নিজে না খেয়ে তামিমের জন্য টাকা জমাতেন বড় ভাই নাফিস

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:২৮ এএম, ০৫ মে ২০২০

বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক ম্যাচে দুই ভাই খেলার ঘটনা মাত্র একটি। ১৯৮৬ সালে দেশের ইতিহাসের প্রথম ওয়ানডেতে একসঙ্গে খেলেছিলেন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও নুরুল আবেদিন নোবেল। এর আগে-পরে ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক সহোদরের দেখা মিলেছে। কিন্তু তারা কেউই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে পারেননি।

সবশেষ দুই ভাই হিসেবে একসঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার আশা জাগিয়েছিলেন বর্তমান ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও সাবেক যুব অধিনায়ক নাফিস ইকবাল। দেশের ক্রিকেটের অন্যতম পথিকৃত আকরাম খানের দুই ভাতিজার সবধরনের সম্ভাবনাই ছিল একসঙ্গে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করা।

তবে নানাবিদ কারণে তা হয়নি। ছোট ভাই তামিম যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাম লেখান, ততদিন ফর্মের পড়তির কারণে দল থেকে জায়গা হারিয়ে ফেলেছিলেন বড় ভাই নাফিস। পরে বেশ কয়েকবার নিজেকে প্রমাণ করলেও, জাতীয় দলের দরজা খোলেনি তার জন্য। একসঙ্গে খেলা হয়নি দুই ভাইয়ের।

সেই নাফিসের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার থেমেছে ১১ টেস্ট ও ১৬ ওয়ানডে খেলে। অথচ তার বয়স এখন মাত্র ৩৪। যে বয়সে কি না অন্যান্য দেশের খেলোয়াড়রা থাকেন জীবনের সেরা ফর্মের কাছাকাছি পর্যায়ে, সে বয়সে সাংগঠনিক কাজে নাম লিখিয়েছেন নাফিস।

তিনি বর্তমানে নিজের নামের পাশাপাশি ‘তামিমের বড় ভাই’ হিসেবেও অনেক পরিচিত। আর নিজের বড় ভাই সুলভ যে দায়িত্ব তামিমের প্রতি, সেটাও তিনি পালন করেছেন যথাযথ। খেলোয়াড়ি জীবনের শুরুতে, নিজে না খেয়ে, কখনও অল্প খেয়ে টাকা জমিয়েছেন। যাতে তার ছোট ভাই তামিম ভালো কোন ব্যাট কিনে খেলতে পারে। অল্প বয়সেই বাবাকে হারানো নাফিস, সবসময় খেয়াল রেখেছেন নিজের ছোটভাইয়ের।

ভাবছেন হঠাৎ করে কেন এই আবেগঘন কথাবার্তা? এর কারণ অবশ্যই রয়েছে। আর তা হলো, তামিম ইকবালের সামনেই, নাফিসের এসব আত্মত্যাগের কথা জানিয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। সোমবার রাতে দুজন মিলে ফেসবুক লাইভে এলে কথাপ্রসঙ্গে আসে নাফিসের এ বিষয়টিও।

মূলত প্রসঙ্গটা এনেছিলেন তামিমই। তিনি মাশরাফিকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমাকে প্রথম দেখার কথা মনে আছে আপনার?’ উত্তরে মাশরাফি বলেন, ‘তোকে প্রথম দেখার ঘটনাটা বলি। আমি আর নাফিস তো বন্ধু। আমরা চট্টগ্রামে টেস্ট খেলতে গিয়েছিলাম। তো তখন তোর বাসায় গিয়ে দেখি তুই হাফপ্যান্ট পরা, তোর কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে গাড়ি নিয়ে খেলতেছিস। আমার-তোর বাচ্চাকাচ্চারা এখন যেমন খেলে। তোরে জিজ্ঞেস করলাম, ভাইয়া ভাল আছো? সেইটা বলতেও তুই লজ্জা পাচ্ছিলি। সেই তামিম আজকে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক।’

এতটুকুতেই উত্তর শেষ না করে তিনি বলতে থাকেন, ‘আমি একটা জিনিস বলি তোর এই পর্যন্ত আসার পেছনে তোর বড় ভাইয়ের (নাফিস ইকবাল) অবদান সবচেয়ে বেশি। তোর ভাই তোদের জন্য যে ত্যাগগুলো করেছে তা অবিশ্বাস্য। তোর বাবা অসাধারণ একজন মানুষ ছিল, মারা গেলেন। তোর মা তোর বোনকে নিয়ে সংসার সামলেছেন। তোর চাচারা ছিল কিন্তু যে যাই বলুক আমি বলবো তোর বড় ভাইয়ের অবদান অনেক বেশি।’

মাশরাফির কথার ফাঁকে তামিম বলেন, ‘হ্যাঁ! ভাইয়ার অবদান বলে শেষ করা যাবে না। আপনি তো আমাকে আগেও বলেছেন, ভাইয়া যে না খেয়ে টাকা জমাতেন।’

খানিক আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন মাশরাফি। বলতে থাকেন, ‘তোর ভাই যা করছে তুই জানিস না। আমরা জানি, আমরা তার সাথে চলছি। ওয়ান ফ্রেঞ্চ বার্গার খাইতোরে ভাই, ওয়ান ফ্রেঞ্চ বার্গার। আমি ওরে একদিন বলছিলাম যে তুই যদি শরীরেই না দিস, তুই বাঁচবি কিভাবে আর খেলবি কিভাবে। এগুলো তো মজার কাহিনী, আফতাব ছিল।’

তবে মাশরাফি পরে বুঝতে পেরেছেন, কেন এভাবে টাকা খরচ না করে জমাতেন নাফিস। তিনি বলেন, ‘পরে আমি বুঝি যে ও তো তোর জন্যই সব করত। তুই যেন একটা ভালো ব্যাট দিয়ে খেলতে পারিস বা ভালো কিছু করতে পারিস। আমি ওকেও বলছি, তোকেও বলছি ওর কিন্তু বাংলাদেশের অন্যতম সেরা টেস্ট খেলোয়াড় হওয়ার সুযোগ ছিল। আমি এখনও বলি, হতে পারেনি। তবে ওর সব তুই পাইছিস। এই আরকি।’

এসএএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।