‘ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়ানোই আমাদের কাছে বেশি মূল্যবান’

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৮:২২ পিএম, ০৬ নভেম্বর ২০২৫

শনিবার ঢাকায় শুরু হচ্ছে এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপ। এশিয়ান তীরন্দাজদের লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় ও মর্যাদার এই মঞ্চ বসবে দুই ভেন্যুতে। ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হয়ে ১৪ নভেম্বর শেষ হবে আর্মি স্টেডিয়ামে। ৩০ দেশের আরচার, কোচ ও কর্মকর্তা মিলিয়ে পৌনে তিনশজনের এই আয়োজন ঘিরে উৎসবমুখর হয়ে উঠেবে দেশের প্রধান ক্রীড়াভেন্যু জাতীয় স্টেডিয়াম।

এই প্রতিযোগিতায় সবার নজর থাকছে ফিলিস্তিনের আরচারদের দিকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটির ক্রীড়াবিদদের ঢাকায় আনতে বাংলাদেশ আরচারি ফেডারেশনকে পেতে হয়েছে অনেক বেগ। তিন আরচার ও এক কোচসহ কংগ্রেসের ডেলিগেটের পেছনে বিপুল খরচ করতে হয়েছে আয়োজকদের।

বৃহস্পতিবার সকালে তিনটি দেশ অনুশীলন করেছে পল্টনের আউটার স্টেডিয়ামে। তার মধ্যে ছিল ফিলিস্তিন দল। গণমাধ্যমের বেশি আকর্ষণ ছিল ফিলিস্তিনের আরচারেদের দিকে। বিশেষ করে রাশা ইয়াহিয়া আহমেদ।

এই নারী এই আরচার চোখে রোদচশমা আর মাথায় হ্যাট পরে অনুশীলন করছিলেন। তার চেহারা ছিল কালো হিজাবে ঢাকা। আর পেছনে রাখা তীরের ব্যাগে লাগানো ছিল ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকা। তার অনুশীলনে যেন অন্য রকম আভা ছড়াচ্ছিল পল্টন ময়দানে। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে কোনো আন্তর্জাতিক আরচারি প্রতিযোগিতায় খেলতে এসেছেন ফিলিস্তিনের কেউ।

রাশার জানা আছে, তাদের দেশের ওপর বাংলাদেশের জনগণের সমর্থনের কথা। প্রথমবার বাংলাদেশে এসে ভীষণ মুগ্ধ তিনি, ‘এই প্রথম বাংলাদেশে এসেছি। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে এখানকার সবাই ভীষণ আন্তরিকতা নিয়ে আমাদের স্বাগত জানিয়েছে। এমনকি, বিমানবন্দর থেকে হোটেলে আসা পর্যন্ত সবাই ছিল ভীষণ আন্তরিক। সবাই খুশি এবং সবাই আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে, সহযোগিতা করছে।’

গাজায় জন্ম হলেও রাশা পড়াশোনা করেছেন ওমানে। মাসকটের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তোর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছে। স্ট্র্যাটেজিক অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন আরব আমিরাতে একটি প্রতিষ্ঠানে। মাত্র বছর তিনেক আগে আরচারিতে হাতেখড়ি রাশার। নিজের ক্যারিয়ার নিয়েও ভীষণ উচ্ছ্বসিত, ‘তিন বছর আগে থেকে আমি আরচারি শুরু করেছি। এখানে আসার আগে আমি অনেক আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশ নিয়েছি। কোরিয়া, কাতারসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি, যেগুলো ছিল খুবই উচুঁ পর্যায়ের আয়োজন।’

archary

ঢাকায় বাংলাদেশ আরচ্যারি ফেডারেশনের আতিথেয়তায় মুগ্ধ রাশা বলেন, ‘আমি তো এখানে কোরিয়ার থেকে ভিন্ন কিছু অনুভব করছি না। সব একই মানের। আমি এ প্রতিযোগিতায় রিকার্ভ এককে অংশ নেবো।’

ঢাকায় পদক জয়ের লক্ষ্যেই মাঠে নামবে ফিলিস্তিন। সবার হয়ে রাশা সেটাই বললেন, ‘এখানে আমরা একটা দল হয়ে এসেছি। আমাদের এখানে আসা কেবল প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্যই নয়, ভালো পারফর্ম করে সেরাদের পেছনে ফেলার লক্ষ্যও আছে।’

দেশের বাইরে অবস্থান করে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য মন কাঁদে সব সময় রাশার, ‘গাজা আমার শহর। একজন ফিলিস্তিনি হিসেবে সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি ভালো নয়, তারপরও আমরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি, পতাকা উঁচিয়ে ধরি, তখন আমরা ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করি। এজন্য আমাদেরকে সবাই সাধুবাদ জানায়। ফিলিস্তিন ফেডারেশন কঠোর পরিশ্রম করছে সব আরচারকে সহযোগিতা করার জন্য। তারা ফিলিস্তিনে বাস করছে বা বাইরের দেশে যারা আছে, তাদের একত্রিত করতে সমর্থ হয়েছে। আমি ফিলিস্তিনে বাস করি না, ফিলিস্তিনের বাইরে থাকি। তো, সেখানে আমার প্রস্তুতি নেওয়ার কিছু সুযোগ আছে। নিজেকে প্রস্তুত করতে পারি টুর্নামেন্টগুলোর জন্য।’

মাঠে ও মাঠের বাইরে ফিলিস্তিনের জনগণের মতোই লড়াই করেন রাশা। ‘একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে আমরা জানি, ফিলিস্তিনের যত খেলা আছে, যত অ্যাথলেট আছেন, দেশের বাইরে যে অ্যাথলেটরা ফিলিস্তিনকে প্রতিনিধিত্ব করেন। এটা আসলে এক ধরনের আবেগ। আপনি নিজের দেশে প্রস্তুতি নিতে পারছে না, কিন্তু দেশের হয়ে খেলছেন। এই আবেগ অনেক বড় বিষয়। আমাদের জন্য এটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এবং এটা আমার জন্য আসলেই খুই আবেগের মহূর্ত’- অনুশীলনের পর বলছিলেন ফিলিস্তিনের এই নারী আরচার।

যখন দেশের হয়ে খেলতে নামেন তখন নিজের অন্যরকম অনুভূতির কথাও বললেন রাশা, ‘আমি এই ইউনিফর্মটা যখন গায়ে দেই, যখন তীর-ধনুক নিয়ে এই পতাকাটা বহন করি দেশের বাইরে- এটার অর্থ আমার কাছে অনেক কিছু। এটা সবসময় আমার সাথে থাকে। একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে আমি খেলাটা উপভোগ করি, কিন্তু ফিলিস্তিনকে প্রতিনিধিত্ব করার অনুভূতি কোনোভাবে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। কি অর্জন করলাম সেটা বড় কথা নয়, ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়ানোই আমাদের কাছে বেশি মূল্যবান।’

আরআই/আইএইচএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।