‘এই সংকটময় দিনেও যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা অসাধারণ’
যেভাবে ২৭তম জন্মদিনটা কাটাচ্ছেন দেশের তারকা নারী ক্রিকেটার জাহানারা আলম সেটা তার স্বাভাবিকতার বাইরে। বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে হৈহুল্লোড় করা। ঘরে বা রেস্টুরেন্টে জম্পেস খাওয়া-দাওয়া করেই সাধারণত নিজেদের জন্মদিন পালন করেন জাতীয় দলের পেসার জাহানারা।
কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের কারণে, জাহানারা জন্মদিনে কোনো আনুষ্ঠানিকতাই রাখেননি। বছরেরর বাকি দিনগুলোর মতেই কাটছে তার বিশেষ দিনটি। বরং দিনটিকে তিনি ব্যস্ত থেকেছেন অসহায় গরীব মানুষকে সহায়তা করে।
করোনার কারণে কোনো আনুষ্ঠানিকতা না থাকলেও মানুষের ভালোবাসা; কিন্তু থেমে নেই জাহানারার প্রতি। খুলনার এ যুবতি দিনভরই পাচ্ছেন মানুষের দোয়া, ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা। যাদের বেশিরভাগই জাহানারার ক্রিকেটের ভক্ত।
জন্মদিন কোথায় কাটাচ্ছেন? বাবা-মায়ের কাছে খুলনা নিশ্চয়ই? ‘না। আমি ঢাকাতেই আছি। করোনাভাইরাসের কারণে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি। বলতে পারেন লকডাউন অবস্থায় পুরোপুরি। বিসিবির দেয়া সিডিউল ফলো করছি। তারপরও বলবো অলস সময় পার করছি’- বলছিলেন জাহানারা আলম।
আপনার তো অনেক ভক্ত। জন্মদিনে কেমন শুভেচ্ছা পাচ্ছেন? জাহানারা আলমের জবাব, ‘মানুষের এত ভালোবাসা পাবো বুঝতেই পারিনি। দিনে দিনে ভালোবাসা বেড়েই চলেছে। আমি এই ভালোবাসায় যেমন মুগ্ধ তেমন গর্বিত। মানুষের ভালোবাসা পাওয়া কিন্তু এত সোজা নয়। আমরা যারা ক্রীড়াঙ্গনে আছি তারা মুদ্রার এপিঠও দেখি ওপিঠও দেখি। ভালো খেললে বাহবা পাই, খারাপা খেললে আমাদের তিরস্কার করা হয়। যারা তিরস্কার করবে তারাই আবার বাহবা দিবে ভালো খেললে। এটা আসলে সম্পুর্ণ ভালোবাসা বলতে পারেন।’

মানুষের এই ভালোবাসাকে জীবনের বড় প্রাপ্তি উল্লেখ করে জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের এই তারকা পেসার বলেন, ‘যারা রিয়াল সাপোর্টার তারা খারাপ আর ভালো সময় দেখেন না। তারা বরং খারাপ সময়ে বেশি সাপোর্ট করেন। পাশে থাকেন। যাতে আমরা মানসিকভাবে ভেঙ্গে না পড়ি। এমন সাপোর্টার এবং শুভাকঙ্খী সবসময়ই থাকে। খেলোয়াড়ী জীবনে এগুলো বড় প্রাপ্তি। বিশেষ করে আমার কথাই বলবো। কখনো তো চিন্তাই করি নাই যে ক্রিকেটার হবো। এই পর্যায়ে যে এসেছি তা আল্লাহর রহমত আর সমর্থকদের ভালোবাসায়। বিশেষ দিনগুলোতেই মানুষের ভালোবাসাটা বোঝা যায়। আজ অসংখ্য শুভেচ্ছা পাচ্ছি দেশ এবং বিদেশ থেকে। এখন একটা সংকট চলছে। এ অবস্থায়ও যে সবাই আমাকে মনে রেখেছে এটা বিশাল এক পাওয়া। মানুষের ভালোবাসা না থাকলে এবং মনের মধ্যে না থাকলে কিন্তু এগুলো হয় না। বাস্তবিকই আমি অনেক হ্যাপি।’
সাধারণত আপনি ঘটা করেই জন্মদিন উদযাপন করেন। এবার সংকটের কারণে সব বাদ দিয়েছেন, ‘আসলে বাবা-মায়ের সঙ্গে যখন জন্মদিন পালন করতাম তখন খুব আনন্দ হতো। খুলনায় বাবা-মার সঙ্গে জন্মদিন পালন করেছি অনেক দিন হয়ে হয়েছে। আবার কবে হবে জানি না। তবে পরিবারের সঙ্গে জন্মদিন পালন করা খুব হয় না। কত বছর যে সেটা করি না তার ঠিক নেই। গত বছর এই দিনে আমি ছিলাম ভারতে ইয়ুথ ডেলিগেশনের সাথে। ওখনেই জন্মদিন সেলিব্রেট করেছি। দেশের বাইওে যদি দলের সঙ্গে থাকি তাহলে সতীর্থরা আমার জন্মদিন সেলিব্রেট করে। আর দেশে থাকলে কাছের যতো বন্ধু-বান্ধব আছে সবাইকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে বা বাসায় খাওয়া-দাওয়া হয়। অন্যান্য সময় নিজেরা মিলে জন্মদিন উদযাপন করি’- বলছিলেন জাহানারা আলম।
করোনাভাইসারের কারণে সৃষ্ট এ পরিস্থিতিতে জাতীয় দলের এ ক্রিকেটার সবাইকে সাবধানে এবং সচেতনভাবে চলার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন ‘এ সময় সবার জন্য একটা কথাই বলবো যে, বাসায় থাকেন এবং নিরাপদ থাকেন। আর যারা কাজের সন্ধানে বাধ্য হচ্ছেন বাইরে যেতে সেই অসহায় মানুষের জন্য পাশে দাঁড়ান। যাদের সামর্থ্য আছে তারা একজন, পাঁচজন, দশজন, পঞ্চাশজন হোক তাদের সাহায্য করুন। যার যে কয়জনকে সহায়তা করার সামর্থ্য আছে করা উচিত। সবাই যদি এভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই তাহলে ওই মানুষগুলোকে কাজের সন্ধানে বাইরে যেতে হবে না তাদের কোনো ঝুকিও থাকবে না। তাহলে আমাদের দেশে যেটুকুই ভাইরাস আছে সেটুকু তাড়াতাড়ি নির্মুল হবে। নিজেকে নিরাপদ রাখা যেমন দায়িত্ব তেমন অন্যকে নিরাপদ রাখাও দায়িত্ব। আমরা সবাই সবার পাশে দাঁড়াই এবং নিরাপদ থাকি যার যার বাসায়।’
আরআই/আইএইচএস/