি প্যানেলের নেতা জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটার তামিম ইকবাল যখন নির্বাচন নিয়ে এমন ঝাঁঝালো ভাষায় চরম মন্তব্য করে সরে দাঁড়ান, তখন নির্বাচন নিয়ে খানিকটা সংশয়, সন্দেহ জাগে বৈকি! সাধারণ ক্রিকেট অনুরাগীদের অনেকেই তাই বিসিবি নির্বাচন নিয়েও সংশয়ে পড়েছেন। কারও কারও কৌতূহলী প্রশ্ন, ‘আদৌ কি নির্বাচন হচ্ছে?’
তবে শেষ খবর, নির্বাচন হবে। আজ বুধবার বিকেল গড়াতেই বিসিবি নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে এবং জানিয়ে দিয়েছে তামিম ইকবাল ও তার পক্ষের ১৫ জন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও ঢাকার ক্লাব কোটা মানে ক্যাটাগরি-২ থেকে মোট ১৬ জন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এদের ভোটযুদ্ধে ১২ জন পরিচালক হিসেবে বিজয়ী হবেন।
আরও একটি প্রশ্ন ছিল অনেকের মনেই। তা হলো, এখন যে নির্বাচনটা হবে, তার ধরন কী হবে? আগে যেমন, সম্ভাব্য দুই প্যানেলের মধ্যে হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু সেখান থেকে তামিম ইকবালের নেতৃত্বে বিএনপিপন্থি প্যানেল ছিল, তার ১৬ জন যেহেতু সরে দাঁড়িয়েছেন, তাহলে এখন কেমন নির্বাচন হবে? ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া তথা সরকার সমর্থিত আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে যে প্যানেল আছে, তারাই কি শুধু নির্বাচনে অংশ নেবেন? মানে তবে কি একতরফা নির্বাচন হবে?
খালি চোখে তেমন মনে হলেও আসলে তা নয়। তামিম ইকবাল, রফিকুল ইসলাম বাবু, ফাহিম সিনহাসহ বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী না থাকলেও পুরো নির্বাচন এক কথায় একপক্ষীয় নির্বাচন বলা যাচ্ছে না। কারণ, ঢাকার ক্লাব ক্যাটাগরির যে ১৬ জন প্রার্থী নির্বাচন করবেন, তার সবাই যে সরকার সমর্থিত বা বিএনপিপন্থি প্যানেলের, তাও বলা যাবে না।
বরং তামিম ইকবালের সাথে ছিলেন অথচ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি- এমন সাতজন প্রার্থী শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা ধরে রেখে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং সেটা প্যানেল করে নয়। নিজ নিজ উদ্যোগে, আলাদা বা স্বতন্ত্রভাবে। এর মধ্যে বসুন্ধরা তথা ‘টি স্পোর্টসের’ ৫ প্রার্থী (ইশতিয়াক সাদেক, শানিয়ান তানিম, রাকিবউদ্দীন, একেএম আহসানুর রহমান মল্লিক রনি ও মেহরাব আলম চৌধুরী) কিন্তু পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তামিম ইকবালের পক্ষেই ছিলেন।
নির্বাচনী জোটের এবং সমাঝোতার যতগুলো অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে, তার সব কটায় টি-স্পোর্টসের ইশতিয়াক সাদেক ও শানিয়ান তানিম উপস্থিত ছিলেন। তামিমসহ ওই জোটের অনেকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও টি-স্পোর্টসের পাঁচ প্রার্থী একদম শেষ মুহূর্তে ঠিকই নির্বাচন করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
এছাড়া বর্তমান বোর্ড পরিচালক মঞ্জুরুল আলম এবং সাবেক সিসিডিএমের সদস্য সচিব আদনান রহমান দীপনও তামিম ইকবালের পক্ষেই ছিলেন। যদিও তামিমের নেতৃত্বে বিএনপিপন্থি প্যানেলে তাদের জায়গা শতভাগ নিশ্চিত ছিল না; কিন্তু তারা সঙ্গেই ছিলেন। তব শেষ পর্যন্ত মঞ্জু ও দীপন নির্বাচন বয়কট করেননি। নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এর বাইরে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের পরিচিত মুখ লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জের মালিক লুৎফর রহমান বাদল, সিসিডিএমের সাবেক সদস্য সচিব উত্তরা স্পোর্টিংয়ের ফায়জুর রহমান মিতু, প্রাইম দোলেশ্বরের আবুল বাশার শিপলু ও ট্যালেন্ট হান্ট একাডেমির নাজমুল ইসলাম সে অর্থে কোন পক্ষেরই নন। তারা নিরপেক্ষভাবেই নির্বাচন করছেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে- তামিম পক্ষের ৭ আর নিরপেক্ষ ৪ ধরলে, মোট ১১ জন হচ্ছেন।
সেদিক থেকে হিসাব করলে ক্যাটাগরি-২ থেকে সরাসরি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের পক্ষের প্রার্থী আছেন পাঁচজন। এর মধ্যে ফারুক আহমেদের সাথেই আছেন চারজন (ফারুক আহমেদ, মেজর (অব.) ইমরোজ, আমজাদ হোসেন ও মোখসেদুল কামাল)।
শেষ মুহূর্তে রিটের কারণে ১৫ ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ বাতিল হওয়ায়ই যত গণ্ডগোল তৈরি হয়েছে। নিশ্চিত হয়েই বলা যায়, ১৫ ক্লাবের ওপর দুদকের অবজারভেশনের ওপর ভিত্তি করে স্থগিতাদেশ জারি না হলে হয়তো তামিম ইকবাল ও তার পক্ষের ১৫ জনের অন্তত ৮-১০ জন নির্বাচন করতেন।
তখন হয়তো টি-স্পোর্টস আর গাজী গ্রুপও তামিমের সাথে থাকতো। তখন আর নির্বাচনটা প্রশ্নবিদ্ধ হতো না; কিন্তু তার পরও ঢাকার ক্লাব কোটায় যারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে নিরপেক্ষ ও তামিমপন্থিও আছেন বেশ কয়েকজন। সে আলোকে নির্বাচন পুরোপুরি একপেশে বলা যাবে কি?
শেষ পর্যন্ত ঢাকার ক্লাব কোটায় নির্বাচন করছেন যে ১৬ জন
লুৎফর রহমান বাদল (লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ), ইশতিয়াক সাদেক (ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব), আদনান রহমান দীপন (রূপগঞ্জ টাইগার্স), আবুল বাশার (প্রাইম দোলেশ্বর), ফায়জুর রহমান মিতু (উত্তরা স্পোর্টিং), আমজাদ হোসেন (ঢাকা স্পারটান্স), শানিয়ান তানিম নাভিন (মেরিনার ইয়াংস ক্লাব), একেএম আহসানুর রহমান মল্লিক রনি (ইয়াং পেগাসাস ক্লাব), মোখসেদুল কামাল (গোল্ডেন ঈগলস স্পোর্টিং ক্লাব), মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান ভুঁইয়া (ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব), এম নাজমুল ইসলাম (ট্যালেন্ট হান্ট ক্রিকেট একাডেমি), ফারুক আহমেদ (রেঞ্জার্স ক্রিকেট একাডেমি), মেজর (অব.) ইমরোজ আহমেদ (কাঁঠালবাগান গ্রীন ক্রিসেন্ট ক্লাব), রাকিবউদ্দীন (এইস ওয়ারিয়র্স), মঞ্জুর আলম (রেগুলার স্পোর্টিং ক্লাব), মেহরাব আলম চৌধুরী (যাত্রাবাড়ী ক্রীড়াচক্র)।
এআরবি/আইএইচএস