বিপিএলে আবারও সর্বোচ্চ উইকেট নিয়ে ইতিহাস গড়তে চাই: তানভীর
জাতীয় ক্রিকেট লিগের ২৭তম আসরে ৫ম হয়ে আসর শেষ করেছে বরিশাল বিভাগ। দলটির অধিনায়ক তানভীর ইসলাম ৩৪ উইকেট নিয়ে হয়েছেন আসরের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক। এবারই প্রথম দলকে নেতৃত্ব দেওয়া তানভীর শুনিয়েছেন লাল বলে তার প্রতিজ্ঞার কথা, বিপিএলে লক্ষ্যের কথা। আক্ষেপ করেছেন বরিশালে মাঠ, ইনডোর না থাকা নিয়ে। জাগো নিউজের সঙ্গে তার লম্বা আলাপের চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
জাগো নিউজ: বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট লিগে এই মৌসুমে সর্বোচ্চ উইকেট। তো, এটা আসলে কতটা গর্বের কতটা ভালো লাগার?
তানভীর: আলহামদুলিল্লাহ এটা তো অনেক ভালো লাগতেছে। কারণ আমি এনসিএল-এ প্রথমবার হাইয়েস্ট উইকেট টেকার হইছি।
জাগো নিউজ: অধিনায়কত্ব করলেন প্রথমবার সর্বোচ্চ উইকেটও নিলেন। সামনে থেকে পারফর্ম করে একটা দলকে নেতৃত্ব দেওয়াটা আসলে কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় আপনার?
তানভীর: একটু চ্যালেঞ্জিং। আগে যখন ক্যাপ্টেন ছিলাম না তখন সিচুয়েশন অনুযায়ী অনেক সময় ক্যাপ্টেনের কাছে চাইতাম, ভাই বল দেন। আর এখন কিন্তু ডিফারেন্ট। আমার নিজেরও বল করতে হচ্ছে, অন্য একজনকেও বল করাতে হচ্ছে। টিমের সিচুয়েশন অনুযায়ী অনেক কিছু মেইনটেইন করে করা লেগেছে। অনেক সময় মনে করেন কাউকে কম বল করানো হচ্ছে, কাউকে বেশি। অনেক কিছু ডিপেন্ড করে। তবে হ্যাঁ নতুনত্ব ছিল, অনেক ভালো লেগেছে।
জাগো নিউজ: আপনি পারফর্ম করেছেন বলে কি আপনার কাজটা কিছুটা সহজ হয়ে গেছে?
তানভীর: আমি তো এবারই ফার্স্ট টাইম করলাম। এখন পর্যন্ত ওইভাবে জানি না যে, পারফর্ম না করলে অধিনায়কত্ব কেমন। সিনিয়র ভাইরা ছিল..., শামসুর রহমান শুভ উনি কিন্তু ঢাকা মেট্রোতে অনেক বছর ক্যাপ্টেনসি করছে। হুম। আমাদের ফজলে ভাইও অনেক এক্সপেরিয়েন্স ক্যাপ্টেন। প্রায় ১০-১২ বছরের মতো। যখন আমি কেউ ভুল করতেছি বা বুঝতেছি না তখন তারা আমারে তাদের ওই এক্সপেরিয়েন্সগুলো শেয়ার করছে।
জাগো নিউজ: আচ্ছা আপনি তো অলরেডি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলেছেন জাতীয় দলের হয়ে। এবার লাল বলে তো সর্বোচ্চ উইকেট নিলেন, এবার কি টেস্ট দলে ডাক পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হচ্ছেন?
তানভীর: আমি তো চাই সব ফরম্যাটে খেলবো। যদি ম্যানেজমেন্ট কোচ ক্যাপ্টেন বা বিসিবি যদি আমাকে নিতে চায় আমি অবশ্যই খেলবো ইনশাআল্লাহ। হাইয়েস্ট উইকেট টেকার হইছি, সিচুয়েশন অনেক কিছু বুঝছি। ক্যাপ্টেন হইলে কিন্তু অনেক কিছু বুঝা যায়। আগে আইসা শুধু বল করতাম। এখন নিজের ফিল্ড সেটাপ নিজেই করেছি। অন্যের ফিল্ড সেটাপও করেছি। আস্তে আস্তে এক্সপেরিয়েন্স হচ্ছে এই বছরে মোটামুটি লাস্টের তিনটা ম্যাচ খেললাম এই বছর সাতটা ম্যাচ। মোটামুটি মানে ভালোই হচ্ছে। আমি আলহামদুলিল্লাহ প্রস্তুত টেস্ট খেলার জন্য।
জাগো নিউজ: আপনি বিপিএলে ভালো করেছেন, ডিপিএলে ভালো করেছেন। মোটামুটি সাদা বলের ন্যাশনাল থেকে শুরু করে ইন্টান্যাশনাল সব জায়গায় পারফর্ম করেছেন। তো এইবার সিজন শুরু লাগে কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল?
তানভীর: সবাই আমাকে কিন্তু বলে আমি সাদা বলের সাদা বলের জন্য ভালো, ওয়ানডে টি-টোয়েন্টির জন্য। লাস্ট ইয়ার আমি চিন্তা করছি যে না আমাকে এই ধারণা ভুল প্রমাণ করতে হবে। আমাকে দেখাতে হবে আমি লাল বলেও পারফর্ম করতে পারি। লাস্ট ইয়ার থেকে আমার ইচ্ছাশক্তি অনেক বেড়ে গেছে যে শুধু সাদা বল না সব ফরম্যাট খেলতে পারি আমি। গত বছর থেকে আমি চেষ্টা করতেছি, আলহামদুলিল্লাহ এবার মোটামুটি ভালো হইছে।
জাগো নিউজ: অধিনায়ক হিসেবে এবার বরিশালের পারফর্মেন্সকে কিভাবে সামারি করবেন?
তানভীর: আমাদের লাস্ট অনেক বছর পর্যন্তই যাদের সাথেই আমরা খেলতাম অন্য টিমটা ওইরকম ভাবেই ভাবতো যে বরিশাল ওদের সাথে তো আমরা এমনিই জিতে যাবো; কিন্তু এবার দেখবেন আমরা যে সাতটা ম্যাচ খেলছি সাতটা ম্যাচে আমরা কোনো না কোনো ক্ষেত্রে ম্যাচ উইনিং মানে ম্যাচটা জিতবো জিতবো এরকম একটা সিচুয়েশন তৈরি হইছে। অতএব আমার যারা খেলেছে সবাই মোটামুটি পারফর্ম করছে।
দেখেন আপনি একটা আরেকটা জিনিস দেখবেন যে আমাদের টিমে কিন্তু কোনো বড় প্লেয়ার নাই, বড় টাইগার নাই আমাদের। আমাদের টিমে একসাথে হয়ে হায়নার মতো..., হায়না যখন একটা শিকার করে, অনেকগুলা হায়না একসাথে একটা শিকার নামে। আর বাঘ সিংহ ওরা কিন্তু মনে করেন একাই একটা শিকারকে ধরে নিতে পারে। ওভাবেই আমরা প্রসেস করি যে, জয় ২০-৩০-৪০ যেই করছে না কেন আমরা মোটামুটি টিমের যে সময় যে জিনিসটা প্রয়োজন ছিল ওই জিনিসটাই করছি।
আলহামদুলিল্লাহ এজন্য একটা ভালো রেজাল্ট আসছে। কারণ আমরা প্রতিবার আট নাম্বার হই এবার কিন্তু আমরা পাঁচ নম্বর হইছি। আবার লাস্ট ম্যাচ পর্যন্ত দেখেন আমরা জিতলেই রানারআপ। যাদের সাথে খেলছি, বলছে যে না তোরা এখন অন্যরকম খেলতেছিস। সিলেট যখন লাস্ট আট-দশ বছর আগে বা সাত আট বছর আগে থেকে ওরা কিন্তু আমাদের মতোই একটা টিম ছিল।
কিন্তু এখন ওরা অনেক মনে করেন লাস্ট ইয়ার চ্যাম্পিয়ন, এবার রানারআপ। এটা হওয়ার কারণ একটা নিজের ক্ষেত্রে আমি বুঝতেছি যে তাদের নিজস্ব দুইটা মাঠ আছে। তারা ম্যাচ সিনারিও করতে পারে। তারপরে সেন্টারে উইকেট ব্যাটিং করতে পারে। মানে গেমটা কিভাবে হয়, এগুলার ধারণা তারা নিতে পারে আর আমরা কিন্তু এই জিনিসটা নিতে পারতেছি না।
কারণ, আমরা নেটের ভিতরেই বল করতেছি। ছয় হইলে বলি আউট, আউট হইলে বলি ছয়। ওইভাবে করে এরকম। এই সিনারিওগুলো আমরা তৈরি করতে পারছি না। আমরা শুনছি, ইনশাআল্লাহ আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে আমাদেরও বরিশাল টিম বরিশাল স্টেডিয়ামকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার হাতে হ্যান্ড ওভার করে দিবে। ইনশাআল্লাহ আমাদের এই মাঠ যদি হয়ে যায় আমরা দু’তিন বছরের মধ্যে আমরা একটা ভালো অবস্থানে যাবো আশাবাদী আমি।’
জাগো নিউজ: তাহলে বলছেন মাঠ হলেই বরিশালের পারফর্মেন্সে উন্নতি হবে?
তানভীর: এইটা তো মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট জিনিস। আমাদের মাঠ নাই। বাংলাদেশের সবথেকে বড় স্টেডিয়াম সেকেন্ড আমাদেরটা। আগে কক্সবাজারে যখন হয়নি তার আগে সবথেকে বড় স্টেডিয়াম ছিলো আমাদের বরিশালেরটা। কিন্তু বরিশাল স্টেডিয়ামে কোনো প্র্যাকটিসই হয় না।
বরিশাল স্টেডিয়ামে খেলতে পারতেছি না লাস্ট চার-পাঁচ বছর পর্যন্ত। আমি যে তানভীর ইসলাম বরিশাল স্টেডিয়ামে খেলছি, চিনিই না। কারণ ওইখানে খেলা হয় না। তারপরও মাঝে মাঝে যখন সময় পাই যাই দেখলে খারাপ লাগে যে এখানে একটা টাইমে প্র্যাকটিস হতো, এখন প্র্যাকটিস হয় না। আমাদের একটা ইনডোর নাই। শুনছি যে তিন-চার মাসের ভিতরে আমাদের হ্যান্ডওভার করে দিবে।
যেন ওই জিনিসটা তাড়াতাড়ি হয়। কারণ আমাদের খেলা দরকার। কারণ আমাদের বাংলাদেশের সবচেয়েকে কম বরিশালের প্লেয়াররা; কিন্তু ন্যাশনাল টিমে খেলছে। হাতে গোনা চার-পাঁচ জন। আর অন্য ডিভিশনের কিন্তু অনেক বেশি প্লেয়ার খেলে। দশ-বারো জন পনেরো জন এরকম করে খেলে ফেলছে অলরেডি।
কিন্তু আমাদের এই স্টেডিয়ামের কারণে আমার তো কষ্ট লাগে যে আমার আমি দেখেন আমি যখন ড্রেসিংরুম শেয়ার করি আমি একা; কিন্তু দেখেন সিলেট চার-পাঁচ জন আছে। চট্টগ্রাম তিন-চার জন আছে। রাজশাহী পাঁচ-ছয় জন আছে। প্রত্যেকটা ডিভিশন থেকে কিন্তু দুই তিন-জন আছে। আর আমি আমার কাছেই একা। একা বলতে বরিশালের ব্যাপারটা বললাম আমি।
মানে সবাই আমাকে ওইভাবে আপন করেই রাখে সবাই। সবাইকেই হেল্প করে। আমারও ইচ্ছা হয় যেন আমার পাশে আমার ড্রেসিং রুমে আমার একটা বরিশালের ছেলে শেয়ার করতেছে। বরিশালের ছেলে আমি বলতে পারতাম যে না এইতো বরিশালের প্লেয়ার। সিলেটিরা যখন কথা বলে সিলেটি ভাষায় কথা বলে।
চট্টগ্রামের লোক যখন কথা বলে চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলে। আর আমি যদি একটা বরিশালের ভাই থাকতো আমার মতো করে কথা বলতাম বরিশালের ভাষায়। ব্যাপারটা মজার। এই জিনিসগুলো একটু ফিল করি মাঝে মাঝে। যেন ওই বরিশাল স্টেডিয়ামটা হয় এটাই এখন চাওয়া।
জাগো নিউজ: ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রত্যেকটা আসরের আগেই দেখা যায় যে কিছুদিন মাঠের বাইরের বিতর্ক নিয়ে শিরোনাম হয় বরিশালকে নিয়ে। তো এমন একটা দলকে নেতৃত্ব দেওয়া মানসিকভাবে কতটা চ্যালেঞ্জিং বা দলটা হ্যান্ডেল করা কতটা কঠিন?
তানভীর: আসলে অনেক চ্যালেঞ্জিং। আমি কিছু একটা করছি এটাকে অনেক বড় একটা ইস্যু বানিয়ে দেয়। আবার কিছু জানি না, তাও একটা ইস্যু হয়ে যায়। মোর্তুজা স্যার ছিল হেডকোচ। আরো যে সিনিয়ররা ছিল (সোহাগ) গাজী ভাই উনি আইসা সম্পূর্ণ মোটামুটি হ্যান্ডেল করছে। তারপরে গাজী ভাই ঢোকার পরে ফজলে ভাইয়ের থাকা, আবার শেষে শামসুর রহমান শুভ সবাই মিলে-মিশে আবার একটা আবার এক হয়ে সবকিছু করছি আমরা।
জাগো নিউজ: ক্যাপ্টেন্সিটা কতটা এনজয় করেছেন এবং আপনার ক্যাপ্টেনসি করার কারণে ভালো খেলার তাগিদটা একটু বেশি ছিল?
তানভীর: না এরকম কোন কিছু না। আমাদের বেশিরভাগ খেলাতেই অত ভালো উইকেটে ছিল না। কারণ আমরা তো আট নাম্বার টিম। আমরা প্রথমে খেলছি খুলনাতে, এরপর খেলছি কক্সবাজার। আবার খুলনাতে। তারপরে বগুড়া। এরকম আমরা লং ডিসট্যান্স, মানে অনেক বড় বড় জায়গায়। দূরত্ব বেশি আমাদের দিছে। বুঝছেন ভাই, আমাদের ট্রাভেলটা অনেক বড় বড় ছিল। আর অনেকেই একটা জায়গায় দুইটা খেলছে আবার পাশাপাশি জায়গায়।
এরকম করে খেলছে। আমরা ঠিক আছি, আমরা আট নম্বর টিম। এটুকুতে সমস্যা নাই। আর ক্যাপ্টেন্সি হিসেবে যে মনে করেন যে ভালো খেলতেই হবে এরকম কোন ইস্যু এরকম কোন এখন পর্যন্ত কোন কিছু আমি ফিল করি নাই। আমার ডিভিশনে তো আমি মোটামুটি এখন সবার থেকে একটা ভালো জায়গায় খেলি। আমার প্রতি আশা-প্রত্যাশা বেশি সবার থেকে। আমাকেই ভালো কিছু করতে হবে। আমাকেই ওদের সবাইকে সাপোর্ট করতে হবে। এরকম ফিল করছি।
জাগো নিউজ: কয়েকদিন পরেই তো বিপিএল এরপরই টি-২০ বিশ্বকাপ। সব মিলিয়ে আসলে কোন লক্ষ্য সেট করেছেন কিনা বিপিএলের জন্য?
তানভীর: লক্ষ্য তো একটাই। ম্যাচ বাই ম্যাচ যদি আল্লাহ সুস্থ রাখে ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলবো। আরেকটা ইচ্ছা আছে যে এখন পর্যন্ত মনে করেন বিপিএলে প্রত্যেকটা আসরে একজন করে কিন্তু হাইয়েস্ট উইকেট টেকার হয়। একবারও কিন্তু দ্বিতীয়বার কেউ হয়নি এখন পর্যন্ত। আমার একটা ছোট্ট ইচ্ছা যে, আল্লাহ কবুল করে ইনশাআল্লাহ তাহলে আমি চেষ্টা করব যেন এই নামটা দুইবার আসে আমার। হাইয়েস্ট উইকেট টেকার হওয়ার আমি চেষ্টা করবো সর্বোচ্চটা দিয়ে।
এসকেডি/আইএইচএস