ক্রাইস্টচার্চে কেন টাইগারদের এ অবস্থা, ব্যাখ্যা করলেন আশরাফুল

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:০০ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০২২

মাউন্ট মুঙ্গানিয়ায় শোনা গিয়েছিল বাঘের গর্জন। ব্যাটিং ও বোলিংয়ে ছিল দক্ষতার ছাপ; কিন্তু ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে এসে সব লেজেগোবরে অবস্থা বাংলাদেশ দলের।

যে সাদমান, নাজমুল শান্ত, মুমিনুল আর লিটন দাসরা মাউন্ট মঙ্গনুইয়ের উইকেট আঁকড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকলেন, তারাই হ্যাগলি ওভালে আউট হলেন অল্প সময় ও সংগ্রহে।

প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে সাড়ে চারশ’র বেশি রান করা দলটি আজ দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে অলআউট হলো মাত্র ১২৬ রানে। যে এবাদত, তাসকিন আর শরিফুল প্রথম টেস্টে বারুদে বোলিং করে কিউইদের পথের কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছিলেন ক্রাইস্টচার্চে ঘাসের উইকেটেও তারা উল্টো খাবি খাচ্ছেন।

টম ল্যাথাম, কনওয়ে আর ব্লান্ডেডরা উল্টো তাদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে ১২৬ ওভারে প্রায় ওভার পিছু ৪ রান করে তুলে ৬ উইকেটে করে ফেললো সোয়া পাঁচশো রান। আর তাতেই দ্বিতীয় দিন শেষে হারের রাস্তায় মুমিনুল হকের দল। এখন ইনিংস পরাজয় এড়ানোই রাজ্যের কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। টম ল্যাথাম ফলোঅন করালে মুমিনুল বাহিনীকে করতে হবে ৩৯৬ রান। আজকের ব্যাটিং দেখে যা প্রায় অসম্ভব ঠেকছে।

এখন প্রশ্ন হলো কেন এই অবস্থা? আগের টেস্টে রাজার মত খেলে এ টেস্টে হঠাৎ নুয়ে পড়া কেন? কেন বোলিং ও ব্যাটিংয়ের সেই ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে ফেলা? ভক্ত ও সমর্থক সবার প্রশ্ন।

জাগো নিউজের পাঠকদের সে কৌতুহলি প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। আজ সোমবার সন্ধ্যায় জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বাংলাদেশের ব্যাকফুটে চলে যাওয়া এবং ব্যাটিং ও বোলিংয়ের এ হতচ্ছিরি অবস্থার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন আশরাফুল।

অনেক কথার ভীড়ে আশরাফুল সোজা সাপটা জানিয়ে দিয়েছেন, আসল পার্থক্যটা হলো উইকেটের। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের আবহাওয়া ও পিচ ছিল বাংলাদেশের অনুকুল। আর ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালের আবহাওয়া ও উইকেট সম্পূর্ণ ভিন্ন।

আশরাফুল বলেন, ‘আসলে ১২৬ ওভার ফিল্ডিং করে এমন কোয়ালিটি বোলিং ফেস করা কঠিন। এমন কোয়ালিটি বোলিং এর বিপক্ষে দাঁড়িয়ে থাকাও সহজ নয়। আর ব্যাক টু ব্যাক অত অসাধারণ খেলার ট্র্যাক রেকর্ড নেই আমাদের। আমরা তো সেভাবে গড়ে উঠিনি। পরপর দুই টেস্টে বিশ্বশক্তির বিপক্ষে ভাল খেলার জন্য যে মেজাজ, দৃঢ় মানসিকতা দরকার, আমাদের এখনো তা হয়নি। আর আমরা মেন্টালি অত স্ট্রং না।’

তারপরও আশরাফুল কাউকে দুষতে চান না। তার কথা, ‘যে সব আউট হয়েছে, কাউকে তেমন কিছু বলার নেই। আমি কাউকে দুষতে চাই না। আমার মনে হয় প্রথম টেস্টের ওয়েদার ও উইকেট সবই আমাদের পক্ষে ছিল। আর এখানে উইকেটে সবুজ ঘাস, বাতাস সবকিছু আমাদের জন্য প্রতিকুল।’

কিন্তু কিউইরাতো এ কন্ডিশনেই অনায়াসে ব্যাট করলেন। রানের নহর বইয়ে দিলেন। বাউন্ডারির ফুলঝুড়ি ছোটালেন। বাংলাদেশ কেন পারলো না? আশরাফুলের ব্যাখ্যা, ‘এটাতো ব্ল্যাক ক্যাপ্সদের জন্য পারফেক্ট পিচ। পারফেক্ট কন্ডিশন। প্রথম টেস্টে স্লো উইকেট ছিল। সেটা ছিল আমাদের মত কন্ডিশন। আর ক্রাইস্টচার্চের এ উইকেট আমাদের মত নয়।’

‘এ উইকেটে কিউইরা অভ্যস্ত। আমরা অনভ্যস্ত। এক কথায় কিউইদের উপযোগী কন্ডিশন। বাউন্স একদম স্টেবল। আর প্রথম টেস্টে ডাবল বাউন্স ছিল। আবহাওয়া গরম ছিল। এখানে একটু বাতাস আছে।’

এছাড়া আশরাফুল মনে করেন ভাগ্যও একটা ফ্যাক্টর। ‘ভাল করতে হলে ভাগ্যও লাগে। প্রথম টেস্টে যদি খেয়াল করে দেখেন, তাহলে দেখবেন, আমাদের প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ জয় ভাল খেলে ৭৮ করেছে। দীর্ঘ সময় উইকেটে থেকে ২১২ বল খেলেছে। তবে শুরুর দিকে তার ব্যাটের বাইরের কোনা ছুঁয়ে স্লি আর গালির মাঝখান দিয়ে কয়েকবার বল বেরিয়ে গেছে। সেগুলো ফিল্ডারের হাতের মধ্যে বা নাগালের ভিতরে থাকলে হয়ত দৃশ্যপট অন্যরকম হতে পারতো। আজ তা হয়নি। শুরুর দিকে আমাদের ব্যাটারদের ব্যাট থেকে ওঠা ক্যাচ সোজা চলে গেছে ফিল্ডারের হাতে। রান করতে গেলে ভাগ্য লাগে।’

এআরবি/আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।