নির্বাচন বাতিলের দাবিতে সোচ্চার ঢাকার ৪৮ ক্লাব

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:০৬ পিএম, ০৪ অক্টোবর ২০২৫

নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে নির্বাচন বানচালের উদ্যোগ বা ঘোষণা নয়, বরং উত্তপ্ত পরিস্থিতির সামাল দিতে ৪৮ ঘণ্টা আগে তিন-তিনটি প্রস্তাব দিয়েছে তামিমপন্থিরা। যার প্রথমটি ছিল, সম্ভব হলে বিসিবির এই নির্বাচনী তফসিল বাতিল করে নতুন করে তফসিল ঘোষণা করা। সেটা যে শুধু পক্ষপাতদুষ্ট, সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপে-অসচ্ছতার তকমা লেগে যাওয়ার কারণে তা নয়।

তামিম ইকবালের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থীসহ ১৫ জন প্রার্থী নির্বাচন বয়কট করায় একটা বড় অংশের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নেই। তাই এই নির্বাচন বাতিল করে কিছু সময় পর আবার একটা সর্বজনগ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের অনুরোধ তাদের।

যে নির্বাচনের গায়ে কোনো সমালোচনার দাগ লাগবে না। কোনো পক্ষ বাড়তি সুবিধা পাবে না। এক কথায় অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যেন হয়, তার ব্যবস্থা করা।

তামিমপন্থীদের দ্বিতীয় প্রস্তাব, যদি নির্বাচন বাতিল করে নতুন তফসিল ঘোষণা করা সম্ভব না হয়, তাহলে যেন একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। যেখানে যেন সব মহলের সম্পৃক্ততা থাকে।

রফিকুল ইসলাম বাবুর কন্ঠে তামিমপন্থীদের তৃতীয় ও শেষ প্রস্তাব ছিল- যদি ওপরের দুটির একটাও করা সম্ভব না হয়, তাহলে বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদই বোর্ড পরিচালনায় থাকবে। তারপর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এক পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন করে তাদের হাতে বোর্ড পরিচালনার ভার ছেড়ে দিতে হবে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিকদের সাথে আলাপে রফিকুল ইসলাম বাবু ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়াকে ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক বলে অভিহিত করেন এবং প্রত্যাশা করেন তিনিই ( আসিফ মাহমুদ) পারেন বিসিবি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে জটিলতা, কাদা ছোড়াছুড়ি একটা বিতর্কর সৃষ্টি হয়েছে, তার অবসান করতে।

দু’দিন পর আজ শনিবার বিকেলে এক জনাকীর্ন সংবাদ সম্মেলনেও রফিকুল ইসলাম বাবু ও মাসুদুজ্জামানরা একই সুরে কথা বলেছেন। এক লিখিত বিবৃতিতে পরিষ্কার ওই তিন প্রস্তাবই নতুন ভাবে পেশ করা হয়। তবে আজ শনিবার একটি বড় ধরনের নতুনত্ব ছিল। তাহলো, এদিন তামিমপন্থীরা কথা বলেন, ঢাকার ক্লাব, সংগঠক ও কাউন্সিলরদের ব্যানারে।

মঞ্চে উপবিষ্ট ক্লাব কর্তাদের দাবি, ঢাকার ৭৬ ক্লাবের (কাউন্সিলরশিপ বাতিল হওয়া ১৫ ক্লাবসহ) ৪৮ কর্মকর্তা ও কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন শনিবার মোহামেডান ক্লাব টেন্টে হওয়া সংবাদ সম্মেলনে।

সেখানে ঢাকার ক্রিকেট পাড়ার অনেক পরিচিত মুখকে দেখা গেল এবং প্রিমিয়ারের অন্যতম শীর্ষ ক্লাবগুলোর কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। তামিমপন্থী প্যানেলের অন্যতম প্রার্থী ইন্দিরা রোড ক্রীড়া চক্রের কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম বাবু তো ছিলেনই, সাথে মোহামেডানের কাউন্সিলর ও সিসিডিএমের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মাসুদ্দুজ্জামান, সূর্যতরুণ ক্লাবের কাউন্সিলর ও এবারের নির্বাচনের অন্যতম আলোচিত চরিত্র ফাহিম সিনহা, নিষেধাজ্ঞায় পরা ১৫ ক্লাবের ভাইকিংস ক্লাবের কাউন্সিলর ইফতিখার রহমান মিঠু, মোহামেডানের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বিসিবির সাবেক পরিচালক ও নিষেধাজ্ঞায় পড়া ১৫ ক্লাবের একটি নাখালপাড়া ক্রিকেট একাডেমির লোকমান হোসেন, গুলশান ক্রিকেট ক্লাব, ওল্ডডিওএইচএস ক্লাবের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা খালেদ মাহমুদ সুজন, আবাহনীর ক্রিকেট কমিটির বর্তমান প্রধান জিএস হাসান তামিম, লিজেন্ডস অব রুপগঞ্জের স্বত্ত্বাধিকারী লুৎফর রহমান বাদল, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের সাব্বির আহমেদ আরিফ, সাবেক ডামফা সম্পাদক ও অভিজ্ঞ ক্রীড়া সংগঠক বাংলাদেশ বয়েজ ক্লাবের মোজাম্মেল হক মুক্তো, শাইনপুকুর ক্লাবের কাউন্সিলর আসিফ রব্বানী, আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের কাউন্সিলর ইয়াসির আব্বাস, মিরপুর সিটি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মঈন, গোপিবাগ ফ্রেন্ডসের কাউন্সিলর শপু, তেজগাঁও ক্রিকেট ক্লাবের কাউন্সিলর বোরহান হোসেন পাপ্পু, সাব্বির রুবেলসহ অনেক ক্লাবের কাউন্সিলররাই ছিলেন স্ব-শরীরে উপস্থিত ছিলেন।

শনিবার বিকেলে মতিঝিলে মোহামেডান ক্লাব টেন্টে হওয়া সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সিসিডিএম এর সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মোহামেডানের কাউন্সিলর হিসেবে এবার যিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে তা তুলে ফেলেছেন , সেই মাসুদুজ্জামান কথা বলেন।

তার লিখিত বক্তৃতায় তিনটি প্রস্তাব পেশ করেন মাসুদ্দুজামান। তার প্রথম প্রস্তাব হলো, বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে যে পরিচালক পর্ষদ আছে, তার সময়কাল বৃদ্ধি করে একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা।

দ্বিতীয় প্রস্তাব হলো, একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা এবং তৃতীয় প্রস্তাব হলো, বর্তমান তফসিল বাতিল করে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে না হয় নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে যত শিগগির সম্ভব তফসিল ঘোষণা এবং সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের কার্যকর উদ্যোগ নেয়া।

পরে রফিকুল ইসলাম বাবু, লোকমান হোসেন, খালেদ মাহমুদ সুজন, জি এস হাসান তামিমসহ সবাই প্রায় একই সুরে কথা বলেন। তারা সবাই প্রহসনের নির্বাচন বন্ধের কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান।

রফিকুল ইসলাম বাবু, রীতিমত আল্টিমেটামের সুরে বলেন, আমরা চাই ক্রীড়া উপদেষ্টা আমাদের উত্থাপিত প্রস্তাব মেনে এ প্রহসনের নির্বাচন বন্ধের উদ্যোগ নেবেন।

বাবুর শেষ কথা, আমরাও দেশের ক্রিকেটের কল্যাণ, মঙ্গল ও উন্নয়ন চাই। আমরা চাই ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ড সচল থাকুক। দেশের ক্রিকেট এগিয়ে যাক। এ কার্যক্রম বেগবান রাখতে আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করবো।

এ জন্যই হুট করে কোন নেতিবাচক কার্যক্রমের ঘোষণা থেকে বিরত থাতে চাই এবং ক্রীড়া উপদেষ্টা, এনএসসিকে সহায়তা করতে চাই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আমরা সাধ্যমত সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। তবে আগামীকাল ৫ অক্টোবরের মধ্যে যদি নির্বাচন বাতিল করে নতুন ঘোষণা দেয়া না হয়, তাহলে ঢাকা লিগ বন্ধের ঘোষণার মত রুঢ় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো।

এআরবি/আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।