যে বড় অর্জনটির কথা আজও ঢেকে রাখতে চান পাইলট!

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৫:৪৫ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২০

সবার জানা, বাংলাদেশ ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি বিজয়ী দল। ইতিহাসের একটি মাইলফলকে পা রেখেছিল সেদিন বাংলাদেশ। যে ট্রফি জিতে শুধু প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলার ছাড়পত্র পাওয়াই নয় শুধু, একটি ছোট্ট গন্ডি থেকে বেরিয়ে বিশ্ব মঞ্চে পা রেখেছিল টাইগাররা। তারই পর্যায়ক্রমে ক্রিকেট বিশ্বে তৈরি হয়েছে আজকের এই বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ মানুষের কাছে আইসিসি ট্রফি মানেই কুয়ালালামপুরের কিলাত ক্লাব মাঠ। কেনিয়ান পেসার মার্টিন সুজির করা ম্যাচের শেষ ওভারের প্রথম বলে খালেদ মাসুদ পাইলটের ছক্কা। শেষ বলে হাসিবুল হোসেন শান্তর পায়ে লাগা বল শর্ট ফাইন লেগে যেতেই পাইলট আর শান্তর সেই রুদ্ধশ্বাস দৌড়।

তারও আগে নেদারল্যান্ডসের সাথে অধিনায়ক আকরাম খানের বীরোচিত ইনিংস। খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়া অবস্থায় সাহসী নাবিকের ভুমিকায় অবতীর্ণ আকরাম খানের ৬৮ রানের মহামূল্যবান ইনিংস বেদির ওপর দাঁড়িয়েই গড়ে উঠেছিল সত্যিকার সাফল্যের ভিত। ওই জয়ের পরই বাংলাদেশ পৌঁছে গিয়েছিল সেমিফাইনালে।

Pilot

আগেই ঠিক করা ছিল, আইসিসি ট্রফি থেকে তিন দল খেলবে ১৯৯৯ সালের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে। কাজেই নেদারল্যান্ডসের কাছে জয়ের পরই একরকম ধরেই নেয়া হয়েছিল স্বপ্নের বিশ্বকাপের চাবি প্রায় হাতের মুঠোয়।

এর বাইরে দুর্দান্ত টিম ওয়ার্ক, কোচ গর্ডন গ্রিনিজের মিঠে-কড়া পরিচালনা, ম্যানেজার গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর পরিকল্পিত, সাজানো-গোছানো হোমওয়ার্ক এবং বোর্ড, ক্লাব কর্তা আর প্রবাসী বাংলাদেশিদের অকুণ্ঠ সমর্থন- সব মিলেই ধরা দিয়েছিল চূড়ান্ত সাফল্য।

দলগত সাফল্যে ঢাকা পড়ে গেছিলো এবং এখনো ঢাকা পড়েই আছে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের কথা। আইসিসি ট্রফির কথা উঠলেই সবাই সেই এক বলে এক রান দরকার থাকা অবস্থায় শান্ত আর পাইলটের প্রাণপন ছুটে সিঙ্গেলস নেয়ার দৃশ্য কল্পনা করে থাকেন।

কিন্তু খুঁটিয়ে দেখতে চান না, ওই আসরে ব্যক্তিগত পারফরমেন্সে কোথায় ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। হবেনই বা হন- এমনটা বলা যায় না। তবে সাধারণতঃ চ্যাম্পিয়ন দলের কেউ না কেউ হন ফাইনাল সেরা। না হয় টুর্নামেন্ট সেরা।

কেউ কি জানেন, ১৯৯৭ সালের ফাইনালের সেরা পারফরমার কে ছিলেন? ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্টই বা কে হয়েছিলেন? সত্যি বলতে কি, সাফল্যের তোড়ে এসব খোঁজ-খবর আর কেউ রাখে না।

তাহলে শুনে নিন, বাংলাদেশ ওই আসরে (আয়ারল্যান্ড ছাড়া। কারণ, আইরিশদের ১২৪ রানে অলআউট করেও জয় ধরা দেয়নি, ম্যাচটি বৃষ্টিতে পণ্ড হয়ে গিয়েছিল) আইসিসির সহযোগি দলের সব প্রতিষ্ঠিত শক্তিকে হারিয়েছে। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ খেলা আরব আমিরাত, নেদারল্যান্ডস, স্কটল্যান্ড আর কেনিয়াকে হারিয়েই আইসিসি ট্রফি জিতেছিল বাংলাদেশ।

সেটা কারো বিশেষ বা ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের ওপর ভর করে নয়। একদম দলগত সাফল্যের ওপর ভর করে। অধিনায়ক আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, খালেদ মাসুদ পাইলট, পেসার সাইফুল ইসলাম, হাসিবুল হোসেন শান্ত আর বাঁ-হাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিক বাকিদের চেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন।

তাদের পারফরমেন্সে ধারাবাহিকতাও ছিল বেশি। বাকিরাও সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন। সময়ের দাবি মিটিয়েছেন। যখন যার কাছ থেকে যা দরকার তা করেছেন। ফাইনালে কেনিয়ার বিপক্ষে যেই নেমেছেন, হোক তা পেসার সাইফুল, কিংবা অলরাউন্ডার সুজন- কেউ বল নষ্ট করেননি।

স্ট্রাইকরেট ছোঁয়ার জন্য যা দরকার, তা করেছেন। আর তাই বলা যায়, আইসিসি ট্রফিতে চূড়ান্ত সাফল্যের মূলে ছিল টাইগারদের ‘টিম পারফরমেন্স’। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, ওই টুর্নামেন্টের আসর, এমনকি ফাইনাল সেরা- কোনো পুরস্কারই পাননি বাংলাদেশের কেউ।

Pilot

ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছেন কেনিয়ান অধিনায়ক মরিস ওদুম্বে। আর ফাইনাল সেরার পুরষ্কার উঠেছে কেনিয়ান স্টার স্টিভ টিকোলোর হাতে। বাংলাদেশে একটি ব্যক্তিগত পুরস্কারই এসেছে, খালেদ মাসুদ পাইলটের হাতে। ওই আসরের সেরা উইকেটকিপার মনোনীত হয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু অনেকেরই হয়তো তা জানা নেই। কিংবা বেশিরভাগই তা মনে রাখেননি। পাইলটের নিজেরও তা নিয়ে কোন বাড়তি উচ্ছ্বাস, উল্লাস বা আবেগ নেই। তবে ওই আসরে সেরা উইকেটকিপার হবার স্মৃতি ভোলেন কি করে?

তার ভাষায়, ‘আমি ওই টুর্নামন্টে সেরা উইকেটকিপার হয়েছিলাম, সেটা একটি ব্যক্তিগত অর্জন। অবশ্যই একটি কৃতিত্ব, প্রাপ্তি। স্বীকৃতিও। একটা ভাল লাগা আছে এখনও। মাঝে-মধ্যেই মনে হয় ৯৭’র আইসিসি ট্রফির সেরা উইকেটকিপারের পুরস্কার পেয়েছিলাম আমি। তবে তা নিয়ে আমার বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই। আমরা আইসিসি ট্রফি জিতেছি এবং দল হিসেবে সবার সেরা হয়েছি, সেটাই তো অনেক বড় ছিল।’

নিজের কৃতিত্বের চেয়ে পাইলট সৃষ্টিকর্তার গুণগানই বেশি গাইলন। তার বদ্ধমূল ধারণা, ওই আইসিসি ট্রফিতে তার ভাগ্যটা খুব ভাল ছিল। তাই তো মুখে এমন কথা, ‘আল্লাহ আমার বিশেষ সহায় ছিলেন। আমি তার অনেক আনুকূল্য চেয়েছিলাম, পেয়েছিও। যে কারণে আমার পারফরমেন্সটাও হয়েছে ভালো। আমাকে সেমিফাইনালের মত ভাইটাল ম্যাচে তিন নম্বরে প্রমোশন দেয়া হলো। আমি ৭/৮ নম্বর থেকে উঠে ওয়ানডাউনে নেমেই ৭০ রানের ইনিংস খেলে হলাম ম্যান অফ দ্য ম্যাচ। আবার ফাইনালের শেষ ওভারের প্রথম বলে অতি দরকারি মুহূর্তে ছক্কাও হাঁকিয়ে ফেলেছি। সব মিলিয়ে আমার ওই আসরটি খুব ভাল কেটেছে। সৃষ্টিকর্তার অনেক কৃতজ্ঞতা। তবে আমার নিজের তেমন কোনোই বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই। আমার মনে হয় একজন পারফরমার হিসেবে জায়গামত পারফরম করা, দলের প্রয়োজনে অবদান রাখাই তো আমার কাজ। আমি সেটা করতে পেরেছি। সেটাই ভালো লাগার।’

এআরবি/আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।