কালীগঞ্জ উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা

অফিস-কমিটি-মাঠ সবই আছে, শুধু নেই খেলা!

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি কালীগঞ্জ, গাজীপুর
প্রকাশিত: ০২:১৮ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ (আরআরএন) পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিশাল খেলার মাঠ। মাঠের এক কোণায় উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার অফিস থাকলেও সেখানে নেই কোনো কার্যক্রম। কাগজে-কলমে ক্রীড়া সংস্থা ও কমিটি থাকলেও বাস্তবে খেলাধুলার আয়োজন না থাকায় স্থানীয় ক্রীড়াঙ্গন হয়ে পড়েছে প্রাণহীন।

ফলে কিশোর-তরুণদের একটি বড় অংশ সময় কাটাচ্ছে স্মার্টফোনে কিংবা জড়িয়ে পড়ছে মাদক ও নানা অপকর্মে। এ অবস্থার দায় নিচ্ছে না কেউ। তবে হতাশার মধ্যেও স্থানীয় পাড়া-মহল্লার ক্রীড়াপ্রেমী তরুণরা নিজেদের দেওয়া চাঁদার টাকায় ব্যাট-বল কিনে সামান্য কিছু খেলাধুলার আয়োজন করছে। উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রম চালু না থাকায় খেলাধুলার আয়োজন নেই, ফলে মাঠটি খেলার অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। ঘাস বড় হয়ে গেছে, তৈরি হচ্ছে খানা-কন্দক, ময়লা-আবর্জনা জমে পুরো মাঠটা হয়ে উঠেছে খেলার অনুপযোগী।

Kaliganj

তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৮ অক্টোবর তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদাধিকার বলে আহ্বায়ক এবং উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়; কিন্তু গত এক বছরেও কমিটির কোনো সভা হয়নি। দেওয়া হয়নি কোনো খেলার সামগ্রী কিংবা হয়নি কোন টুর্নামেন্টের আয়োজন। ফলে কমিটি ও সংস্থা কার্যত অকার্যকর হয়ে রয়েছে।

স্থানীয় কয়েকজন তরুণ ফুটবলার ও ক্রিকেটার জানান, খেলাধুলার প্রতি তাদের প্রবল ভালোবাসা থাকলেও মাঠে নিয়মিত কোনো আয়োজন না থাকায় তারা হতাশ। এক তরুণ বলেন, ‘আমরা নিজেরা চাঁদা তুলে বল-ব্যাট কিনি, মাঝে মাঝে খেলি। এতে অন্তত খেলার চর্চাটা বেঁচে থাকে। কিন্তু ক্রীড়া সংস্থা যদি একটু সহায়তা করতো, তাহলে নতুন প্রজন্ম আরও আগ্রহী হতো।’

Kaliganj

স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমিদের দাবি, কালীগঞ্জের প্রতিটি খেলার মাঠের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। খেলাধুলার মাধ্যমে তরুণদের সুস্থ বিনোদনের সুযোগ দিতে হবে। অন্যথায় খেলাধুলার ঐতিহ্য হারানোর পাশাপাশি সমাজে মাদক ও অসামাজিক কার্যকলাপ আরও বেড়ে যাবে।

ক্রিকেটপ্রেমী শাকিল হোসেন বলেন, ‘আমাদের কালীগঞ্জে মাঠ আছে, খেলোয়াড়ও আছে। কিন্তু উদ্যোগ নেই। তাই অনেক তরুণ খেলাধুলা থেকে দূরে গিয়ে স্মার্টফোন ও মাদকে আসক্ত হচ্ছে। এতে করে জাতির ভবিষ্যৎ বিপথে যাচ্ছে।’

সাবেক ফুটবলার মামুন আকন্দ বলেন, ‘আমার বড় চাচা শারফুদ্দিন পাকিস্তান আমলে জাতীয় দলে খেলেছেন। সে সময় কালীগঞ্জে ফুটবলই ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। অথচ এখন ফুটবলের কোনো লিগই হয় না। গাজীপুরের অন্য উপজেলাগুলোতে নিয়মিত লিগ হয়, কিন্তু আমাদের কালীগঞ্জে নেই। ফলে আজ দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিভাগের মতো খেলোয়াড়ও পাওয়া যাচ্ছে না। এ দায় পুরোপুরি ক্রীড়া সংস্থার।”

Kaliganj

কালীগঞ্জ উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ‘যখন আমি দায়িত্বে ছিলাম, তখন উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছি। এতে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলায় মনোযোগী হতো। তরুণদের খারাপ অভ্যাস থেকে দূরে রাখতে ক্রীড়া সংস্থা বা সরকারের উদ্যোগে নিয়মিত খেলার আয়োজনের কোনো বিকল্প নেই।’

কালীগঞ্জ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সচিব মো. ইসমাইল ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্তমানে কালীগঞ্জ পাইলট স্কুল মাঠটি খেলাধুলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই মাঠটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং ক্রীড়া সংস্থার ব্যবস্থাপনায় শিগগিরই এখানে বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করা হবে।’ তিনি আরও জানান, ‘আগামী মাস থেকে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে খেলাধুলার কার্যক্রম শুরু হবে। পরে ধাপে ধাপে কেন্দ্রীয় এ মাঠে বৃহত্তর আয়োজন করা হবে।’

নবনিযুক্ত কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও ক্রীড়া সংস্থার আহ্বায়ক এটিএম কামরুল ইসলাম জানান, দুই সপ্তাহ আগে তিনি এ উপজেলায় যোগদান করেছেন। ইতোমধ্যেই ক্রীড়া সংস্থার অফিস ও খেলার মাঠ পরিদর্শন করেছেন এবং শিক্ষা অফিসারদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি আশাবাদী, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে উপজেলাজুড়ে খেলাধুলার কার্যক্রম চালু করা হবে। এতে করে উঠতি বয়সের তরুণরা খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকবে এবং সঠিক পথে এগিয়ে যাবে।’

আব্দুর রহমান আরমান/আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।